কেজরিওয়ালের হারের পর আন্না হাজারের তোপ
Published: 8th, February 2025 GMT
যাঁর ছত্রচ্ছায়ায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পরিচিতি লাভ, সেই প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারে আজ শনিবার বলেছেন, ‘চিন্তাভাবনায় শুদ্ধতার বদলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ধনদৌলতের মধ্যে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। আমার কথা তাঁর মনে থাকেনি।’
দিল্লি নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (আপ) পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর আন্না হাজারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি বারবার বলেছি, মানুষের দরবারে ভোট ভিক্ষার সময় প্রার্থীর চালচলন, আচরণ ও চিন্তাভাবনা শুদ্ধ থাকা দরকার। জীবন হওয়া উচিত নিষ্কলঙ্ক। জীবনে ত্যাগ থাকলে ভোটারের আস্থা ও বিশ্বাস জন্মায়। কেজরিওয়াল এসব কথার গুরুত্ব দেননি। তিনি ধনদৌলতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন।’
আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনই কেজরিওয়ালকে পরিচিতি দিয়েছিল। দিল্লিতে ২০১১–১২ সালের সেই আন্দোলন কাঁপিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে। আন্না চাননি আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দল গড়তে। ভিন্নমত ছিল কেজরিওয়ালের। আন্দোলনে শামিল অন্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আম আদমি পার্টি। তাঁর যুক্তি ছিল, সিস্টেম বা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে ব্যবস্থার বদল ঘটাতে হবে। তা করতে গিয়ে তিনি নিজেই ব্যবস্থার অঙ্গ হয়ে গেলেন। বিজেপির কাছে হার স্বীকারে বাধ্য হলেন।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের মধ্যে ৪৭টি জিতে বিজেপি ২৭ বছর পর দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হচ্ছে। জয় সুনিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, দিল্লির উন্নয়নই হবে তাঁর দলের সরকারের পাখির চোখ। আপ পেতে চলেছে ২৩টি আসন। কংগ্রেস এবারেও শূন্য।
দিল্লি বিধানসভায় কংগ্রেস যে হারের হ্যাটট্রিক করবে, সে বিষয়ে কারও মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। কিন্তু ২০১৫ ও ২০২০ সালের মতো এবারও যে তারা একটি আসনও জিততে পারবে না, তা ভাবা হয়নি। ভোটের আগে ও পরে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, এবার অন্তত তারা দুই কি তিনটি আসন জিতবে। কিন্তু দেখা গেল, এবারও তাদের ঝুলি শূন্য। অন্ধ্র প্রদেশ ও সিকিম বিধানসভায় শূন্য আসনপ্রাপ্তির হ্যাটট্রিকের নজির কংগ্রেসের আছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো দিল্লি।
কংগ্রেস ভেবেছিল, তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১০ শতাংশের বেশি হবে। ২০২০ সালে তারা পেয়েছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বেলা তিনটা পর্যন্ত তাদের পাওয়া ভোটের হার সাড়ে ৬ শতাংশের মতো। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগের তুলনায় এবার কংগ্রেসের ভোটের হার ২ শতাংশ বেড়েছে। সংখ্যায় তা নগণ্য হলেও বেশ কিছু আসনে কংগ্রেস হয়ে দাঁড়িয়েছেন আপ প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ।
যেমন নিউ দিল্লি কেন্দ্রে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভোট পেয়েছেন ২৫ হাজার ৯২৫টি। তাঁকে হারিয়েছেন বিজেপির প্রভেশ সিং ভার্মা ৩০ হাজার ২৪ ভোট পেয়ে। অর্থাৎ জয়ের ব্যবধান ৪ হাজার ৯৯ ভোট। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৫০৪ ভোট। কংগ্রেস ও আপ জোটবদ্ধ থাকলে ও এই ভোট কেজরিওয়াল পেলে বিজেপিকে হারিয়ে তিনি জিততে পারতেন ৪০৫ ভোটে। কেজরিওয়ালের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া হেরেছেন ৬০০ ভোটের ব্যবধানে। সেখানেও কংগ্রেস প্রার্থী এর বেশি ভোট পেয়েছেন। একই ছবি দেখা গেছে বাদলি, নাংলোই জাট, মাদিপুর, রোহিনী ও দ্বারকা বিধানসভা কেন্দ্রেও। আপ ও কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি।
বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হয়েও দিল্লিতে কংগ্রেস ও আপ যুযুধান হওয়ায় জোটের কোনো কোনো শরিক কংগ্রেসকে দোষী করছে। জম্মু–কাশ্মীরের শরিক ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘নিজেদের মধ্যে আরও লড়ুন।’ সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব বলেছেন, কংগ্রেস ভোট কেটে বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। এই ভোটে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস আপের হয়ে প্রচার করেছে। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা আবার কংগ্রেসের পক্ষে প্রচার করেছে। সব মিলিয়ে দিল্লির ভোট ইন্ডিয়া জোটকে আরও নড়বড়ে করে তুলল।
তবে কংগ্রেস তার ভূমিকায় মোটেই লজ্জিত নয়। বরং তারা বলেছে, আপ হেরেছে তাদের কৃতকর্মের দোষে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেছেন, আপকে জেতানোর দায় ও দায়িত্ব কংগ্রেসের নয়। দিল্লি এমনই একটা রাজ্য, যেখানে কংগ্রেস টানা ১৫ বছর শাসন করেছে। সেই রাজ্যে হারানো জমি কংগ্রেস অবশ্যই খুঁজবে। তিনি বলেন, আপকে জেতানো কংগ্রেসের কাজ নয়। কংগ্রেসের লক্ষ্য, সংগঠন শক্তিশালী করে হারানো সমর্থন ফিরে পাওয়া।
কংগ্রেসকে দুর্বল করেই দিল্লিতে আপের উত্থান। দলিত, অনগ্রসর, তফসিল জাতি, সংখ্যালঘু ও ঝুগ্গি–ঝোপড়িবাসীর মধ্যে একদা কংগ্রেসের যে সমর্থন ছিল, আপ সেখানেই ঘা মেরে মাথা তুলেছে।
সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেছেন, যে যুক্তিতে কংগ্রেস আজ দিল্লিতে লড়াই করেছে, আপ নেতৃত্বও অতীতে সেই যুক্তিতেই লড়াই করেছিল গোয়া, হরিয়ানা, গুজরাট, উত্তরাখন্ডে। আজ যাঁরা কংগ্রেসকে দায়ী করছেন, তখন তাঁরা কিন্তু আপকে অপরাধীর কাঠগড়ায় তোলেননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।