দেশের হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি রয়েছে। কাজেই দেশে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে সঠিক ব্যক্তিকে কাজের সুযোগ না দেওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ একটি ধারা বাতিল ও ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের সাত দফা দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস। এতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মূল প্রবন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টসের যুগ্ম আহবায়ক ফাতেমা খান মজলিস বলেন, দেশজুড়ে ৬৩৯টি সরকারি হাসপাতাল, ৫ হাজার ৫৭৭টি বেসরকারি হাসপাতাল, ১০ হাজার ৭২৭টি রোগনির্ণয় কেন্দ্র এবং ১৪০টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। অথচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে একজনও প্রাণরসায়নবিদ নেই। প্রাণরসায়নবিদদের হয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ করেন টেকনিশিয়ানরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ২০ হাজার প্রাণরসায়নবিদ দরকার। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকগুলোয় রোগনির্ণয়ে কাজ করেন মাত্র ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণরসায়নবিদ। ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি নিয়ে চলছে দেশের হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলো।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হোসেইন উদ্দিন শেখর বলেন, নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতার কারণে ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে’ প্রাণরসায়নবিদদের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রোগনির্ণয়ের কিছু কাজ আছে, সেগুলো শুধু প্রাণরসায়নবিদেরা করতে পারেন।

প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ ধারা ৯–এর ৪ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সব ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি রিপোর্টে বিএমডিসি রেজিস্টার্ড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।’ মূল উপস্থাপকসহ প্রায় সব আলোচক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ধারা বৈষম্যমূলক, অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক।

আরও পড়ুনরোগনির্ণয়ে বায়োকেমিস্টদের অবদান সরকারিভাবে উপেক্ষিত২৩ জানুয়ারি ২০২৫

অনলাইনে আলোচনায় যুক্ত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিটিকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্র ও মলিকুলার বায়োলজির শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ দেশে মেধা পাচার হওয়ার প্রধান কারণ কাজ করতে না দেওয়া। আমার জায়গা আমাকে দেন। আপনারা নিজেদের জায়গায় কাজ করুন।’

আয়োজকদের সাত দফা দাবির মধ্যে আছে—স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন থেকে বিতর্কিত ধারা বাদ, প্রাণরসায়নবিদদের জন্য নীতিমালা তৈরি, সব ল্যাবরেটরিকে অ্যাক্রিডিটেশনের আওতায় আনা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রাণরাসায়নবিদ ও ল্যাবরেটরি সায়েন্টিস্ট নিয়োগ, জেলা পর্যায়ে এ ধরনের পদ সৃষ্টি, নীতি নির্ধারণে প্রাণরসায়নবিদ অন্তর্ভুক্ত করা এবং অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে পদোন্নতির পথ খোলা রাখা।

আরও পড়ুনমানুষের রোগও নির্ণয় করতে পারে চ্যাটজিপিটি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয় সক্ষমতা ও যোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাব স্বীকৃত। এসব প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি পরিচালনা করেন প্রাণরসায়নবিদেরা। দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিয়ার রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুনঅনলাইনে রোগনির্ণয়: ‘ডা.

গুগল’ থেকে সাবধান৩১ অক্টোবর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য ক জ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৬৪ জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি, ১১ ফেব্রুয়ারি শুরু

দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত মোকাবিলাসহ বেশকিছু দাবিতে দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে, যেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “৬৪ জেলায় বিএনপি সমাবেশ করবে। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়ে রমজান শুরুর আগেই শেষ হবে। জেলায় জেলায় সভা-সমাবেশের পর পর্যায়ক্রমে মহানগর ও বিভাগীয় সদরে সভা-সমাবেশ হবে।”

আরো পড়ুন:

আবু নাসের
যখন জনগণের মূল্য থাকে না, তখন সরকার স্বৈরাচার হয় 

অটোরিকশার গতিরোধ করে যুবদল কর্মীকে গুলি

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে পর্যায়ক্রমে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা/নাজমুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ