প্রথম আলো

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে উচ্ছেদ হওয়া হকারেরা কোথায় যাবেন

ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক। সার্কিট হাউসসংলগ্ন এই পার্কে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত হাজারো মানুষের কলকাকলিতে মুখর থাকে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ হাঁটাহাঁটি ও আড্ডার উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেন এই উদ্যান। শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।

উদ্যানের এক পাশে কাচারিঘাটে দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে রাত অবধি সাহিত্যজগতের মানুষেরা আড্ডায় মুখর থাকেন। আবার একঘেয়ে জীবনের অলস সময় কাটাতে অনেকে চলে আসেন এখানে।

উন্মুক্ত এই পার্কে দর্শনার্থী ও বিনোদনপ্রিয় এসব মানুষের বিনোদনের বাড়তি জোগান দিতে ভ্রাম্যমাণ হকার ছাড়াও এখানে চায়ের টং, বাদাম, ফুচকা, চটপটিসহ হালকা খাবারের জন্য ভাসমান ছোট ছোট দোকান গড়ে উঠেছে। এর সংখ্যা প্রায় ২০০।

অনেকে আছেন, যাঁরা ২০–২২ বছর ধরে এখানে এই ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কোনো কোনো দোকানে চার–পাঁচজন কর্মচারী রয়েছেন। প্রত্যেকের পরিবারসহ সব মিলিয়ে হাজারের অধিক মানুষের মুখের খাদ্যের সংস্থান হয় এখান থেকে। এসব ভ্রাম্যমাণ হকার ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার এখানে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যে খুব সহজ, তা নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই তাঁদের টিকে থাকতে হয়। পুলিশি চাঁদা তো আছেই, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারি দলের নানা পর্যায়ের লোকদের নিয়মিত টাকা দিয়ে চলতে হতো।

জিনিসপত্রের চড়া মূল্যের কারণে এমনিতেই মধ্যবিত্তের জীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা, সেখানে উচ্ছেদ হওয়া কর্মহীন এসব মানুষের কী অবস্থা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিছুটা নিয়মনীতির মাধ্যমে মানবিক কারণে হলেও তাঁদের কর্ম করে খাওয়ার সুযোগ দিলে রাষ্ট্রের কী আর এমন ক্ষতি?

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারবেন। কিন্তু দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের বিপদের শেষ নেই। গত ১১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সিটি করপোরেশন মিলে এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও হকারকে উচ্ছেদ করে। এই খুদে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, উচ্ছেদের সময় তাঁদের মারধর করাসহ আসবাব ভাঙচুর করা হয়। শুধু এখানেই থেমে ছিল না। তাঁদের রিকশাভ্যান, চায়ের কেতলিসহ অন্যান্য জিনিস জব্দ করে সিটি করপোরেশন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইতিমধ্যে উচ্ছেদ হওয়া হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা তাঁদের আসবাব ফিরিয়ে দেওয়া ও পুনরায় ব্যবসা চালু করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিদিন অনুনয়–বিনয় করতে থাকেন। তাঁদের জীবন-জীবিকার কথা, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন।

কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় অনেকের ঘরে খাবার নেই, কিস্তির টাকা নেই, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সারা না পাওয়ায় পার্কের হকার ও খুদে ব্যবসায়ীরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন, মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। তাঁদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাম ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁদের কর্মসূচিতে যোগ দেয়। তারাও প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে দেনদরবার করে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে যানজট নিরসন ও জয়নুল আবেদিন পার্ক এলাকার সঠিক ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত এক আলোচনা সভার উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। সভায় সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সভার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মফিজুল আলম বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে পার্কের পরিবেশ ও সরকারি সম্পদ রক্ষার কথা বলে হকার উচ্ছেদের ন্যায্যতা তুলে এর পক্ষে মত দেন।

সভায় বড় রাজনৈতিক দলগুলো, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের একাংশ জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের পক্ষে মত দেন। অনেকে গরিব হকারদের জীবন-জীবিকা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যঙ্গও করতেও ভোলেননি।

সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন বাম-প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা হকার উচ্ছেদ না করা, তাঁদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি ভেবে পরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসনের জন্য জন্য বলেন।

কিন্তু জেলা প্রশাসক বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে পরোক্ষভাবে উচ্ছেদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সভা শেষ করে তড়িঘড়ি গাড়িতে ওঠেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক হকার ডিসি ও কর্মকর্তাদের গাড়িবহর ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অনেকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁদের কোনো কথা না শুনে কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়েই চলে যায় বড় কর্তাদের গাড়ি।

জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন পার্কে এই হকার ও ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বছরের পর পর বছর ধরে তাঁদের জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যবসা করে আসছেন, যা দিয়ে হাজারো মানুষের খাওয়া–থাকার সংস্থান হয়। তাঁদের এই কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা এক মানবেতর জীবনে নিক্ষিপ্ত হবেন। বাসাভাড়া, খাবার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, ঋণের কিস্তির টাকার জোগান—সবই এখন অনিশ্চিত অন্ধকারে। ফলে চুরি ছিনতাইসহ নানা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়।

অন্যদিকে অনেকেই ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে সপরিবার পার্কে ঘুরতে আসেন। ফলে এখানে চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, বাদাম, চা, পানীয়ের চাহিদা থাকা স্বাভাবিক। এগুলো বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘ সময় পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও যে বিপাকে পড়বেন, এটাও স্বাভাবিক। মানুষের ঘুরতে আসার যে আনন্দ, সেটিও কিছুটা ফিকে হয়ে আসবে নিঃসন্দেহে।

জিনিসপত্রের চড়া মূল্যের কারণে এমনিতেই মধ্যবিত্তের জীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা, সেখানে উচ্ছেদ হওয়া কর্মহীন এসব মানুষের কী অবস্থা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিছুটা নিয়মনীতির মাধ্যমে মানবিক কারণে হলেও তাঁদের কর্ম করে খাওয়ার সুযোগ দিলে রাষ্ট্রের কী আর এমন ক্ষতি?

আবুবকর সিদ্দিক রুমেল রাজনৈতিক কর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যাত্রী হিসেবে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত তারা
  • মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরলেন অপহৃত ৫ কাঠুরিয়া
  • ময়মনসিংহে উচ্ছেদ হওয়া হকারেরা কোথায় যাবেন
  • টেকনাফে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরলেন অপহৃত ৫ যুবক
  • ময়মনসিংহে মুক্তিপণ না পেয়ে শিশু হত্যার দায়ে যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড
  • রাউজানে গোলাম আকবর ও গিয়াস কাদেরের ‘মহারণ’
  • পাহাড়ে কাঠ কাটতে গিয়ে অপহৃত পাঁচ কাঠুরিয়া
  • রাউজানে গোলাম আকবর গিয়াস কাদেরের ‘মহারণ’
  • ফেনীতে যুবদল নেতাকে অপহরণের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ