গাজীপুরে হামলার ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার, ক্ষমা চাইলেন মহানগর পুলিশ কমিশনার
Published: 8th, February 2025 GMT
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান।
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না, প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গিয়ে পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান এসব বলেন। এর আগে দুপুরে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজবাড়ী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
আরও পড়ুনগাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক ডেকে মারধরে আহত ১৫১৬ ঘণ্টা আগেনাজমুল করিম খান বলেন, ‘আমি শুনেছি, আমার ওসি দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বললাম, তাঁকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করব। আমি বলতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না।’
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গত ১৭ বছর ধরে যারা অত্যাচার করেছে, দেশের ওপর জুলুম করেছে, তারা মাথাচাড়া দিচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো মাথাচাড়া বরদাশত করা হবে না। ইতিমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ রাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমন করার জন্য ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করা হবে।
আরও পড়ুনগাজীপুরে হামলার প্রতিবাদে হাসনাত-সারজিসের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ১ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের সময় সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, গতকাল শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাটের খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বন্ধ করতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে শহরের রাজবাড়ীর মাঠ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
আরও পড়ুনগাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৯ ঘণ্টা আগেবেলা দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে গিয়ে মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে মিছিল করতে করতে নেতা-কর্মীরা ফিরে যান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও আহত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ঢাকার ধানমন্ডিতে ভাঙচুরের ঘটনার পর তাঁরা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেন যে কোথাও ভাঙচুর হলে তাদের জানাতে। গতকাল রাতে তাদের কাছে খবর আসে, ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর লুটপাট বন্ধ করতে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে হামলার শিকার হন।
আরও পড়ুনগাজীপুরে মোজাম্মেলের বাড়িতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে হাসনাত ও সারজিস৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈসাবি উপলক্ষে পাঁচ দিন ছুটির দাবি
চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈসাবি উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার’ নামের একটি সংগঠন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানান সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সদস্য মিশন চাকমা।
এতে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি ও সমতলের জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিহু, চাংক্রান, চৈত্রসংক্রান্তি আবহমান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। এ উৎসব পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জাতিসত্তা এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের কাছে জাতীয় ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসব চলবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত শতাধিক বিভিন্ন জাতিসত্তার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকলেও উৎসবের দিন তাঁদের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উৎসব উপলক্ষে পাঁচ দিন ক্লাস ও পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এক দিনের রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করেছে।
এর আগে গত ৫ মার্চ উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে পাঁচ দিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানিয়েছিল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। চিঠি দেওয়া ওই সংগঠনগুলো হচ্ছে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।