বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘খুনি শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে পালিয়েছে। বাংলাদেশে যে দুই–তিনটি জেলায় রণক্ষেত্র হয়েছিল, যে দুই–তিনটি জেলার ছাত্র–জনতা বুক পেতে দিয়ে, রক্ত দিয়ে, সবার সামনে থেকে এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের মধ্যে একটি জেলা হলো গাজীপুর। এই অভ্যুত্থানে যারা সহযোদ্ধা, তারা তখনো জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল, এখনো জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু ওই খুনি হাসিনা, খুনি জাহাঙ্গীরের দোসররা এই গাজীপুরে যদি আবার উৎপাত করতে চায়, এই ছাত্র–জনতা তাদের আর ছাড় দেবে না।’

ছাত্র–জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন সারজিস আলম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ি সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওই বিক্ষোভে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

আরও পড়ুনগাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক ডেকে মারধরে আহত ১৫১৬ ঘণ্টা আগে

সারজিস আলম বলেন, ‘কালকে আমাদের অনেক সহযোদ্ধাকে তারা রক্তাক্ত করেছে। আমাদের সহযোদ্ধাদের তারা জীবননাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, যে ছাত্র–জনতা জীবন দিয়ে আপনাদের ওই সরকারে বসিয়েছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? যে পুলিশ প্রশাসন নতুন করে ওই চেয়ারগুলোতে বসিয়েছে, সেই পুলিশ প্রশাসন কেন বাংলা সিনেমার মতো ঘটনা ঘটার পর রাজপথে আসে।’

আরও পড়ুনগাজীপুরে হামলার প্রতিবাদে হাসনাত-সারজিসের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ১ ঘণ্টা আগে

দুই ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ করেও পুলিশকে মাঠে নিতে পারেননি উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘এখন যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা পুলিশ মনে করে যে, তারা শুধু ৯টা–৫টা অফিস করবে, তাহলে তাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে এই ছাত্র–জনতা এই বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা দেখেছি, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়, এই পুলিশ.

..যদি আজকে রাতের মধ্যে গতকালকের হামলার সঙ্গে জড়িত ওই খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে আমাদের তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলি, বিগত দিন ধরে আমরা গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার খেলা দেখতে পাচ্ছি। একদল গ্রেপ্তার করে, দুই দিন পর আদালতে বিচারক নামের কিছু অকালকুষ্মাণ্ড, যারা ওই খুনি হাসিনার দোসর, তারা আবার তাদের জামিন দিয়ে দেয়।’

আরও পড়ুনগাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৯ ঘণ্টা আগে

সারজিস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলছি, গতকালকের হামলায় যেসব সন্ত্রাসী জড়িত ছিল, তাদের আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং তারা আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার এবং সার্বিক ব্যবস্থাসংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং করবে। আমরা সেটির অপেক্ষায় আছি। আমরা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী না, আমরা কাজ দেখতে চাই। আমরা এখানে অবস্থান করব, প্রশাসনের কাজ দেখব, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাদের এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে, ওই সন্ত্রাসীরা কারাগারে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থান হবে রাজপথ।’

আরও পড়ুনগাজীপুরে মোজাম্মেলের বাড়িতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে হাসনাত ও সারজিস৬ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ত র জনত র জ বন র আম দ র জ বন দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণের ভারে রুগ্ন তিন–চতুর্থাংশ হিমাগার 

সব খরচ হিসাবে করে চলতি বছর যৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া আট টাকা করা হয়েছে। বর্তমান উচ্চ ঋণের সুদহার, বিদ্যুৎবিল, মজুরিসহ অন্যান্য খরচ যেভাবে বেড়েছে তাতে ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই। তবে সরকার ঋণের সুদহার ও বিদ্যুত বিল কমানোসহ কিছু সহায়তা দিলে ভাড়া কমানো সম্ভব। 

শনিবার রাজধানীর পুরানো পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন বিসিএসএর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। এ সময় সংগঠনটির জেষ্ঠ্য সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।  

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ হিমাগার রয়েছে। ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় বহন করতে না পেরে এর মধ্যে তিন–চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৩০০ এর মতো হিমাগার রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু হিমাগার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। 

গত এক বছরে সুদ হার ১৫ শতাংশ ও অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ছাড়া হিমাগারে আলু আনা–নেওয়া (লোডিং-আনলোডিং), কর্মীদের বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বেড়েছে। এসব ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এ বছর আলু সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। তবে আলু চাষী ও আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি। এই ভাড়া যৌক্তিক কি না তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যাচাই করতে পারে। 

মোস্তফা আজাদ বলেন, গত বছর হিমাগার ভাড়া প্রতি কেজিতে ৭ টাকা ছিল। কিন্তু এই তথ্য গোপন রেখে এবং হিমাগার পরিচালন ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে কিছু মধ্যস্বত্তভোগী মনগড়া বক্তব্য ও কর্মসূচি দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, হিমাগারে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। গত বছর কেজিপ্রতি সাত টাকা করে ৫০ কেজির বস্তার ভাড়া নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। তবে দেখা গেছে, অতীতে অনেক ব্যবসায়ী এ নিয়ম না মেনে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে রেখেছেন। তারাও ভাড়া দিয়েছেন ৩৫০ টাকা করে। সেই হিসেবে তাদের কেজিতে ব্যয় হয়েছে পাঁচ টাকার মতো। এবার এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণেই একটি মহল অপপ্রচার ও ভাড়া কমানোর আন্দোলন করছে। 

সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার মালিকেরা জানান, বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলু বেশি রাখায় তারা এতদিন এসবের ভাড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার এ কারণে হিমাগারের আলুর ধারণক্ষমতাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যায়। এতে ১০ হাজার টনের একটি হিমাগারে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয় তাদের। এসব কারণে চারশ হিমাগারের মধ্যে প্রায় তিনশ হিমাগারই রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আরও বেশ কিছু হিমাগার ঋণ খেলাপীতে পরিণত হয়েছে। 

হিমাগার মালিকের আরও জানান, দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ টনের মতো। চলতি বছর আলু উৎপাদন হতে পারে ১ কোটি ২০ লাখ টনের মতো। সেই হিসেবে বিপুল পরিমাণে আলু হিমাগারের বাইরে থাকবে এবং পণ্যটির দাম সেভাবে বাড়বে না। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এমন বাস্তবতায় উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। 

হিমাগার ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পাঁচটি দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এগুলো হচ্ছে— ঋণের সুদহার ১৭ শতাংশ (দন্ডসুদসহ) থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা; বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি খরচ কমিয়ে ৫ টাকা করা; হিমগারের বিভিন্ন ব্যয়ের ওপরে ভ্যাট ও উৎসে কর প্রত্যাহার করা এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় তিন মাসের পরিবর্তে বাৎসরিক করা। একই সঙ্গে হিমাগার খাতকে কৃষিশিল্প ঘোষণা করা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ