ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে আপনাদের সরকারে বসিয়েছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে: সারজিস আলম
Published: 8th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘খুনি শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে পালিয়েছে। বাংলাদেশে যে দুই–তিনটি জেলায় রণক্ষেত্র হয়েছিল, যে দুই–তিনটি জেলার ছাত্র–জনতা বুক পেতে দিয়ে, রক্ত দিয়ে, সবার সামনে থেকে এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের মধ্যে একটি জেলা হলো গাজীপুর। এই অভ্যুত্থানে যারা সহযোদ্ধা, তারা তখনো জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল, এখনো জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু ওই খুনি হাসিনা, খুনি জাহাঙ্গীরের দোসররা এই গাজীপুরে যদি আবার উৎপাত করতে চায়, এই ছাত্র–জনতা তাদের আর ছাড় দেবে না।’
ছাত্র–জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন সারজিস আলম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ি সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওই বিক্ষোভে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আরও পড়ুনগাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক ডেকে মারধরে আহত ১৫১৬ ঘণ্টা আগেসারজিস আলম বলেন, ‘কালকে আমাদের অনেক সহযোদ্ধাকে তারা রক্তাক্ত করেছে। আমাদের সহযোদ্ধাদের তারা জীবননাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, যে ছাত্র–জনতা জীবন দিয়ে আপনাদের ওই সরকারে বসিয়েছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? যে পুলিশ প্রশাসন নতুন করে ওই চেয়ারগুলোতে বসিয়েছে, সেই পুলিশ প্রশাসন কেন বাংলা সিনেমার মতো ঘটনা ঘটার পর রাজপথে আসে।’
আরও পড়ুনগাজীপুরে হামলার প্রতিবাদে হাসনাত-সারজিসের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ১ ঘণ্টা আগেদুই ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ করেও পুলিশকে মাঠে নিতে পারেননি উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘এখন যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা পুলিশ মনে করে যে, তারা শুধু ৯টা–৫টা অফিস করবে, তাহলে তাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে এই ছাত্র–জনতা এই বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা দেখেছি, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়, এই পুলিশ.
সারজিস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলছি, গতকালকের হামলায় যেসব সন্ত্রাসী জড়িত ছিল, তাদের আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং তারা আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার এবং সার্বিক ব্যবস্থাসংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং করবে। আমরা সেটির অপেক্ষায় আছি। আমরা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী না, আমরা কাজ দেখতে চাই। আমরা এখানে অবস্থান করব, প্রশাসনের কাজ দেখব, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাদের এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে, ওই সন্ত্রাসীরা কারাগারে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থান হবে রাজপথ।’
আরও পড়ুনগাজীপুরে মোজাম্মেলের বাড়িতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে হাসনাত ও সারজিস৬ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ত র জনত র জ বন র আম দ র জ বন দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির ‘নামধারী সন্ত্রাসীদের’ হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় বিএনপি নেতা
রাজশাহীর রাজপাড়া থানা বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও মহানগর যুবদলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন ও তাঁর পরিবার বিএনপির নামধারী সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের লক্ষ্মীপুর বাকির মোড় এলাকায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে রুহুল আমিন এ অভিযোগ করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে রুহুল আমিন বলেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিএনপির আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো আদর্শে কখনোই জড়িত ছিলেন না। এ কারণে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ৯টির বেশি মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ১০ বারের বেশি কারাবরণ করেছেন। এখনো নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। দল করতে গিয়ে পারিবারিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হলেও দমে যাননি।
তিনি বলেন, এত কিছুর পরও দলের বিপথগামী কিছু সদস্য, আওয়ামী লীগের এজেন্ট ও পতিত সরকারের সুবিধাভোগী অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি রাতে তাঁর বাসভবনে হামলার শিকার হয়েছেন।
রুহুল আমিন অভিযোগ করেন, হামলায় নেতৃত্ব দেন রাজপাড়া বিএনপির বর্তমান সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ তৎকালীন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন আহমেদ ও তাঁর ভাই তুহিন, কাশিয়াডাঙ্গা থানা বিএনপির সদস্য মুরাদ পারভেজ, আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডার খিচ্চু, নাইম, সবুজ ও হৃদয়সহ তাঁদের সহযোগীরা। তাঁরা তাঁর বাসভবনে ভাঙচুর করে পরিবারসহ তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আগুন দেন। এলোপাতাড়ি গুলি করে লুটতরাজ করেন। পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনার আলামত হিসেবে গুলির খোসাও উদ্ধার করেছে। কোনোমতে প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর সহায়তায় বর্তমানে আতঙ্কিত ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছেন।
যুবদলের এই নেতা বলেন, মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি, মহানগরের আওতাধীন রাজপাড়া থানা কমিটিসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের কমিটিগুলোতে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও সুবিধাভোগীদের সরাসরি সদস্য করা হয়েছে। এরপরও বিগত রমজানে ইফতার মাহফিল আয়োজন করে রাজপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে একই ব্যক্তিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্থাৎ অভিযুক্ত সাবেক আহ্বায়ক মিজানুর রহমানকে সভাপতি ও সাবেক সদস্যসচিব আমিনুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে কাউন্সিল ও মতামত ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করা হয়, যা প্রহসনের নামান্তর মাত্র বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এত অভিযোগ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের আবার নতুন করে পদায়ন করা আর অপরাধীদের পুরস্কৃত করা একই কথা। এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অপরাধীদের বিভিন্ন কমিটিতে পদায়ন করে পুনর্বাসন করার কারণে স্থানীয়ভাবে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দল থেকে বিমুখ হয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রুহুল আমিন বলেন, শুধু দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণেই পরিবারসহ তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছে দলে অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসীরা। তিনি এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরও দৃশ্যমান কোনো ফলাফল এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। প্রতিনিয়ত বিতর্কিত ব্যক্তি ও বিএনপির কথিত নেতাদের থেকে পরোক্ষভাবে মামলা তুলে নিতে হুমকি পাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর স্ত্রী নাদিরা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘রুহুল আমিন আমার ঘনিষ্ঠ মানুষ। আমি তাঁর হেফাজতকারী। তাঁকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে হয়তো আমার বিরুদ্ধে এসব কথা বলেছেন। তাঁর যে ক্ষতি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমি নিজেই তদন্তের দাবি করেছি।’ আওয়ামী লীগের লোকজনকে কমিটিতে রাখার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ রকম যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে কেন্দ্র তাঁদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’