ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ
Published: 8th, February 2025 GMT
সংবিধানসহ ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে প্রতিবেদনগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এর পর রাজনৈতিক দল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ইতোমধ্যে যে কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেসব কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে কমিশনপ্রধানদের এক বৈঠক গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখিত আশু পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের করণীয় বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
সভায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। প্রথম ধাপে জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠিত হয় গত অক্টোবরে। দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে মানচিত্র ও তথ্য নিয়ে চীনের আপত্তি
বাংলাদেশের দুটি পাঠ্যবই ও জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এশিয়ার মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে ভুলভাবে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। চীন বলছে, প্রাচীনকাল থেকেই এগুলো তারই অংশ। বেইজিংয়ের মতে, এই ‘তথ্য বিভ্রাটের’ পাশাপাশি পাঠ্যবই ও জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে হংকং ও তাইওয়ানকে চীনের অংশ না দেখিয়ে দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, চীন গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশকে পাঠ্যবই এবং জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া মানচিত্র ও তথ্য সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। পরে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীন আপাতত এ বিষয়ে চাপ না দেওয়ার অবস্থান নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীন আপত্তি জানানোর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) সঙ্গে। তখন এনটিসিবির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, এরই মধ্যে নতুন বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। ফলে এবার সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া হুট করে এমন কোনো বিষয় সংশোধন করা যায় কি না, সেটাও প্রশ্ন। নতুন পাঠ্যবইয়ের হালনাগাদ পরিস্থিতি উল্লেখ করে চীনকে এ নিয়ে চাপ না দিতে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। পরে সমন্বিতভাবে বিষয়টি সুরাহা করা হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চীন যে বিষয়গুলোকে ‘তথ্য বিভ্রাট’ বা ‘ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করে সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়গুলো এভাবেই ছাপা হয়ে আসছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চরম টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে চীন বিষয়টিকে সামনে এনেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
চীনের আপত্তি বিষয়
পাঠ্যবই ও জরিপ অধিদপ্তরের মানচিত্র এবং তথ্যের বিষয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের ভাষ্য, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ে এশিয়া অঞ্চলের মানচিত্র রয়েছে, যেখানে চীন ও ভারতের সীমান্তরেখায় জ্যাংনান (অরুণাচল প্রদেশ) ও আকসাই চীনকে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি গন্তব্য দেশের তালিকা রয়েছে। সেখানে হংকং ও তাইওয়ানকে দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা মানচিত্র নিয়ে চীনের ভাষ্য, মানচিত্রে চীন ও ভারতের সীমান্তরেখায় জ্যাংনান (অরুণাচল প্রদেশ) ও আকসাই চীনকে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তাইওয়ানকে দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভুল।
মানচিত্র আর দেশ নিয়ে চীনের যুক্তি
চীন মানচিত্র নিয়ে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে বলছে, চীন ও ভারতের সীমান্তরেখায় জ্যাংনান ও আকসাই চীনের বিষয়টির সুরাহা প্রাচীনকালেই হয়ে গেছে, যা অনস্বীকার্য। আর ওই এলাকাগুলো নিয়ে চীনের সার্বভৌমত্ব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। সীমান্তরেখা হচ্ছে একটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা চর্চার মূল ভিত্তি। ফলে একটি দেশের সীমান্তরেখা সঠিকভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন বাঞ্চনীয়।
তাইওয়ান প্রসঙ্গে চীনের যুক্তি হচ্ছে, এক চীন নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি, যা আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে। যার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীন রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে। তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীন সরকার সমগ্র চীনের একমাত্র বৈধ সরকার। ফলে তাইওয়ানের বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক বর্ণনা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে চীন ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে হংকংয়ের ওপর সার্বভৌমত্বের চর্চা করে আসছে। চীন বলেছে, ‘এক রাষ্ট্র, দুই ব্যবস্থা’ এই নীতির ভিত্তিতে হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। তার মানে হংকংয়ের ব্যাপকতর স্বায়ত্তশাসন থাকলেও তা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের আঞ্চলিক প্রশাসন হিসেবে বিবেচিত। কাজেই হংকংকে দেশ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা যায় না।
এক চীন নীতি অনুসরণের অনুরোধ
বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের চর্চার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একে অন্যের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার কথা উল্লেখ করেছে চীন। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে একে অন্যের মৌলিক স্বার্থ সমুন্নত রেখে ও উদ্বেগগুলোকে বিবেচনায় রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে দেশটি। আর এই ঐকমত্যের ভিত্তিতেই একটি চমৎকার, স্থিতিশীল ও টেকসই সম্পর্ক বিকশিত করে চলেছে বাংলাদেশ ও চীন। এমন প্রেক্ষাপটে বেইজিং প্রত্যাশা করে, ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত বিষয় অনুসরণের পাশাপাশি ‘এক চীন নীতি’ অনুসরণ করে বাংলাদেশ উল্লেখিত ভুলের বিষয়ে চীনের উদ্বেগগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে। এই ভুলগুলো যথাযথভাবে সংশোধনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই পদক্ষেপও নেবে বাংলাদেশ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চীনে বাংলাদেশের সাবেক একাধিক রাষ্ট্রদূত এই প্রতিবেদককে বলছেন, মানচিত্র নিয়ে চীনের এমন আপত্তি তাঁরা আগে কখনো শোনেননি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে দুই দেশই নতুন করে মানচিত্র চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। ফলে চীন এখন চাইছে তাদের নতুন করে মানচিত্র করার প্রয়াসটা বাংলাদেশেও প্রতিফলিত হোক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ বিষয়টি তাদের দুই দেশের সমস্যার বিষয়। তা ছাড়া তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুসরণ করেই নানা ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানচিত্র ব্যবহার করে থাকে। ফলে বিষয়টি প্রকাশ্যে না এনে বাংলাদেশ সন্তর্পণে চীনকে এটা বোঝাতে পারে যে পাঠ্যপুস্তকে এটি এই মুহূর্তে করার সুযোগ নেই। আর ভবিষ্যতেও কোনো পরিবর্তন আনতে হলে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পন্থা অনুসরণ করেই বাংলাদেশ করবে।