আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলাম: তৌহিদ আফ্রিদি
Published: 8th, February 2025 GMT
ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার উপর পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এখন সামাজিক মাধ্যমে খুব একটা সরব নন তিনি। এরই মধ্যে ভক্তদের সুখবর দিলেন এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে তৌহিদ আফ্রিদি জানান, ‘দ্য প্রেসিডেন্টস; ভলেন্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন তিনি। এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে। আফ্রিদির ঠিকানায় চলে এসেছে সেই পুরস্কার। সার্টিফিকেটে দেখা যাচ্ছে, এটি ২০২৪-এর পুরস্কার। তাতে সাক্ষর রয়েছে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।
ফেসবুকে মেডেল ও সার্টিফিকেটের ছবি পোস্ট করে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার। আমি বিশ্বাস করি মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বদাই আমার সাথে আছেন ও তিনিই সবচেয়ে বেশি আমার মঙ্গল চান। তার অশেষ মেহেরবানীতেই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে লাইফটাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলাম।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আপনাদের ভালোবেসে সামান্য কিছু কাজ করেছি বলেই ভোলান্টিয়ার সার্ভিসে এই অ্যাওয়ার্ডটি পেলাম। এরকম একটি গোল্ড মেডেল হয়তো অনেকেরই স্বপ্ন। সত্যি বলতে আমি এই অ্যাওয়ার্ডের লোভে কখনোই কাজ করে যাইনি। আমি আপনাদের জন্য এগিয়ে গেছি আপনাদের ভালোবাসা পাওয়ার লোভে। অথচ আজ দেখুন, আমি না চাইতেই অ্যাওয়ার্ডটি ঠিকই আমার ভাগ্যে চলে আসলো। অথচ আমার যেটা চাওয়া, আপনাদের অনেকের সেই ভালোবাসা থেকেই হয়তো আমি বঞ্চিত! আমি এখনো বিশ্বাস করি, আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনিই হয়তো আমাকে সামনে এগোনোর সঠিক পথ দেখাবেন।’
এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তির পর তৌহিদ আফ্রিদিcj শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তার ভক্তরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আপন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নভোএয়ার বন্ধ হচ্ছে, নাকি বিক্রি
দেশের বেসরকারি মালিকানাধীন উড়োজাহাজ সংস্থা নভোএয়ারের সেবা বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বিপুল লোকসানের ধাক্কা সামলাতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা নভোএয়ার বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে বিদেশি সম্ভাব্য একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নভোএয়ার বিক্রির বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নভোএয়ার ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের উড়োজাহাজসহ অন্যান্য সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্য বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিমান সংস্থাটির উড়োজাহাজগুলো নিরীক্ষা করতে চায়। চলতি মাসেই এই নিরীক্ষার কথা রয়েছে।
সংস্থাটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপুল লোকসানে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার বদলে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে মালিকেরা যেমন বড় ধরনের লোকসান থেকে বাঁচবেন, তেমনি মালিকানা বদলের পর সংস্থাটি ব্যবসায় টিকে থাকবে। শেষ পর্যন্ত বিক্রির প্রক্রিয়া যদি ব্যর্থ হয়, তবে এটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি বিকল্প ভাবনায় রয়েছে তাঁদের। অর্থাৎ নভোএয়ারের ভবিষ্যৎ এখন হয় বিক্রি, নয়তো বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থায় রয়েছে।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিমান পরিবহনসেবা এখনো চলমান রয়েছে। তবে আমরা আমাদের উড়োজাহাজ ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে বিক্রির মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তরের।’
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, বিমান পরিবহনে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে দেশীয় মালিকানার বেসরকারি এই বিমান সংস্থার লোকসানের পাল্লা ভারী হতে থাকে। লোকসানের ধাক্কা সামাল দিতে এক-দেড় বছর ধরে দেশি-বিদেশি ক্রেতা খুঁজছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা। দেশীয় একজন উদ্যোক্তার সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছিল। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় বিক্রির সেই প্রক্রিয়া আর বেশি দূর এগোয়নি। এখন নতুন করে বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিক্রির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আমরা আমাদের উড়োজাহাজ ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে বিক্রির মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তরেরমফিজুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নভোএয়ার২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বাণিজ্যিক উড্ডয়ন শুরু করেছিল নভোএয়ার। এটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান তুসুকা গ্রুপের কর্ণধার ও পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি আরশাদ জামাল, সাবেক সংসদ সদস্য ফায়জুর রহমান, ফায়েজ খান ও মফিজুর রহমান। মূলত তুসুকা গ্রুপের ব্যবসা বাড়াতে নভোএয়ার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর এক যুগ পার হতে না হতেই এটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংকটের মুখে পড়েছে।
নভোএয়ার বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ছয়টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। গন্তব্যগুলো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-যশোর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রাজশাহী ও ঢাকা-সৈয়দপুর। এসব গন্তব্যে দিনে একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান সংস্থাটি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পথে ঢাকা-কলকাতা ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে।
নভোএয়ারের হাতে বর্তমানে ৫টি নিজস্ব উড়োজাহাজ রয়েছে। প্রতিটি উড়োজাহাজের আসনসংখ্যা ৭২। এসব উড়োজাহাজ এটিআর মডেলের। প্রধান কার্যালয়সহ দেশজুড়ে নভোএয়ারের বিভিন্ন কার্যালয় ও বিক্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৬৫০ জনের কর্মসংস্থান রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে নভোএয়ারের ১৫০ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে। এর বাইরেও কিছু দায়দেনা আছে। পাঁচটি উড়োজাহাজসহ অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে সেই ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করতে চায় সংস্থাটি। এ মুহূর্তে এটির কার্যক্রম বন্ধ করা হলে তাতে আইন অনুযায়ী কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধে ৩০ কোটি টাকার মতো লাগবে। এসব দায়দেনা আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইছে। তারা মনে করছে, এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি যে অবস্থায় আছে, তাতে সম্পদ বিক্রি করে দায়দেনার একটি বড় অংশ পরিশোধ করা যাবে। আরও কয়েক বছর ব্যবসা পরিচালনা করলে তাতে লোকসান আরও বাড়বে। তখন যদি সম্পদ বিক্রি করা না যায়, তাহলে দায়দেনা পরিশোধ করা কঠিন হবে।
সূত্রটি বলছে, বর্তমানে নভোএয়ারের হাতে যেসব উড়োজাহাজ রয়েছে, সেগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। তখন এসব উড়োজাহাজের ক্রেতা পাওয়াও কঠিন হবে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি যদি তাদের ফ্লাইট পরিচালনা বা ব্যবসা অব্যাহত রাখতে চায়, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে নতুন করে উড়োজাহাজ কিনতে হবে বা ভাড়ায় আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিনিয়োগ লাগবে। লোকসান দিতে থাকা প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা এখন নতুন করে আর এই ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী নন।
নভোএয়ারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তুসুকা গ্রুপের কর্ণধার আরশাদ জামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সর্বশেষ ২০২০ সালে দেশীয় মালিকানাধীন রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে দেশীয় মালিকানার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, জিএমজি এয়ারলাইনসও কয়েক বছর বিমান পরিচালনার পর বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারি উদ্যোগে দেশে গত কয়েক দশকে একাধিক প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজ ব্যবসায় যুক্ত হলেও বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত লোকসানে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে নভোএয়ার ছাড়া এই ব্যবসায় রয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। এর বাইরে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিমান অভ্যন্তরীণ কয়েকটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।