মাসউদ আহমাদ এ সময়ের কথাসাহিত্যিক। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ‘দূর  পৃথিবীর গন্ধে’ গল্পগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ‘আইএফআইসি ব্যাংক-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’। ‘কাঞ্চনফুলের কবি’ উপন্যাসের জন্য ভারতের ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকা সংস্থা থেকে লাভ করেছেন সাহিত্যে ‘এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি পুরস্কার’। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  বর্তমানে সিটি ব্যাংকে কর্মরত এই কথাসাহিত্যিকের সাক্ষাৎার নিয়েছেন স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি : ‘কাঞ্চনফুলের কবি’ উপন্যাসের পর এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে আপনার ‘তিতাসের বুনো হাঁস’। দুটিই জীবনীভিত্তিক উপন্যাস। একটি আরেকটি লিখতে উৎসহ যুগিয়েছে কি না? 

মাসউদ আহমাদ : আমি একটু গল্প ও উপন্যাস লেখার চেষ্টা করি। গল্প বা উপন্যাস আমি তখনই লিখতে উদ্বুদ্ধ বা অনুপ্রাণিত হই, যখন বাস্তবের কোনো ঘটনা, সম্পর্কের আলো-অন্ধকার বা ছোট কোনো গল্পসূত্র ও ভাবনা আমাকে নাড়া দেয়। আলোড়িত করে। ‘কাঞ্চনফুলের কবি’ জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সময়কে অবলম্বন করে লেখা উপন্যাস। জীবনীভিত্তিক বা বিশেষ সময়কে ধরে উপন্যাস লেখার অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। সে কারণে আমার বেশ লম্বা সময় লেগে গিয়েছিল। 

একটা কথা বলা দরকার, আমি যে বহুদিন জীবনানন্দর কবিতা বা ব্যক্তি জীবনানন্দর খুব অনুরাগী ছিলাম, এমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অনেক তরুণকে দেখেছি, তাঁর কবিতা ভীষণ পছন্দ করেন। হাঁটতে হাঁটতে, ক্লাসের ফাঁকে বা আড্ডায় জীবনানন্দর কবিতা পড়ছেন। মুখস্থ। হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে.

..। সত্যি বলতে, সেসব লাইন মাথার ওপর দিয়ে চলে যেত। এখন বুঝতে পারি, জীবনানন্দ দাশের কবিতা মানেই এক আশ্চর্য সম্মোহন! এক ধরনের আকর্ষণ ও মায়া। ওতে একবার নিমজ্জিত হলে এড়ানো যায় না। 

উপন্যাস লেখার প্রেরণা কীভাবে পেলাম? বছর দশেক আগে, ঢাকায় বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিতে একটি বই পড়ছিলাম। আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত সেই বইটির নাম ছিল ‘জীবনানন্দ’। জীবনানন্দর কবিতা ও তাঁকে নিয়ে বিভিন্নজনের লেখাপত্র। সেখানে একটি লেখা ছিল সুবোধ রায়ের। সুবোধ রায় একসময় কবিতা লিখতেন, পরে ছেড়ে দেন। তিনি ছিলেন জীবনানন্দ দাশের সান্ধ্যভ্রমণের সঙ্গী। আড়াই পৃষ্ঠার লেখাটি পড়ে আমি এত আলোড়িত ও ঘোরগ্রস্ত হই, বারবার মনে হতে থাকে, চারপাশের মানুষ যে বলে, জীবনানন্দ দাশের কবিতা ভালো লাগে, প্রশান্তি দেয়, ঘোরগ্রস্ত করে; এর বাইরে বাস্তবের জীবনানন্দ নামের যে মানুষটি, তাঁর জীবন তো গল্পের মতো। অনুসন্ধান করে খুঁড়ে বের করলে উপন্যাস হতে পারে। আমি একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই। পরে বরিশাল-কলকাতা-ঢাকায় আমার নিত্য যাওয়া-আসা শুরু হয়ে যায়। জীবনানন্দকে নিয়ে কে কী জানেন আর তাঁর বইপত্র এবং তাঁকে নিয়ে কী বইপত্র আছে, খুঁজে ফিরি। 
এভাবে পাঁচ বছরের একটা জার্নি ছিল আমার। একসময় উপন্যাসটা লিখতে শুরু করি। 

‘তিতাসের বুনো হাঁস’ উপন্যাসটি কখনো লিখব, ভাবিনি। অদ্বৈত মল্লবর্মণ বিষয়ে আমাকে প্রথম উৎসাহী করেন কবি ও গবেষক ড. তপন বাগচী। একদুপুরে ঢাকার বাংলা একাডেমির পুকুরপাড়ে তাঁর সঙ্গে দেখা; বললেন, তুমি তো গল্প লেখো, অদ্বৈত মল্লবর্মণকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তুমি তাঁর গল্প নিয়ে একটি গদ্য দিতে পারো। অদ্বৈত-অভিযাত্রার প্রাথমিক কুঁড়ি সেদিনই উঁকি দেয়। পরে হাতে আসে দেজ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনাসমগ্র’; সম্পাদক অচিন্ত্য বিশ্বাস। অচিন্ত্যবাবু কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং অদ্বৈত-গবেষক। অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবন ও সময় নিয়ে উপন্যাস লেখার ভাবনা যখন আমাকে আলোড়িত করে, কয়েকজন মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি; তাঁদের অন্যতম অচিন্ত্য বিশ্বাস। তিনি দুর্লভ বইপত্র, তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে আমার অদ্বৈত-অন্বেষণকে গভীর ও সুসংহত করেন। 

ঔপন্যাসিক হরিশংকর জলদাস অদ্বৈতর মানস ও সময় বুঝতে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবি ও সংগঠক জয়দুল হোসেন, গবেষক মানবর্দ্ধন পাল, সংস্কৃতিকর্মী মাসুদ উর রহমান সরেজমিন অদ্বৈত-অনুসন্ধানে আমার সঙ্গী ছিলেন। কলকাতায়, একটা পুরো দুপুর বড়বাজার, চিৎপুর রোড ও ষষ্ঠীতলায় পায়ে হেঁটে অদ্বৈত-অন্বেষণে সঙ্গ দিয়েছেন কবি ও গবেষক গৌতম মিত্র। ১৯৩৪ সালে অদ্বৈত মল্লবর্মণ যখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে আইএ পড়েন, তখন তাঁরই সতীর্থ বন্ধু মতিউল ইসলাম একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন, বই আকারে প্রকাশ করবেন। অদ্বৈতকে অনুরোধ করলেন, তিনি যেন পাণ্ডুলিপিটি দেখে দেন। কেননা ততদিনে অদ্বৈত কবি ও ভাবুক হিসেবে বেশ পরিচিত। মতিউলের কবিতার পাণ্ডুলিপি একদমই পছন্দ হয়নি অদ্বৈতর। কিন্তু সে কথা সরাসরি বললে মতিউল দুঃখ পেতে পারেন। তখন তাঁকে একটি চিঠি লেখেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তপন বাগচীর প্ররোচনায় অদ্বৈতকে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমি সেই চিঠির সন্ধান পাই এবং ভীষণভাবে আলোড়িত হই। ভাবি, ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া একটা ছেলে এমন অসামান্য চিঠি লিখতে পারেন? এখনকার কলেজের প্রভাষক বা অনেক সহকারী অধ্যাপকও এমন চিঠি লিখতে পারেন কিনা সন্দেহ হয়। এই চিঠির শক্তি ও সৌন্দর্য আমাকে ক্রমশ ‘তিতাসের বুনো হাঁস’ উপন্যাস লেখার দিকে নিয়ে যায়। 

রাইজিংবিডি : সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ‘এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি-২০২৩’ সম্মাননা পেয়েছেন। এই সম্মাননা আপনার চিন্তায় কোনো পরিবর্তন এনেছে কিনা? 

মাসউদ আহমাদ : ‘এবিপি আনন্দ’ হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে পপুলার টেলিভিশন চ্যানেল। আনন্দবাজার পত্রিকা সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ওরা প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষায় সাহিত্য, গান, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া, রান্নাবান্না, চিত্রশিল্প এবং সৃজনশীল কাজের নানাক্ষেত্রে বিশেষ উৎকর্ষ তৈরি করেন, তাঁদের পুরস্কৃত করেন। এর আগে বাংলাদেশ থেকে এই পুরস্কার বেশ কয়েকজন পেয়েছেন। জয়া আহসান, সাকিব আল হাসান, শাহীন আখতার প্রমুখ। ২০২৩-এ বাংলাদেশ থেকে আমরা দুজন এই পুরস্কার পেলাম। অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী আর সাহিত্যে আমি। আমার জন্য এটা ছিল অভাবনীয়। মূলত আমার উপন্যাস ‘কাঞ্চনফুলের কবি’ কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং বাঙালি পাঠকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। পরে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।

এবিপি আনন্দর দুজন সাংবাদিক ঢাকায় এসেছিলেন আমার জীবন ও সাহিত্য নিয়ে ডকুমেন্টরি করতে, তখন জানতে পারি, কী বিপুলভাবে উপন্যাসটি সারা ভারতে পাঠকপ্রিয় হয়েছে। বইটি প্রকাশের চার মাসের মাথায় দ্বিতীয় মুদ্রণ বেরিয়েছে। ১১০০ কপির এডিশন ছিল। তৃতীয় মুদ্রণ শীঘ্রই বেরিয়ে যাবে। এই সম্মাননা আমার চিন্তায় কোনো পরিবর্তন এনেছে কিনা? সামাজিকভাবে দারুণ সম্মান ও পরিচিতি দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে কিনা বলা মুশকিল। পুরস্কার পেলে আমি ভীষণ আনন্দিত হই। এসব এক ধরনের উৎসাহ, প্রেরণা ও আনন্দের বিষয়। কিন্তু বেশিদিন থাকে না। কেউ মনেও রাখে না। আমি একটি উপন্যাস শেষ করার পর আর একটি উপন্যাসের দিকে সমস্ত মনোযোগ ও প্রচেষ্টা নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করতে চাই। পুরস্কার নিয়ে ভাবনা ও কল্পনা মাথায় থাকে না। সেটা আমার কাজও নয়। আমি একটি স্মরণীয় উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখি। 

রাইজিংবিডি : ‘দেশ‘ পত্রিকায় আপনার পাণ্ডুলিপি কীভাবে পৌঁছেছিল? 

মাসউদ আহমাদ : ‘কাঞ্চনফুলের কবি’ উপন্যাসের আগে ‘দেশ’-এ আমার তিনটি গল্প প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটি বেশ বড় এবং কোনো পত্রিকায় প্রকাশের জন্য দেওয়া মুশকিল। অন্তত বাংলাদেশে। কেননা এখানে বিখ্যাত না হলে কোনো লেখকের উপন্যাস ধারাবাহিক প্রকাশের জন্য বিবেচনা করে না। একদিন আচমকা মনে হয়েছিল, ‘দেশ’-এ আমার গল্প ছাপা হয়েছে, উপন্যাসটা জমা দিলে কেমন হয়? সেই ভাবনা থেকেই পাঠানো। কুরিয়ারে পাঠিয়েছিলাম, ১২০০ গ্রাম ওজন ছিল। এক বছর পরে তাঁরা আমাকে কনফার্ম করেছিলেন। পরে পত্রিকাটিতে প্রায় দেড় বছর ধরে উপন্যাসটি ছাপা হয়েছিল। একটি পত্রিকা এখনো কত হাজার হাজার মানুষ পড়েন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, উপন্যাসটি ছাপা না হলে বুঝতে পারতাম না। পাঠক কত স্পর্শকাতর, সতর্ক এবং অনুসন্ধানী হয়, তাও বুঝতে পেরেছি। উপন্যাসটি ছাপা শেষ হওয়ার পর, লেখক সম্মানী হিসেবে ‘দেশ’ আমাকে এক লাখ রুপি দিয়েছিল। 

রাইজিংবিডি : মুদ্রিত বই অডিও, পিডিএফ হওয়ার ট্রেন্ডকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? 

মাসউদ আহমাদ : এটাকে আলাদাভাবে দেখি না। কেননা সময়ের চাহিদাকে কোনোভাবেই এভয়েড করা যায় না। গান শুনতে খুব পছন্দ করি। ছোটবেলায় টেপ ও ক্যাসেটের ফিতায় গান থাকতো। পরে সিডি এলো। এখন সময় আরও বদলেছে। মুঠোফোনে গান থাকে। ইউটিউবে তো দুনিয়ার সবকিছু আছে। তবে ছাপা বই পড়তেই আমি পছন্দ করি। কেননা তাতে ইচ্ছে মতো নোট করা যায়। যেখানে এবং যখন খুশি বইটা সঙ্গে নিয়ে পড়া যায়। ধরা যায়।। রেখে আবার পড়া যায়। এতে স্বস্তি ও আনন্দের যোগসূত্র আছে। বই অডিও, পিডিএফ হওয়ার ট্রেন্ড চালু হয়েছে মানুষের কাছে আরও সহজে বই পৌঁছানোর তাগাদা থেকে। 

রাইজিংবিডি : কোন সময়টাতে বেশি লেখেন? রুটিনটা জানতে চাই। 

মাসউদ আহমাদ : আমার লেখার প্রিয় সময় ভোরের দিকটায়। প্রায় নিয়ম করেই রাতে ১২টার কিছু আগেই ঘুমুতে যাই এবং ছটা থেকে ছটায় ওঠার চেষ্টা করি। ওই সময় লিখতে সুবিধা বা স্বস্তির মনে হয়। নিজের মতো করে ভাষা-কল্পনা-গদ্যটা আসতে থাকে। ভরদুপুরে বা অফিস থেকে সন্ধ্যার পরে ফিরে ক্লান্ত হয়েও লিখতে বসে যাই। তখন মাথার ভেতর লেখার ফ্লো এমনভাবে চলতে থাকে, পরিবেশ বা সময়টা আর কোনো ব্যাপার মনে হয় না। মনে হয়, এক্ষুণি লিখে ফেলতে হবে, না হলে পরে মাথা থেকে সরে যেতে পারে। এবং অন্যদের কথা বলতে পারি না, আমার ক্ষেত্রে এমন হয়। 

রাইজিংবিডি : কোন ধরনের বই পড়েন, কখন বেশি পড়া হয়? 

মাসউদ আহমাদ : সাক্ষাৎকারের বই পড়তে বেশি ভালো লাগে। আর কবিতা। কবিতা কখনো লিখিনি, কিন্তু কবিতা আমি পড়তে ভীষণ পছন্দ করি। গল্প উপন্যাস পড়ি, তারচেয়ে প্রবন্ধ, কখনো পুরনো কোনো ইতিহাস বা বিশেষ বিষয় নিয়ে লেখা গবেষণাধর্মী বই আমাকে টানে। চিন্ময় গুহর লেখা, মির্জা গালিব বা জয় গোস্বামীর কবিতা, ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতা পেলেই পড়ি। প্রশান্ত মৃধা, কখনো শাহাদুজ্জামানের কোনো কোনো লেখা। পড়ার ক্ষেত্রে নিয়ম নেই আমার। পাঠতৃষ্ণা ও রুচি বদল হয়। বিষয়ভিত্তিক উপন্যাস লেখার জন্য একসঙ্গে অনেক বই নিয়ে থাকতে হয়, তখন সেটাতে মগ্ন হয়ে থাকি। আলাদা সময় নেই, ঘুমুতে যাওয়ার আগে পড়ি। এন্ড্রয়েড ফোনের প্রলোভনে পড়লে মুশকিল। পড়া হয় না। ফোনটা দূরে রাখি এবং বেশিরভাগ সময় এন্ড্রয়েড ফোন সঙ্গে রাখি না। বাটন ফোন ব্যবহার করি, যাতে মনোযোগে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।  

রাইজিংবিডি : কবে কোথায় প্রথম লেখা প্রকাশ হয়েছে?

মাসউদ আহমাদ : একটা গল্প লিখেছি, সেই গল্প পত্রিকায় পাঠাব আর ছাপা হয়ে যাবে, এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। আর একটা কারণ ছিল অত্মবিশ্বাসের অভাব। গল্প তো লিখে ফেলেছি, কিন্তু গল্পটা কেমন হয়েছে, তার মান নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। তখন হাতের লেখা মোটামুটি সুন্দর ছিল। গল্পটা ফটোকপি করে তিনটি পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম। সে কারণে আমি প্রথমে রাজশাহীর একটি মাসিক কাগজে এবং প্রায় একইসঙ্গে ঢাকার একটি দৈনিক ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় পাঠিয়ে দেই। তারপর অপেক্ষা। এক মাস পেরিয়ে গেল।

আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রথমে গল্পটি ছাপা হয়ে গেল রাজশাহীর মাসিক পত্রিকায়। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। গল্প ছাপা হয়েছে, বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। দু মাস তো হবেই। একদিন ক্লাসের বিরতিতে এক বন্ধু বলল, এই দোস্ত, তোর তো গল্প বেরিয়েছে সাপ্তাহিক রোববারে। আমি বললাম, সত্যি? আমার তখনো বিশ্বাস হয়নি। মনে হয়েছিল, রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকায় না হয় গল্পটা ছাপা হয়েছে, ঢাকার কাগজে ছাপা হওয়া সহজ নয়। বন্ধুটি বলল, নতুন যে সংখ্যাটি বাজারে এসেছে, সেখানে তোর গল্প আছে। শেষ ক্লাসের পর ইউনিভার্সিটির বাসে চেপে সাহেববাজারে গিয়ে ‘বইবীথি’ নামের এক পত্রিকার দোকান থেকে ‘রোববার’ পত্রিকাটা বের করি। সূচিতে লেখা ছিল গল্প অমুক পৃষ্ঠায়। লেখকের নাম বা গল্পের নাম ছিল না। আমার এখনো মনে পড়ে, রোববারের ওই সংখ্যাটি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখের। ভেতরের পাতায় ঠিকই আমার গল্পটি ছাপা হয়েছে। আমি তিন কপি পত্রিকা কিনে নিয়ে মেসে ফিরলাম।

কী যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে আমার মন ভরে গেল! আমার বুকের হৃদস্পন্দন যেন নিজেই শুনতে পাচ্ছিলাম। মেসে ফিরে পত্রিকাটা খুলে দেখি। আবার দেখি। আর একবার দেখি। এর কয়েকদিন পরেই গল্পটি ছাপা হলো দৈনিক ‘সংবাদে’। গল্পটির নাম ছিল ‘কলমবন্ধু’। আমার আত্মবিশ্বাস ও লেখার প্রতি আগ্রহটা বেড়ে গেল। এরপর ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় আমার একটা করে গল্প ছাপা হতে লাগলো। 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপন য স ল খ র উপন য স র র জ বন র জন য আল ড় ত কলক ত র একট প রথম আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

টাইম ম্যাগাজিনের কভারে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ইলন মাস্ক

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে ইলন মাস্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে- এমন বিষয় নিয়ে চলছে বিতর্ক। এমন সময়ে টাইম ম্যাগাজিনের কভারে হোয়াইট হাউসের রেজলুট ডেস্কের পেছনে বসানো হয়েছে ইলন মাস্ককে। 

এমন উসকানিমূলক ছবি রাগান্বিত করতে পারে ট্রাম্পকে বলে এক প্রতিবেদনে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজ এ তথ্য জানায়।

‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’ (ডিওজিই) এর প্রধান হিসেবে মাস্ককে যে নজিরবিহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা এখন আদালতে মামলার কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। তবে তার নীতি বাস্তবায়নের ফলে লাখ লাখ সরকারি কর্মী চাকরির অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

টাইম ম্যাগাজিনের কভারে মাস্কের উপস্থিতি ট্রাম্পের জন্য বেদনার হতে পারে, কারণ তিনি বরাবরই এই ম্যাগাজিনের কভার পেজকে সম্মানের প্রতীক হিসেবে দেখেন।

এর আগে, ২০২৪ সালে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হওয়া ট্রাম্প ইতিপূর্বে তার নিজের নামে একটি জাল টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ বানানোর জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন।

ঢাকা/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ