ছাত্রীকে বিয়ে না করায় নোবিপ্রবি শিক্ষককে বরখাস্ত
Published: 8th, February 2025 GMT
ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে অন্যত্র বিয়ে করায় প্রতারণার অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখার এক নোটিসে এ তথ্য জানা গেছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বিয়ের প্রলোভনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ করেন। নোবিপ্রবির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সুপারিশ এবং ‘উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী বিভিন্ন আইনি পর্যায় চলমান থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী লিখেছিলেন, “২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করেন। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে এবং সব জায়গা থেকে ব্লক দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের নম্বর জোগাড় করে ফোন দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দেব, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কিনা আমি জানি না।’ তাও আমার মা না করে দেন।”
অভিযোগপত্রে আরো লিখেছিলেন, “এভাবে আমাকে ফাঁদে ফেলায় মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন, ‘আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানা বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকায় আমি তার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে।”
তিনি বলেন, “এর মধ্যে কয়েক দফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন। কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও, তারপর বিয়ে করবো। ২০২৪ সালের কুরবানির ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এরই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সবাই সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি আমাকে বুঝাতে থাকেন, পরিবার থেকে অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৮ ও ৯ অক্টোবর আমার খালামনিকে মোস্তাফিজ জানান, ‘তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন। আমাকে আগামী ২/৩ বছর স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায়, আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন। আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না।’ আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়।”
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে তড়িঘড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে আমার থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।”
ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরও লিখেন, “তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ অক্টোবর আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে দেখা করি। পরদিন সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে ডিভোর্স দিতে বলি। কিন্তু তারা জানান, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।”
নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম স ত ফ জ র রহম ন য ন হয়র ন স স থ হয়
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ নতুন ও পুরোনো সিলেবাসে পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৩ সালের বিবিএ (প্রফেশনাল) প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার নতুন ও পুরোনো সিলেবাসের পরীক্ষার ফরম পূরণ চলছে। গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে ফরম পূরণ শুরু হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি বাবদ ৩ হাজার ৩০০ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ অন্তর্ভুক্তি পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে দিতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ–সংক্রান্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২০২৩ সালের বিবিএ (প্রফেশনাল) প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার নতুন ও পুরোনো সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষার অনলাইনে ফরম পূরণ ৫ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। পরীক্ষার্থী অনলাইনে ফরম পূরণের পর প্রিন্ট করা আবেদন ফরম ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কলেজে জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীর ডেটা ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিশ্চয়ন করবে। ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা জমা দেবে।
পরীক্ষায় যাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা নিয়মিত, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হবেন। ২০২২ সালে দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় সি ও ডি গ্রেডে উত্তীর্ণদের এবারই মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এফ গ্রেডপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীরা বিশেষ অন্তর্ভুক্তি ফি দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
আরও পড়ুনষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রশ্নের ধরন, নম্বর বিভাজন ও মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আবেদনের পদ্ধতি
আবেদনকারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে student login লিংকে ক্লিক করে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ও ওয়েবসাইটের নির্দেশনা অনুযায়ী ডেটা এন্ট্রি করতে হবে। ডেটা এন্ট্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অনলাইন থেকে একটি পূরণ করা আবেদন ফরম প্রিন্ট করে নিতে হবে। পূরণ করা ফরমটিতে পরীক্ষার্থীর বিষয় কোড ও ফি উল্লেখ থাকবে।
আরও পড়ুনসরকারি মেডিকেলে ভর্তির সময় বৃদ্ধি৫ ঘণ্টা আগেবিবরণী ফরম ও ফি জমা দেওয়ার নিয়মাবলি
২০২৩ সালের (প্রফেশনাল) প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার সব পরীক্ষার্থীর ফি ডিজাইন করা নির্ধারিত জমা ফরম বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে ‘সোনালী সেবা’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কলেজ www.nubd.info/prof অথবা http://103.113.200.12/prof/ থেকে Pay Slip ডাউনলোড করতে হবে। পে স্লিপে সংশ্লিষ্ট খাতের সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর উল্লেখ করে মোট টাকার অংশ লেখা থাকবে এবং এর প্রিন্ট কপি নিয়ে কাছের সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে এ–সংক্রান্ত কোনো প্রকার আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না। পে স্লিপে সংশ্লিষ্ট খাতের সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর উল্লেখ করে মোট টাকার অংশ লেখা থাকবে এবং এর প্রিন্ট কপি নিয়ে কাছের সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংকে প্রচলিত অন্য কোনো ফরমে টাকা জমা করা হলে পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট জটিলতার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
আরও পড়ুনকলেজশিক্ষকদের পদোন্নতি পেতে লাগবে গবেষণা০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনবেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে আবেদন শুরু, মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ জেনে নিন বিস্তারিত০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫