জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নালা-নর্দমা পরিষ্কারে এক শ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাইলেও মাত্র পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সে টাকাও এখনো ছাড় হয়নি। সরকার গুরুত্বটা বুঝছে না, এটা দুঃখ করে আজকে বলতে হচ্ছে। কেন বুঝতে পারছে না, তারা হয়তো মনে করছে, টাকা খেয়ে ফেলবে, নাকি?’

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে নগরের সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে আজ শনিবার দুপুরে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে যুক্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি তিন মাস হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে দেখি, সাড়ে চার শ কোটি টাকা দেনা রেখে গিয়েছে। তাই নগরের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ১ শ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাই। টাকা তো অনেক খরচ হয়ে গেছে। এখন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, মাত্র পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা–ও এখনো পাওয়া যায়নি। সরকার কেন বুঝতে পারছে না? তারা হয়তো মনে করছে, টাকা খেয়ে ফেলবে, নাকি। আমি বুঝতে পারছি না। এটা আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি। উনি (উপদেষ্টা) আছেন, এ জন্য বলছি৷ আমি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারি।’

এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ থাকা টাকা নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারে খরচ করতে হচ্ছে বলে সভায় জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জলাবদ্ধতা না কমলে চট্টগ্রামে আসবেন না। প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেছেন, জলাবদ্ধতা কমবে, আপনিও আসবেন।

প্রকল্প অনুমোদনে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরে এমনও জায়গা আছে, যেখানে খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য গাড়ি বা বড় মেশিন ঢুকতে পারে না। এ ধরনের নাল-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে ২৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ছয়-সাত মাস আগে সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় যদি গুরুত্ব নিয়ে না দেখে, তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কীভাবে সমাধান করব। ওখানে উপদেষ্টা ও সচিব পরিবর্তন হচ্ছে, একজনের পর আরেকজন আসছেন, এই হচ্ছে অবস্থা। সবাই যদি গুরুত্ব দিয়ে দেখে, তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।’

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দেওয়ার মাধ্যমে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিডিএর যে কাজ, তা শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যতই নিতে চাই না কেন, অন্য কোনো উপায় নেই। এখন জলকপাট (স্লুইসগেট), খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। এ জন্য লোকবল দরকার, তাঁদের প্রশিক্ষণ দরকার, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দরকার। এ জন্য বাজেট দরকার।’

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতার সমস্যা উপদেষ্টা পরিষদে অগ্রাধিকার পেয়েছে। চারজন উপদেষ্টা দায়িত্বে আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন করে প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে আসবেন। বাজেটে ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি জানান প্রকল্প পরিচালকেরা। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হচ্ছে ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিডিএর চেয়ারম্যান মো.

নুরুল করিম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রমুখ। সভায় অংশ নেওয়ার আগে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম নগরের বিভিন্ন খালে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন প রকল প ন উপদ ষ ট পর ষ ক র র জন য সরক র ন রসন নগর র দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক ডিআইজিসহ পুলিশের ৪ কর্মকর্তা আটক

পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম ও তিনজন পুলিশ সুপারকে (এসপি) আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে তাদের আটক করা হয়। আজ শনিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিন্টো রোড কার্যালয়ে তাদের আনা হয়।

পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, সাবেক গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম রাজশাহী সারদা একাডেমিতে সংযুক্ত ছিলেন। গতকাল শুক্রবার রাজশাহী জেলা পুলিশ একাডেমির সহায়তায় তাকে আটক করে ঢাকায় আনা হয়। এছাড়া একইদিন রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাত এবং নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামানকে আটক করে রংপুর মহানগর পুলিশ। তাদের আজ দুপুরে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়।

আবুল হাসনাত বাগেরহাটের সাবেক পুলিশ সুপার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। আব্দুল মান্নান কুমিল্লা ও সিলেটে এসপি থাকাকালীন নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শক্তি প্রয়োগ করেন। আসাদুজ্জামান নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। নির্বাচন ও পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এই চার পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করে রাখা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তারা হাসিনা সরকারের সময় পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ