শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায় : টিপু
Published: 8th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, আমরা বিগত ১৬ টি বছর রাজপথ আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। গত ৫ই আগস্ট খুনি হাসিনা পতনের পর আমরা মনে করেছি দেশের শান্তিতে বসবাস করবো, আর রাজপথে থাকতে হবে না।
কিন্তু খুনি ফ্যাসিস শেখ হাসিনার নতুন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদেরকে আবারও রাজপথে নামতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়।
বাংলাদেশের বিশ কোটি মানুষকে জিম্মি করে আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতা দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করতে চাই আপনার হাত কত রক্ত রঞ্জিত করতে চান। গত ১৬টি বছর আপনার হাতে হাজার হাজার নেতাকর্মীসহ সর্বশেষ পাশে আগস্ট এর আগে সাঈদ-মুগ্ধ - স্বজনসহ কয়েক হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে কিন্তু আপনি ক্ষান্ত হননি।
আমরা মনে করছিলাম ১৬ বছর আপনি যা অপকর্ম ও করেছেন তার জন্য আপনি অনুতপ্ত হবেন কিন্তু তা না করে আপনি নতুন করে আবার দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ শ্রমিকলীগ সহ অঙ্গ সংগঠন দিয়ে আপনি এক মাসের কর্মসূচি দিয়েছেন।
আপনাকে একটি কথা বলতে চাই আমরা যারা শহীদ জিয়ার আদর্শের কর্মীরা রয়েছি আমরা কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা রাজপথে আছি।
বন্দর থানা বিএনপির উদ্যোগে আওয়ামীলীগের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল পূর্বে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি একথা গুলো বলেন।
শনিবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল এগারোটায় বন্দর ২৩নং ওয়ার্ডের একরামপুর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বন্দর থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পৌরসভা হয়ে কবিলের মোড় দিয়ে ২৪নং ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ রেললাইন হয়ে নবীগঞ্জ বাজার দিয়ে কাইতাখালী হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দেউলী চৌরাপাড়া এসিআই গেইটের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
তিনি বলেন, আমরা যতদিন না পর্যন্ত এদেশের ২০ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারবো ততদিন পর্যন্ত এদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে আমরা রাজপথে আছি রাজপথ ছাড়বে ঘরে ফিরে যাবো না। আমরা দেখেছি বিগত সময় আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলী, স্বেচ্ছাসেবক শ্রমিকলী কিভাবে এদেশের মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন ও হত্যা গুম করেছিল।
আমরা আর আমাদের কোন ভাই-বোনকে হত্যা গুম খুন ও নির্যাতনের শিকার হতে দেবো না। আমরা কোন মায়ের সন্তানকে আর বুক থেকে খালি হতে দেব না কোন বোনকে আর বিধবা হতে দেব না। আমরা চাই এদেশের ২০ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং মানুষের বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকার জন্য।
টিপু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কেউ রাগে অভিমানে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে কারো বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাবেন না। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা তারা স্বৈরাশাসক ছিল। তাই এ দেশের জনগণ তাদের ছবি ও স্থাপনা ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দিয়েছে। সেগুলা সাথে বিএনপি'র কোন সম্পর্ক নাই।
বাংলাদেশের কোথাও শেখ হাসিনা শেখ মুজিবর এর কোন ছবি ও স্থাপনা এদেশের মানুষ দেখতে চায় না কারণ এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের উপর ক্ষোভ কারণ তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের উপর যে জুলুম নির্যাতন করেছে তা মানুষ ভুলে যায়নি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক শ্রমিকলীগকে নতুন কোন করে কোন অরাজগতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে দিবো না।
প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আপনারা নিজ নিজ এলাকায় পাহারা দিবেন। আর আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের তালিকা করে প্রশাসনের কাছে কিংবা আমাদের কাছে দিবেন। আপনারা তাদেরকে ধরে পুলিশের হাতে দিবেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।
বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ্ আহম্মদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ পনেজ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আহমদ আলী, ২৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক কাজল আহম্মেদ কালুন, ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসেন, ২৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. কাজী নজরুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিনহাজ মিঠু, হাবিবুর রহমান মাসুদ, সম্রাট হাসান সুজনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ গণতন ত র র ন ত কর ম আম দ র য বল গ আপন র আওয় ম র জপথ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক জুয়ার ভুলে কট্টরপন্থীরা কি জার্মানিতে ক্ষমতায় আসবে
জার্মান রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেশটিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা শুধু ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নয়। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। আর উগ্র ডানপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’(এএফডি) এই পরিস্থিতিতে উল্লসিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মান রাজনীতিতে উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল, তা এখন গভীর সংকটে পড়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হয়তো গণতান্ত্রিক অস্থিরতার এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আর এই পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত একটি রাজনৈতিক ভুল। এই ভুল করেছেন বিরোধী মধ্য ডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দলের প্রধান নেতা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস।
ইমিগ্রেশন বা অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মের্ৎস। ঘটনাটি শুরু হয় যখন এক আফগান আশ্রয়প্রার্থী ছুরিকাঘাতে এক শিশুসহ দুইজনকে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর মের্ৎস জার্মানির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করা, ফেডারেল পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো এবং অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার করার প্রস্তাব দেন।
জরিপ বলছে, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে শুধু সিডিইউয়ের সমর্থকেরাই নন, বরং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি), গ্রিন পার্টি ও লিবারেল দলের অনেক ভোটারও রয়েছেন। ডিসেম্বরে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা এবং শত শত মানুষকে আহত করার মতো ভয়াবহ সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মের্ৎস মনে করেছিলেন, এই ইস্যু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় শক্তিশালী ভিত্তি এনে দেবে।
কিন্তু মের্ৎসের এই পদক্ষেপ প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্ন ফল বয়ে এনেছে।
কিন্তু তারপর, হয়তো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে, মের্ৎস সিদ্ধান্ত নিলেন বুন্ডেস্ট্যাগে (জার্মান পার্লামেন্ট) দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। তিনি দাবি করলেন যে তিনি সরাসরি এএফডির সমর্থন চাইবেন না। তবে যদি তাদের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করবেন না। একই সঙ্গে, তিনি তাঁর খসড়া প্রস্তাবগুলোয় এফডির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষা ব্যবহার করলেন যাতে প্রস্তাবগুলো এএফডি গ্রহণ করতে না পারে। মের্ৎসের মূল লক্ষ্য ছিল, তাঁর অভিবাসনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো সমর্থন করতে এসপিডি ও গ্রিন পার্টির ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
কিন্তু এই রাজনৈতিক চাল ব্যর্থ হলো।
এএফডি নেতৃত্ব খুব দ্রুত বুঝতে পারল যে মের্ৎস এমন এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, যা দিয়ে তারা রাজনৈতিক কেন্দ্রকে বিভক্ত করতে পারে। তারা সিডিইউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের ভোটের সাহায্যে গত বুধবার মের্ৎসের প্রথম প্রস্তাব অল্প ভোটের ব্যবধানে বুন্ডেস্ট্যাগে পাস হয়ে গেল।
এরপরই দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়ে গেল। সিডিইউয়ের ভেতর থেকেই একদল সংসদ সদস্য বিদ্রোহ করলেন। আর এতে হস্তক্ষেপ করলেন সাবেক চ্যান্সেলর ও সিডিইউয়ের প্রভাবশালী নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল।
যদি মূলধারার দলগুলোর জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে জার্মানির সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। হয়তো আসবে সংখ্যালঘু রক্ষণশীল সরকার, যাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে উগ্র ডানপন্থী এএফডির সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হবে।পরিস্থিতি আরও জটিল হলো যখন এএফডির সহনেত্রী অ্যালিস ভাইডেল মের্ৎসকে প্রকাশ্যে অপমান করলেন। তিনি তাঁকে দুর্বল নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বললেন, তাঁর নিজের দলই তাঁকে একদম নিচে নামিয়ে দিয়েছে।
এই পুরো পর্ব মের্ৎসের জন্য চূড়ান্ত বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি এএফডিকে আরও সাহসী করে তুলেছেন। নষ্ট করেছেন নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, তিনি জার্মানির যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বড় ‘ট্যাবু’ভেঙে ফেলেছেন। সেই ট্যাবু হলো, উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করা।
এখন মের্ৎস যদি বলেন যে তিনি আসলে এমন কিছু করতে চাননি, তাহলে সে হবে খোড়া অজুহাত। জার্মান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এএফডি চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। অথচ তাদের ভোটের ওপর নির্ভর করে অভিবাসনসংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করানোর চেষ্টা করে মের্ৎস তাঁর নীতিগত অবস্থান হারিয়েছেন। গত নভেম্বরেও তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে সিডিইউ কখনো এএফডির সঙ্গে যাবে না। এমনকি ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ পাওয়ার জন্যও নয়।
কিন্তু বাস্তবে মের্ৎস ঠিক সেটাই করলেন। আর এখন এই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে।
মের্ৎসের পরিকল্পনা ছিল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি) ও গ্রিন পার্টির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ উল্টো ফল দিয়েছে। তিনি এসপিডি নেতা ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এবং গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেকের হাতে এমন একটি ইস্যু তুলে দিয়েছেন যা তাঁদের দুর্বল নির্বাচনী প্রচারণাকে পুনর্জীবিত করতে পারে। এখন তাঁরা তাঁদের সমর্থকদের সামনে বলার সুযোগ পাচ্ছেন, সিডিইউ যে উগ্র ডানপন্থাকে স্বাভাবিক করছে, আর তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
কিন্তু এই জায়গায় জার্মানি এল কীভাবে?
ফ্রিডরিখ মের্ৎস আদতে পুরোনো ধারার ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট। তিনি মুক্তবাজারের পক্ষে, ন্যাটোর সমর্থক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনুগত। তিনি আদতে জনতুষ্টিবাদী নন। তিনি জাতীয়তাবাদী বা বর্ণবাদীও নন। তা সত্ত্বেও, কেন্দ্র-বাম প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টায় এবং এএফডিকে কৌশলে পরাস্ত করতে গিয়ে তিনি নিজের নেতৃত্বের যোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।
এখানে একটা বিষয় বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; সিডিইউ ও তাদের সহযোগী দল, ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) নিছক পশ্চিমা গণতন্ত্রের সাধারণ মধ্য ডানপন্থী বা রক্ষণশীল দল নয়। জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিডিইউ) গঠিত হয়েছিল তাদের ধারার আগের ব্যর্থ দলগুলোর ধ্বংসাবশেষ থেকে। এসব দল ছিল মূলত মধ্যবিত্ত জাতীয়তাবাদী, যারা নাৎসিদের শক্তিকে গুরুত্ব দেয়নি, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে নাৎসিদের সমর্থনও করেছিল। সিডিইউয়ের প্রথম নেতা ও ফেডারেল জার্মানির (পশ্চিম জার্মানি) প্রথম দীর্ঘমেয়াদি চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার ছিলেন গভীরভাবে রক্ষণশীল। কিন্তু একই সঙ্গে কট্টর নাৎসিবিরোধীও। তিনি জার্মান ডানপন্থাকে গণতন্ত্রবিরোধী প্রবণতা থেকে সরিয়ে এনেছিলেন।
আডেনাউয়ার তাঁর দলে অনেক সাবেক নাৎসিকেও জায়গা দিয়েছিলেন তাঁদের গণতন্ত্রের পথে আনা যাবে ভেবে। কিন্তু কখনোই তিনি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোনো গণতন্ত্রবিরোধী দলের ওপর নির্ভর করার কথা ভাবতেন না। এ কারণে সিডিইউ জার্মান গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতার জন্য এক অবিচ্ছেদ্য স্তম্ভ।
সিডিইউ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মতাদর্শের রক্ষণশীলদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হয়ে থেকেছে। তবে একটা জায়গায় তারা সব সময় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যাঁরা হলোকাস্টকে অস্বীকার করেন বা তাঁর গুরুত্ব কমিয়ে দেখান, তাঁদের জায়গা দলে কখনো ছিল না।
এখন যদি সিডিইউ উগ্র ডানপন্থী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, অথবা এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে সিডিইউ আর জার্মান ডানপন্থীদের পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না, তাহলে তা হবে এক ভয়ংকর সংকেত। এটি শুধু সিডিইউয়ের জন্য নয়, বরং গোটা জার্মান গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত হয়ে উঠতে পারে।
প্রায় প্রতিদিনই উগ্র ডানপন্থী এএফডি জার্মানির ‘স্মরণ সংস্কৃতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই সংস্কৃতি আসলে একধরনের জাতীয় ঐকমত্য। এতে নাৎসি অতীতের অপরাধের মুখোমুখি হওয়াকে জার্মান পরিচয়ের একটি মৌলিক অংশ হিসেবে ধরা হয়। উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, এখন এএফডি এই প্রচেষ্টায় এক শক্তিশালী সহযোগী খুঁজে পেয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি এএফডির এক নির্বাচনী প্রচার সভায় ভিডিও বার্তায় ইলন মাস্ক তাদের সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, অতীতের অপরাধবোধ নিয়ে ‘বেশি চিন্তা’ করার কোনো মানে নেই। তিনি যখন এ কথা বলছিলেন, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ছিল ঐতিহাসিক অউশভিৎস মুক্তির ৮০তম বার্ষিকী। মাস্কের এই ‘অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার’ আহ্বান এএফডির কর্মীরা উল্লাসের সঙ্গে গ্রহণ করেন।
তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মের্ৎস ও তাঁর দলের মূলধারার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এ ধরনের ইতিহাসবিকৃতি বা নাৎসি অপরাধকে হালকা করে দেখার কোনো সম্পর্ক নেই। শুক্রবার পার্লামেন্টের বিতর্কে এসপিডির এক নেতা তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি নরকের দরজা খুলে দিয়েছেন।’ তবে এটি স্পষ্ট যে মের্ৎসের আসল উদ্দেশ্য কখনোই উগ্র ডানপন্থীদের সরকারে নিয়ে আসা ছিল না। তিনি বরং চেয়েছিলেন, এএফডির প্রভাব কমিয়ে তাদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিতে।
তাহলে প্রশ্ন হলো, মের্ৎস কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন যে তাঁই সেই চরমপন্থী শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যাদের তিনি দুর্বল করতে চেয়েছিলেন?
জার্মানির মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো যে একসঙ্গে কাজ করতে পারছে না,তা গত সপ্তাহে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে রস্পরিক দোষারোপের মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে নির্বাচনের পর কোনো সমঝোতায় আসা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ জার্মানির সংসদীয় ব্যবস্থায় কার্যকর সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে জোটবদ্ধ হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর যদি মূলধারার দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে জার্মানির সামনে হয়তো আরও খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। হয়তো আসবে সংখ্যালঘু রক্ষণশীল সরকার, যাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে উগ্র ডানপন্থী এএফডির সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হবে।
আর যদি তা–ই হয়, তাহলে তা শুধু জার্মানির জন্য নয়, বরং পুরো ইউরোপের জন্য এক অস্থির রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করবে।
ইয়খ লাও ডেই জাইট পত্রিকার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি
গার্ডিয়ান-এর ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন