বয়স দুই বছর হলো উনাইসার। এখনো মুখ ফুটে বলতে পারে না কিছু। তাতে কী! কথা থেমে নেই। বস্না-বস্না, লিল-লিল, চিং-চিং এরকম নিজস্ব কিছু ভাষায় সারাক্ষণ পটপট করেই চলেছে। সাথে এটা চাই, ওটা চাই।
আকার, ইঙ্গিতে আরো কী কী যে চায় ও-ই জানে। একটু আগেই দাদার কাছে কিছু একটার বায়না করে বসলো। দাদার মুখের দিকে হাত দেখিয়ে বস্না-বস্না বলছে আর কাঁদছে। দাদা অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও বুঝতে পারেনি উনাইসা কী চাইছে। শেষে ছেলেকে ডেকে বলনে, ‘দেখতো বাবা তোর মেয়ে কী চাইছে?’
ছেলে বলে, ‘বুঝতে পারছো না বাবা! ও চাইছে তোমার মাথায় নীল টুপিটা।’
সাথে সাথে টুপিটা খুলে উনাইসার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন দাদা। দেখে উনাইসা মাথা নাড়ে, টুপি চাই না ওর। কান্না চলছে। আগের মতোই দাদার মুখের দিকে হাত উঠিয়ে কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করছে। সেই কিছুটা কী বুঝতে পারছে না দাদা। ভারি মুশকিলে পড়ে গেলেন তিনি। কী করবে ভাবতে ভাবতে উনাইসার মাকে ডেকে বললেন, ‘দেখো তো বৌমা উনাইসা কী চাইছে?’
উনাইসার মা বলে, ‘আপনি পান খাচ্ছেন দেখে উনাইসাও বোধহয় পান খেতে চাইছে বাবা।’
‘হতে পারে হতে পারে!’ এই বলে দাদা একটুখানি চাবানো পান মুখ থেকে বের করে উনাইসার সামনে ধরে। বুঝতে চেষ্টা করে আসলেই ও পান খেতে চাইছে কি না। কিন্তু না! পান দেখে উল্টো তিড়িং করে নেচে উঠলো। সাথে চিল্লাপাল্লা। পান চাই না ওর। ফের হাত দেখায় দাদার মুখের দিকে।
‘এ দেখি মহা মুশকিলে পড়ে গেলাম! উনাইসার দাদি কোথায়, কি গো কোথায় তুমি? এইদিকে আসো তো দেখি।’ রাগে কটমট হয়ে ডাকে উনাইসার দাদা।
তড়িঘড়ি এসে হাজির উনাইসার দাদি, ‘কী, হয়েছে কী শুনি?’
‘দেখো তোমার নাতনি কী বায়না করছে বুঝতে পারো কি না? ওর বাবাও চেষ্টা করলো, মাও চেষ্টা করে ফেইল।’
তখনও দাদার মুখের দিকে আঙুল তাক করে কাঁদছে উনাইসা। দেখে উনাইসার দাদি হাসে। একেবারে হাহা-হিহি করে হাসে।
দাদা বলেন, ‘আমার নাতনি সেই কখন থেকে কান্না করছে আর তুমি হাসছো!’
‘হাসবো না আবার! হাসবার মতোই বায়না করে বসে আছে তোমার নাতনি।’
‘সে কী! কী বায়না করছে শুনি!’
‘ও তোমার গোঁফ চাইছে। দেখছো না কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তোমার গোঁফের দিকে তাকিয়ে আছে।’
‘তাই বলো! এতোক্ষণ ধরে এই সহজ ব্যাপারটা আমরা কেউ বুঝতে পারছিলাম না।’ এই বলে উনাইসার দাদা গোঁফের ওপর তা দেয়। গোঁফ দেখিয়ে উনাইসাকে ইশারায় কাছে ডাকে। উনাইসা এবার পর পর তিনটা লাফ দিয়ে উঠে। না না না! গোঁফও চাই না ওর। ওদিকে গোঁফের ওপর আঙুল তাক করে আছে ঠিকই। উনাইসার এমন হুলুস্থুল কাণ্ড দেখে মহাচিন্তায় পড়ে গেলো বাড়ির সবাই। মেয়েকে তো কিছুতেই বশে আনা যাচ্ছে না। ও কী চাইছে তাও বুঝতে পারছে না কেউ। এখন উপায়! ভেবে ভেবে ক্লান্ত সবাই। এদিকে কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে উনাইসা ঘুমিয়ে পড়ে।
যাক! এ যাত্রায় সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ‘কিন্তু ঘুম থেকে উঠে ফের যদি একই বায়না করে তখন কী হবে?’ উনাইসার দাদা বললেন।
উনাইসার বাবা বলে, ‘তখন একটা কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা, ভাগ্যিস ও তোমার গোঁফ চেয়ে বসেনি, যদি তাই চাইতো তাহলে আর রক্ষে ছিলো না?’
‘তা একদম ঠিক বলেছিস, যতোক্ষণ না এই গোঁফ ও হাতে পাচ্ছে টানতেই থাকতো টানতেই থাকতো হো হো হো।’
দাদার অট্টহাসিতে ভেঙে গেলো উনাইসার ঘুম। ব্যাস! দাদাকে দেখেই আঙুল উঠে গেলো দাদার মুখের দিকে। আর ব্লা ব্লা বলে কাঁদতেও শুরু করে দিলো। দাদি ওরে কোলে নিয়ে বললেন, ‘কাঁদে না। তুমি তো লক্ষ্মী মেয়ে একটা। এরকম লক্ষ্মী মেয়েরা কাঁদে বুঝি! আমাকে বলো কি চাই তোমার! আমি এক্ষুণি এনে দেবো।’
উনাইসা দাদির কথা কিছু বুঝলো কি বুঝলো না বোঝা গেলো না। এবার সে দাদার গোঁফের দিকে তাক করা আঙুলখানা নিজের ঠোঁটের ওপর রাখলো। দেখে দাদি হাসতে হাসতে বললো, ‘তাইতো বলি বাচ্চাটা আমাদের এতো কাঁদছে কেন! তুমিও বুঝলে না উনাইসার দাদা! উনাইসার চাই পাপ্পি। দেখছো না সেই কখন থেকে ও তোমার ঠোঁটের দিকে আঙুল তুলে আছে। নাও, নাতনিকে কাছে ডেকে নিয়ে আদর করে দাও। এত্তগুলা পাপ্পি দিয়ে দাও।’
দাদা নিজের ঠোঁটের ওপর আঙুল ধরে ইশারায় উনাইসাকে ডাকে। উনাইসা এবার দৌড়ে দাদার কাছে আসে। নাতনিকে জড়িয়ে ধরে পাপ্পি দেবে এমন সময় উনাইসা দেখে ওর মা ঠোঁটে লিপজেল মাখছে। দেখে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসে। ছোবল দিয়ে মায়ের হাত থেকে লিপজেলটা নিয়ে এবার সে হাসে হিহি হিহি।
এতোক্ষণে বুঝতে পারলো উনাইসার দাদা। শীতে ঠোঁটের সুরক্ষায় তিনি নিজেও লিপজেল মাখেন। তখন লিপজেল মাখছেন সেটা উনাইসা দেখেছিলো। তারপর থেকেই না ওর বায়না শুরু, লিপজেলের বায়না। আর তারা কতো কিই না ভেবে আসছে টুপি, পান, গোঁফ, পাপ্পি.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮৫ কোটি টাকা দেনার ভারে ডুবছে বিসিসি, বাড়ছে ক্ষোভ
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) ৩৮৫ কোটি টাকার দেনার ভারে ডুবতে বসেছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ফলে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একইভাবে কাজ শেষ করেও পাওনা না পাওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। তখন প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। তারপর পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত সিটি মেয়র নির্বাচিত হন।
গত ৫ আগস্ট অভ্যুন্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে বরখাস্ত করে এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণের পর থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকবার ঝামেলা হয়। এমনকি, সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু কোনোভাবে পুরো বিল পরিশোধ করেনি কোনো মেয়রই।
বিগত ৫ বছরে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। একই পাথে হাটেন সাদিক আব্দুল্লাহর ছোট চাচা ও পরবর্তী মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। যে কারণে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ কোটি টাকা।
একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন মেয়র। ঘুষ না পাওয়ায় অনেক বিল আটকে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতও তার সময়ে অনেক ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। ফলে ঠিকাদারদের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার মতো। আর বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাওনা ৩০০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য ঠিকাদারেরা প্রতিদিনই ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু ফান্ড না থাকায় বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
শুধু বিদ্যুৎ বিল আর ঠিকাদারদের পাওনার টাকা নয়, ফান্ড সংকটের কারণে বিসিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশনের বকেয়া ২০ কোটি টাকাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়ের চারটি উৎস রয়েছে। তাদের মধ্যে রাজস্ব আয়, রাজস্ব খাত, সরকারি অনুদান এবং বিদেশি সহায়তা। তবে বরিশালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজস্ব বাড়ানো যাচ্ছে না। একইভাবে বিগত ৫ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে চলছিল সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করার কাজ। এ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিছুটা সফল হলেও ঠিকাদার, বিদ্যুতসহ অন্যান্য বকেয়া বিল পরিশোধে সফলতা পাননি।
সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের টিকিটে নতুন মেয়র হন খোকন সেরনিয়াবাত। অসুস্থ হওয়ায় তিনি সিটি কর্পোরেশন চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে মেয়রের সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনে অবৈধ হস্তক্ষেপ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, লুনা আব্দুল্লাহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে গত এক বছরে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। আভ্যন্তরীণ আয় বাড়লেও সরকারি কম বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় বিদেশি অনুদান না পাওয়ায় বেহাল দশা বিসিসির।
কর্মচারীদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসককে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দেনার পরিমাণ এত বেশি যে তা আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে কোনোভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ঠিকাদাররা প্রতিনিয়ত টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ আয় থেকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর যে টাকা থাকে, তা থেকে বিদ্যুৎ বিলসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।
ঢাকা/বকুল