টানা দ্বিতীয়বার বরিশালকে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং ইমরুল কায়েসের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে বরিশালের কাপ্তান ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার শেষে ট্রফি নেওয়ার জন্য মঞ্চে ডেকে নিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় এবং রিশাদ হোসেনকে। তাদের হাতেই বিপিএল ২০২৫ এর শিরোপা তুলে দিলেন অতিথিরা। এই তিন তরুণ ক্রিকেটারের প্রথম বিপিএল শিরোপাটা স্মরণীয় করে রাখতেই নাকি তামিম এই কাজ করেছেন।
শুক্রবারের (৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) আগে বিপিএলে তিনটি করে ফাইনাল হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল শান্ত ও হৃদয়ের। অন্যদিকে রিশাদেরও আছে একটি ফাইনাল হারের অভিজ্ঞতা। হৃদয় আগে টানা তিন আসরে ভিন্ন তিনটি দলের হয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হারার তিক্ত স্বাদ পেয়েছেন। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ২০২২ সালে ফরচুন বরিশাল, ২০২৩ সালে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও গত বছর রানার্স-আপ হওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে খেলেছিলেন।
আরো পড়ুন:
৪ থেকে ৬ জন ক্রিকেটার ধরে রাখার পক্ষে তামিম
তামিমের কাছে গত আসরের শিরোপাটাই বেশি তৃপ্তির
বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট ও ওয়ানডের অধিনায়ক শান্তরও একই অভিজ্ঞতা ছিল। ২০২০ সালে খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে ফাইনালে গিয়েও শিরোপা ছুঁতে পারেননি। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের একই অভিজ্ঞতা হয় ২০২২ ও ২০২৩ সালে। এই দুই মৌসুমে তিনি হৃদয়ের সতীর্থ ছিলেন। অন্যদিকে রিশাদ ছিলেন গেল মৌসুমেরে রানার্স-আপ কুমিল্লায়।
২০২৫ সালে তিনজনই ফাইনাল হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারলেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম বললেন, “আমি দুইবার ট্রফি জিতেছি। হৃদয়ের কথা যদি চিন্তা করেন, সে সম্ভবত দুই-তিনটি ফাইনাল খেলেও ট্রফি জিততে পারেনি। শান্তর ক্ষেত্রেও একই। এই ট্রফি তাদের কাছে আমার তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং রিশাদের ক্ষেত্রেও। তাই আমার মনে হয়েছে, আমি হয়তো ওদের এই সম্মানটা দিতে পারি যে, ট্রফিটা ওরা নিজের হাতে তুলুক।”
এদিকে আর দিন দশেক পরেই শুরু হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ডামাডোল। অথচ টাইগার অধিনায়ক পাননি নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ। এই ব্যাপারে তামিম যোগ করেন, “শান্তর ব্যাপারে বলি, জাতীয় দলের অধিনায়ক, দেশের সেরা ক্রিকেটারদের একজন কিন্তু আমাদের কম্বিনেশনের কারণে বেশি খেলার সুযোগ পায়নি। কিছু দিন আগেও বলেছি, এরপরও খেলার প্রতি, দলের প্রতি তার নিবেদন ছিল দুর্দান্ত। আমি জানি, তার জন্য না খেলাটা অনেক অনেক কঠিন ছিল। তবে ও সেটা দেখায়নি। যা আমাদের কাজ সহজ করেছে।”
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ত ম ম ইকব ল ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
এক বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো
২০২৪ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসি। এই লভ্যাংশের অর্ধেক অর্থাৎ ৮১০ কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৮১০ কোটি টাকা আগামী ২৫ মার্চ বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে।
কোম্পানিটি গত বছরের জন্য সব মিলিয়ে ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাতে শেয়ারপ্রতি ৩০ টাকা করে লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারধারীরা। যার মধ্যে ১৫০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। আর বাকি ১৫০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে ঘোষিত এই লভ্যাংশের খবর শেয়ারধারীদের জানানো হয়। এর আগে গত বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোম্পানিটি ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে কোম্পানিটির এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশের বেশি।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯ সালেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিক্রি করা বিড়ি–সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের বছরে ব্যবসা ছিল ২৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। গত বছর শেষে তা বেড়ে ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবেই কোম্পানিটির বিক্রি বাড়ছে। বিএটিবিসির বিড়ি–সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের বিক্রি ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এরপর গত বছর তা আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
বিক্রি বাড়লেও কোম্পানিটির গত বছরের মুনাফা তার আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গত বছর সব ধরনের খরচ ও সরকারের রাজস্ব প্রদানের পর কোম্পানিটি ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ৩৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ কমেছে।
মুনাফা কমলেও শেয়ারধারীদের ২০২৩ সালের চেয়ে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করছে কোম্পানিটি। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের মধ্যে ৫৪০ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল। গত বছর তা বেড়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। কোম্পানিটি গত বছর যে মুনাফা করেছে, তার প্রায় ৯৩ শতাংশ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে। দেশের শেয়ারবাজারে এটি ৪৭ বছরের পুরোনো কোম্পানি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের কোম্পানিটির শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, এটির শেয়ারের প্রায় ৭৩ শতাংশই রয়েছে বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি ২৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে সরকারের হাতে রয়েছে ৯ শতাংশ, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ, এ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৮ শতাংশ শেয়ার।
শেয়ারধারণের এই তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ঘোষিত লভ্যাংশের মধ্যে বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। সরকার পাবে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৭৩ কোটি টাকা, এ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৯ কোটি টাকা এবং ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১৩১ কোটি টাকা।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটি ব্লু-চিপস কোম্পানি হিসেবে ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত। ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে বাজারে এটির শেয়ারের দাম সেই তুলনায় কম। ২০২০ সালের পর গত বছরের জন্য কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সোয়া ৩ টাকা বা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
গত এক বছরের ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৬৯ টাকা বা সাড়ে ৩২ শতাংশ কমেছে। গত বছরের ৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫১৯ টাকা। গতকাল দিন শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ টাকায়।