নোবিপ্রবিতে ২ শিক্ষার্থীর অভিযোগে শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস
Published: 8th, February 2025 GMT
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর করা আট অভিযোগে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিপা আক্তার।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পাঠানো এক নোটিস থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নোবিপ্রবির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদ ও নিপা আক্তার বিশ্ববিদ্যাালয় প্রশাসন বরাবর বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এসব কমিটি আনা অভিযোগগুলোর সত্যতা খুঁজে পায়।
অভিযোগগুলো সরকারী কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ধারা ৪৭ (৮) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এজন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী চাকরি থেকে অপসারণ/বরখাস্ত করা হবে না, তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। একইসঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনে যদি কোন বক্তব্য থাকে, তাও নোটিসের জবাবে লিখিত আকারে উপস্থাপনের বিষয়ে বলা হলো।
নোটিশে অভিযোগের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক বাদশা মিয়ার কাছে ২০২০ সালে ১৯ অক্টোবর ফয়েজ আহমেদের বড়ভাই রাজু আহমেদ কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন অগ্রায়ণের জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি তা অগ্রায়ণ না করে দায়িত্ব অবহেলা করেছিলেন। এছাড়াও বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদকে শিবির আখ্যায়িত করে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক বাদশা মিয়ার কাছে ফয়েজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যগণ ১১ বার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে একাধিকবার আসলেও তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে অসদাচরণ করেন। অভিযুক্ত বাদশা মিয়া ফয়েজ আহমেদের আবেদন অগ্রায়ণ না করায় তার শিক্ষা জীবনের মূল্যবান চারটি বছর নষ্ট করার ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত থেকে অসদাচরণ করেছেন।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, বাদশা মিয়ার কাছে ফয়েজ আহমেদের পরিবারের সদস্যরা ও ফয়েজ আহমেদ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদনপত্র অগ্রায়ণের জন্য গেলে তিনি তাদেরকে মানসিকভাবে হেনস্থা করে দায়িত্ব অবহেলা এবং অসদাচরণ করেছেন। ফয়েজ আহমেদের একটি আবেদনপত্র অগ্রায়ণ করতে ২ বছর সময় নিয়ে দায়িত্বে অবহেলা এবং অসদাচারণ করেছেন।
বিভাগের শিক্ষার্থী নিপা আক্তারকে নিকাব পরিধান করে ধর্মীয় বিধান পালনের ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার করে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষার্থী নিপা আক্তারকে ব্যক্তিগতভাবে চেনার পরেও অযথাভাবে শ্রেণিকক্ষে বারবার পরিচয় জানতে চেয়ে অসদাচরণ করেছেন।
এর আগে, অভিযুক্ত শিক্ষক বাদশা মিয়াকে রিজেন্ট বোর্ডের ৬৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদের শিক্ষাজীবন নষ্ট করার অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে ২ বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সংস্থার তদন্তেও উত্তর মিলল না রহস্যের
পুলিশের তিনটি সংস্থার তদন্তেও চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব মেলেনি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে জটিলতায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।
তবে তিন সংস্থার কেউই তার মরদেহে একাধিক আঘাত ও ক্ষতের কারণ জানাতে পারেনি। নগরী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে নেভাল একাডেমি পয়েন্ট এলাকায় তাসফিয়া যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গিয়েছিল, সেই চালকের খোঁজও বের করতে পারেনি।
চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তাসফিয়া। ২০১৮ সালের ২ মে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির কাছে কর্ণফুলী নদীর তীররক্ষা পাথরের ওপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শরীরে ১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। দুই চোখ মারাত্মকভাবে থেঁতলানো। ডান চোখের ভ্রু ক্ষতবিক্ষত। মৃত্যুর আগে নাক দিয়ে বের হয়েছে ফেনা।
মূলত, এই আঘাতের চিহ্ন থেকেই তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়। সেই কারণ বের করতে না পারলেও ডিবি-পিবিআই দুই সংস্থার প্রতিবেদনেই বলা হয়, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে ঘটনার দিন বাসায় না গিয়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনা এলাকায় যায় তাসফিয়া। পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, অধিকতর তদন্তে তাসফিয়াকে হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য, ডিজিটাল তথ্য এবং ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাসফিয়া পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদনে সেই তথ্যই দেওয়া হয়েছে।
তবে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম সমকালকে বলেন, তিন সংস্থার কেউই নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি। সবাই পানিতে ডুবে মারা গেছে বলছে। কিন্তু শরীরে নির্যাতনের কোনো ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না। এখানেই মূল রহস্য। আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সিআইডির প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
২০১৮ সালে ঘটনার এক মাস আগে তাসফিয়ার সঙ্গে আদনান মির্জা নামে এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানার পর মা-বাবা সম্পর্ক না রাখতে মেয়েকে চাপ দেন। তবে ১ মে সম্পর্কের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে আদনানের সঙ্গে বের হয় তাসফিয়া। এক পর্যায়ে এক বন্ধুকে কল করে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম বিষয়টি জানতে পারেন। বাবা-মা খোঁজ করছে জানতে পেরে, আদনান নগরীর জিইসি মোড় থেকে তাসফিয়াকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয়। আরেকটি অটোরিকশায় সে বাসায় চলে যায়।
তবে তাসফিয়া বাসায় না ফিরে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমি এলাকায় চলে যায়। ওই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সেখানে ঘুরতে যাওয়া মিনহাজ উদ্দিন খান আন্না, আশিকুর ইসলাম ও কুদরত ই ইলাহী নদীর পারে দেয়ালের ওপর বিষণ্ন মনে তাসফিয়াকে বসে থাকতে দেখেন। এর পর কিছুক্ষণ পর শোরগোল শুনে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারেন, ওই তরুণী নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে অন্যদের সঙ্গে প্রাইভেটকার ও মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরদিন ওই এলাকা থেকে তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাসফিয়াকে নির্যাতন বা হত্যার কোনো সম্ভাবনা তদন্তে মেলেনি। ধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়নি। মৃতদেহে বাহ্যিক যে আঘাত পাওয়া গেছে, তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয় বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে বাসায় না ফিরে নেভাল একাডেমি এলাকায় নদীতে ঝাঁপ দেয়। শ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।