ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার দাবি ইবি ছাত্রদলের
Published: 8th, February 2025 GMT
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচারসহ দুই দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদল।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় ছাত্রদলের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা এসব দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড.
তাদের দাবিগুলো হলো- ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক সংগঠিত সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে সাজা নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রকল্প পরিচালক ও ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তাদের বিষয়ে এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে এখনো বিভিন্ন জায়গায় পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা এখনো কমেন্টে জয় বাংলা বলে বেড়ায়। কিন্তু তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুই করছে না। আমরা সেসব দোসরদের বিচার নিশ্চিতের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা চাই প্রশাসন তাদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ ছাত্রদলের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে যারা আছে, তাদের ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতরা এখনো যারা ক্যাম্পাসে আছে তাদের একটা তালিকা প্রদান করো। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে এ বিষয়ে জাতীয়ভাবে বিচারের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা এ দাবি বাস্তবায়নে চলতি মাস সময় নিচ্ছি।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র উপ চ র য ব যবস থ রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
সিরিয়ায় ইসলামবাদী পুনরুত্থানের ইঙ্গিত
এটি স্পষ্ট করে বলা গুরুত্বপূর্ণ– ইসলামবাদ ও ইসলাম এক বস্তু নয়; দুটি আলাদা। ইসলামবাদ এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা শরিয়াকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে চায় এবং ইসলামের নামে রাজনৈতিক শক্তি গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলনে তৎপর থাকে।
গত দশকে আরব বসন্তের দ্বিতীয় তরঙ্গে (২০১৮-১৯) ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয়তার ক্রমাগত হ্রাস স্পষ্ট হয়েছে, যা সুদান, ইরাক, লেবানন এবং কিছুটা কম পরিমাণে আলজেরিয়ায় ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়ে। এটি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ধর্মীয় পরিসরের মধ্যকার পার্থক্য আরও স্পষ্ট করে তোলে। তবে সিরিয়ার অগ্রগতি নতুন মাত্রার সূচনা করে, যা এ অঞ্চলে ইসলামবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুনভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চাহিদা তুলে ধরে।
২০২১ সাল থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে অপমানজনকভাবে বিদায় নিতে তালেবানের সাফল্য; ২০২৩ সালের অক্টোবরে আল-আকসা ফ্লাড অপারেশন এবং গত বছরের শেষে দামেস্কে এইচটিএসের সশস্ত্র প্রবেশ।
এসব ঘটনা ইসলামবাদী তৎপরতার তিনটি মূল বিষয় তুলে ধরে। এক. বিদেশি দখলদারিত্বের অবসান; দুই. পশ্চিমা সমর্থিত ইহুদিবাদী বসতি স্থাপন প্রকল্প প্রতিরোধ; তিন. কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার উৎখাত। তবে তাদের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো– ইসলামবাদীরা এখনও স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদার পাশাপাশি আরব বসন্তের স্তম্ভ অর্থনৈতিক সুবিচার যথাযথভাবে অর্জন করতে পারেনি।
সিরিয়ার নতুন সরকার গভীরভাবে পোক্ত বৈষম্য দূর না করেই বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে দ্রুত একীভূতকরণ। তবুও দীর্ঘস্থায়ী অসম বণ্টন সমস্যা মোকাবিলায় এখানে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। এটি এমন এক জটিলতা, যা বাজার অর্থনীতির কারণে আরও বাড়তে পারে। তদুপরি দখলদারিত্ববিরোধী সংগ্রাম, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে সম্পর্কগুলো এখনও সুস্পষ্ট করা হয়নি।
একাধিক বিষয় ঘিরে জনপরিসরে বিতর্ক চলমান; বিশেষ কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীভূত নয়। কারও কারও মতে, আসাদ সরকারের পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ ঘাঁটির পতন, যা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য ক্ষুণ্ন করবে। কেউ কেউ যুক্তি দেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের মুক্তির পথে অটল থাকাও জরুরি।
যেসব রাষ্ট্র ইসলামবাদকে তাদের পথের দিশারি হিসেবে গ্রহণ করেছে, যেমন বিপ্লবী (ইরান), নির্বাচনী (২০১২-পরবর্তী তুরস্ক), অভ্যুত্থানের মাধ্যমে (সুদান) অথবা ঐতিহ্যবাহীরূপে (সৌদি আরব), তাদের অতীতের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। তবু আজও এ অঞ্চলে ইসলামের শক্তিশালী আবেদন রয়েছে। তা ছাড়া আগামী বছরগুলোতে এ অঞ্চলের আসন্ন বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলন যেভাবে বহুমুখী সংকট মোকাবিলা করবে, তা ধর্মের দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকাকে উৎসাহিত করবে।
আমার দৃষ্টিতে চারটি মূল বিষয় ঘিরে ইসলামবাদ এবং এ অঞ্চলের বাস্তবতার মধ্যে সম্পর্ক গড়াবে। জাতীয় স্বাধীনতা, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ, সব ধরনের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সম্পদ, সুযোগ ও সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টন বিবেচনায় নিয়ে একটি অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের সক্ষমতা।
এগুলোসহ নিকট ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন কিছু ঘটনা আরব যুবকদের ধর্মীয় ভাবধারায় ক্রমবর্ধমান আস্থা তুলে ধরে, যদিও কোনো স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। আল-আকসা প্লাবন, যেমনটি আমি আগে লক্ষ্য করেছি, ৩০ বছরের কম বয়সী আরবদের মধ্যে ধর্মের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা স্পষ্ট করে। আমি বিশ্বাস করি, সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে আরও জোরদার করতে পারে।
এই শাসন ব্যবস্থার আসল সমস্যা হলো জনসাধারণের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত তীব্র ধর্মীয় ভাবধারার উত্থান, যা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এতে অর্থপূর্ণ সংস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিক পথের অভাব রয়েছে।
হেশাম গাফর: ইসলামী চিন্তাভাবনা, আন্দোলন ও সংঘাত নিরসন বিশেষজ্ঞ; মিডল ইস্ট আই থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম