বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ফতুল্লা থানা শাখার যুগ্ন-আহবায়ক মামুন হোসাইনকে (৪১) কে গত শুক্রবার দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। এই হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এবং তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ফতুল্লা পূর্ব লালপুর(পাকিস্তানি খাদ) নিবাসী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ফতুল্লা থানা শাখার যুগ্ন-আহবায়ক মামুন হোসাইনকে অত্যান্ত নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

আমরা মনে করি তার এই হত্যাকান্ড সারা দেশকে অস্থির করে তোলার লক্ষ্যে জনরোষে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং নারায়নগঞ্জে ঘাপটি মেরে থাকা তার জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ।

মামুন হোসাইনের হত্যার ঘটনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনী বাহিনী এখনো নীরব ঘাতক হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় সোচ্চার রয়েছে। 

তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আমরা সরকার এবং প্রশাসনের কাছে বলতে চাই যে, আপনারা অতিদ্রুত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মামুনের হত্যাকারীদের খুজে বের করুন, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনুন। 

ফ্যাসিবাদের দোসরদের এই জাতীয় ভয়ংকর কর্মকান্ডের মূল উপরে ফেলার জন্য জুলাই-আগস্ট গনহত্যার বিভিন্ন মামলার চিহ্নিত আসামীদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করুন। আমরা চাই, মামুনের মত আর কোনো তাজা প্রান যেনো ঝরে না যায়, আর কোনো পরিবার যেনো তাদের অবিভাবক অসময়ে না হারায়।

আমরা মামুন হোসাইনের মৃত্যুতে তার শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধুবান্ধব সবার সাথে সহমর্মিতা জানাচ্ছি। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘অলীক’ মামলায় জেরবার ব্যবসায়ী নাজিমের জীবন

আবাসন ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মানিকদী এলাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। তিন বছর আগের এক মামলায় পাল্টে যায় তাঁর জীবন। পরিবার-পরিজন ছেড়ে নাজিম ঘুরতে থাকেন পথে পথে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরও দিন ফেরেনি তাঁর।

২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মতো গত বছরের ১৮ জুলাই নাজিমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিএনপিকে সন্ত্রাসী অর্থদাতা হিসেবে। শুধু তাই নয়, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবেও তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় নাজিম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি রাজনৈতিক এবং হত্যা মামলা হয়েছে।

নাজিমের দাবি, একটি ঘটনার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। পতিত আওয়ামী লীগের এক নেতার রোষানলে তাদের জীবন তছনছ হয়ে গেছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও তাঁর ইন্ধনে একের পর এক মামলা হচ্ছে। ভুয়া মামলা থেকে বাঁচতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ ও ডিবির ওপর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের ছায়া রয়েই গেছে। এ জন্য অভিযোগ দেওয়ার পরও সত্যতা যাচাই না করে বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমরা পাঁচ ভাই।’

সমকালের হাতে আসা এজাহারগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় পুলিশের মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে আসামি হয়েছেন নাজিম উদ্দিন। এর পর ২০২২ সালে ক্যান্টনমেন্ট, বনানী ও শেরেবাংলা নগর থানায় ৫টি, ২০২৩ সালে এসব থানায় আরও ৫ এবং ২০২৪ সালে ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্টন ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে হয়েছে ৯ মামলা। এর মধ্যে গত বছর ৫ আগস্টের পর হয়েছে ৬টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত চারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন নাজিম।

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে মিরপুর থানার মামলায় নাজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নাজিমকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ডিবি সদস্যরা। এর পর সন্তানদের নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন তাঁর স্ত্রী। বর্তমানে তাদের পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তামিম (১৯) হত্যার অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী। এতে ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনকে ৮৪ নম্বর আসামি করা হয়। একই বাদী ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করা হয়েছে নাজিমের ভাইদের।

তামিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলন দেখতে বের হলে তামিম গুলিতে মারা যায়।’ অথচ আব্বাসের মামলায় তামিমকে প্রতিবেশী উল্লেখ করে এক মাস পরে তাঁর মৃত্যু ১৯ আগস্ট মিরপুরে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রাজু আহমদ (২৪) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার সঙ্গে নাজিমকেও আসামি করা হয়। ২৭ আগস্ট রাজুর বাবা কালাম মোল্লা মামলাটি করেন। একই দিন বিকেল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলায় নাজিমকে ৩৪ নম্বর আসামি করা হয়। আধা ঘণ্টা ব্যবধানে একই ব্যক্তি দুটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।

অভ্যুত্থানের আগে সন্ত্রাসী, পরে দোসর

জুলাই বিপ্লবের আগে ১৪ মামলায় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসী এবং অর্থদাতা বলা হয়েছে। এমনকি আন্দোলন চলাকালে ২৬ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট থানার 

মামলাতেও নাজিম, তাঁর ভাই সাইফুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, শামীম ভূঁইয়া ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ক্যান্টনমেন্ট ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চার মামলায় নাজিম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে আন্দোলনে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী নাজিমকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে এ পদে আছেন মিনহাজুল ইসলাম মিজু।

আসামিদের চেনেন না বেশির ভাগ বাদী
একটি মামলার বাদী কালাম মোল্লা সমকালকে বলেন, ‘মাগুরার স্থানীয় বিএনপি নেতা দাউদ ও মোহাম্মদপুরের দোলন মিলে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। আসামিদের কাউকে চিনি না, জানিও না। আমাকে ঢাকায় এনে শুধু কাগজে সই করতে বলেছেন। ছেলে হত্যার জন্য নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে কেন আসামি করব?’

আরেক মামলার বাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী বলেন, ‘মামলায় এত এত আসামি, সবাইকে তো চেনা যাবে না। মামলা করতে গেলে উকিলরা কিছু নাম দেন; ভাই-বন্ধুরাও কয়েকজনকে ঢোকাতে বলেন। এভাবেই হয়তো ভুলে কারও নাম রয়ে গেছে। বড় মামলায় ১০-১৫ নাম ভুল হতেই পারে। বিষয়টি বুঝতে পেরে নিরীহদের নাম বাদ দিতে আইও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের নাম আগে শুনেছি। মামলায় আমি তাঁর নাম দিইনি। কে দিয়েছে তা বলা যাবে না। নির্দোষ হলে তদন্তে তাঁর নাম বাদ যাবে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। মামলা হলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেলেই কেবল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আড়াইহাজারে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে ছাড় নেই : সাদেক 
  • শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ  
  • না’গঞ্জে যুব কাবাডি অনূর্ধ্ব-১৮ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
  • নতুন দুর্বৃত্ত তৈরি হচ্ছে : রফিউর রাব্বি
  • বন্দরে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য প্রতিরোধে মহানগর বিএনপির মিছিল 
  • আবু জাফরের প্রতিবাদ
  • ফতুল্লায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হত্যার হুডি ও মুখে মাস্ক পরা দুজন জড়িত: পুলিশ
  • ফতুল্লায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে গুলি করে হত্যা
  • ‘অলীক’ মামলায় জেরবার ব্যবসায়ী নাজিমের জীবন