কনভেনশন সেন্টারের হলরুমে সাজানো হয়েছে মঞ্চ। মঞ্চের সামনের চেয়ারে একে একে বসে আছেন বরেরা। চলছে বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা। কনভেনশন সেন্টারের এক পাশে অতিথিদের আপ্যায়ন চলছে। কে বরপক্ষ, কে কনেপক্ষ, দেখে বোঝা না গেলেও উভয় পক্ষই হাসিখুশি।

আজ শনিবার রংপুরের কামাল কাছনার রূপকথা থিম পার্কে এমন পরিবেশে এক মঞ্চে ১২টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। যৌতুকের মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে যৌতুকবিহীন এসব বিয়ের আয়োজন করে শামসুল হক ফাউন্ডেশন।

আয়োজকেরা জানান, বিয়েতে কিছু শর্ত প্রযোজ্য ছিল। কোনো ধরনের যৌতুক নেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে অতিরিক্ত মোহরানা নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি ধার্য মোহরানা নগদে পরিশোধ করতে হবে।

শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের প্রচলিত কয়েকটি কুপ্রথার একটি যৌতুক। একজন বাবা-মা তাঁর মেয়ে বড় করে যখন বয়ে দেবেন, তখন যৌতুকপ্রথার কারণে সমস্যায় পড়েন। এ ছাড়া মোহরানা বেশি ধরা হয়। “যৌতুককে ঘৃণা করি, সহজলভ্যে মোহরানা আদায় করি” স্লোগানকে আমরা আন্দোলন হিসেবে নিয়েছি।’

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, শামসুল হক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এই তৃতীয় যৌতুকবিহীন গণবিয়ের আয়োজন। এর আগে চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হয়। আয়োজকেরা জানান, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জের ২৪ বর-কনের আজ রংপুরে বিবাহ সম্পন্ন হয়। এই বিয়েতে বর বা কনেকে এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খরচ বহন করেছে ফাউন্ডেশন। লাগেনি বিয়ের রেজিস্ট্রি খরচ।

মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, যৌতুকবিহীন ১২টি বিয়ে উপলক্ষে দেড় হাজার অতিথির জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বিয়ের পর কক্সবাজারে ফ্রি হানিমুন প্যাকেজ পাবেন দম্পতিরা।

যৌতুকবিহীন মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় খুশি রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেদগাড়ী গ্রামের ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে মনিরা আখতারের (১৮) একই এলাকার তানজীর ইসলামের সঙ্গে যৌতুকবিহীন মঞ্চে বিয়ে সম্পন্ন হয়। অথচ এর আগে মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল। ৪-৫ লাখ টাকা চেয়েছিল। কিন্তু তাঁর যৌতুক দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার রিয়াজ সরকার বলেন, দিনাজপুর সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করেন। তিনি বিনা খরচে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিবন্ধন করেছিলেন। বিয়ের আয়োজনে অতিথি আপ্যায়ন ও সংসার শুরু করার উপহারসামগ্রীও দেওয়া হয়েছে।

রংপুর সার্কিট হাউসের সামনে বধুয়া বিউটি পারলারের স্বত্বাধিকারী জাহেদা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় যৌতুকবিহীন বিয়ের মঞ্চের সামনে। তিনি বলেন, এ রকম যৌতুকবিহীন বিয়ের অনুষ্ঠান রংপুরে প্রথম। এই আয়োজন যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে বার্তা দেবে ও সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হত্যা মামলায় আবারও ৩ দিনের রিমান্ডে পলক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর ধানমন্ডি থানার হত্যা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এছাড়াও একই মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে। তারা হলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির সূর্য সেন হলের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম।

বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের প্রত্যেকের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। 

মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট ধানমন্ডি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী রিয়াজ। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা শাফিয়া বেগম।

গত ১৪ আগস্ট খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা হতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে অনেকগুলো হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দফায় দফায় রিমান্ড ভোগ করেন তিনি।

এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামকে রাজধানীর আদাবর এবং নাঈমকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আটক করে পুলিশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ