ইয়াঙ্গুন-টেকনাফ সীমান্তে বাণিজ্য সচল রাখার চেষ্টা চলছে
Published: 8th, February 2025 GMT
ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত কীভাবে বাণিজ্য সচল রাখা যায়, সেই চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটক করে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এ ঘটনায় জান্তা সরকার সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। ২৩ দিন ধরে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী বোট আসেন।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দর ঘুরে দেখেছি, এটিকে নৌপরিবহন, সমুদ্র বন্দর নাকি ল্যান্ডপোর্ট থাকবে সেটি আমরা দেখছি। এছাড়া ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্টের শ্রমিকের মজুরি কম দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি, সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।
কার্গো বোট আটকের ঘটনায় ইয়াঙ্গুন-টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে, এটি সমাধানের সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি, দেখছি এ সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.
এদিকে নৌ উপদেষ্টার কাছে নানা সমস্যাসহ বন্দরের ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্টের বিভিন্ন অনিয়ম-অভিযোগের কথা তুলে ধরেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এহতেশামুল হক বাহাদুর, সাদ্দাম হোসেন ও মো. হাসেমসহ অনেকে।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে ব্যবসায়ী মো. হাসেম বলেন, বন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে পণ্য প্রতিটন ৬৯২ টাকা আদায় করলেও শ্রমিকদের মজুরি দেয় মাত্র ১০০ টাকা। বাকি প্রায় ৬০০ টাকা আত্মসাৎ করে। যার কারণে শ্রমিকদের অযৌক্তিকভাবে ৬-৭ হাজার টাকা দিতে হয়, না হলে আমাদের মালামাল খালাস বন্ধ রাখে। বলতে গেলে শ্রমিকদের মাধ্যমে ইউনাইটেড ল্যান্ড গ্রুপ আমাদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, অন্য বন্দরের ল্যান্ডপোর্টের বিল নিয়ে টেকনাফ বন্দরের বিলের ব্যাপক তফাত রয়েছে। মূলত ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছে তারা। যার কারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এছাড়া বন্দরে শ্রমিকদের মজুরিসহ নানা অনিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা উপদেষ্টার কাছে উত্থাপন করেছি। আশা করি, একটা সুন্দর সমাধান আসবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ, সীমান্তে আটকা ৭৫ ট্রাক
দুই দিন ধরে বিদেশ থেকে ফল আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমদানিকারকেরা খালাস না নেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে ফলবোঝাই দুই শতাধিক কনটেইনার ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ৭৫ ট্রাক ফল আটকে রয়েছে। এর মধ্যে যশোরের বেনাপোলের বিপরীতে ভারতে পেট্রাপোল সীমান্তে আটকে আছে ফলবোঝাই ২৫টি ট্রাক।
ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন দুই দিন ধরে ফল আমদানি বন্ধ ঘোষণা করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফল আমদানিতে বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ কারণে গত মঙ্গলবার ও আজ বুধবার দেশে সব স্থল ও নৌবন্দরে দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ ছিল।
গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। তাতে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে আমদানিকারকদের। তাই বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ফল আমদানিকারকেরা।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক কনটেইনার ফল আমদানি হয়। শুল্কায়নসহ যার আমদানি মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮০ ট্রাক ফল আমদানি করা হয়। শুল্কায়নসহ যার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। সেই হিসাবে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দিনে গড়ে ১৮০ কোটি টাকার ফল আমদানি হয়। আমদানি বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার ফল আমদানি ব্যাহত হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৬৫০ মেট্রিক টন আপেল, কমলা, আঙুর, মাল্টা ও আনার আমদানি হয়েছে। এই ফল আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে সাত কোটি টাকা। গত দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারেরও রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয়েছে।
বেনাপোল বন্দর ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব খাদ্য আমদানি হয়, তার বড় অংশ রয়েছে আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টা ও আনার। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর আগে এসব ফল আমদানির ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় করত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজি ফলে সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো ১০১ থেকে ১১৫ টাকা। গত ৯ জানুয়ারি সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। তাতে প্রতি কেজি ফল আমদানিতে শুল্ককর ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬ থেকে ১৩৮ টাকা।
এদিকে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানি করা সব ধরনের ফলের দামও বেড়েছে খুচরা বাজারে। মানভেদে বিভিন্ন ধরনের ফলের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যশোর শহরের সোনাপট্টি এলাকার খুচরা ফল ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, আপেল, আঙুর, কমলা, আনারসহ আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। আর দাম বাড়ায় ফলের ক্রেতাও কমে গেছে। এতে বেচাবিক্রি একদমই কম।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দীন আহমেদ বলেন, বিলাসী পণ্য হিসেবে আমদানি করা ফলের ওপর গত এক বছরে তিন দফায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে এনবিআর। আপেল-আঙুর-কমলা হচ্ছে শিশুখাদ্য ও রোগীর পথ্য। এটা কীভাবে বিলাসী পণ্য হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিলাসী পণ্যের কোনো তালিকা নেই। তবে যেসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়, সাধারণত সেসব পণ্যকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ ট্রাক ফল আমদানি হয়।
পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল বন্দরে বিভিন্ন ধরনের ফলবোঝাই অন্তত ২৫টি ট্রাক আটকে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান। তিনি জানান, বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার না হলে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফল আমদানি বন্ধ থাকবে।