৪ থেকে ৬ জন ক্রিকেটার ধরে রাখার পক্ষে তামিম
Published: 8th, February 2025 GMT
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সমর্থকগোষ্ঠী কেমন তা বুঝতে সদ্য সমাপ্ত বিগ ব্যাশ লিগের (বিবিএল) দিকে নজর দেওয়া যাক। বিবিএল ২০২৫ মৌসুমে হোবার্ট হ্যারিকেনসকে চ্যাম্পিয়ন করেন মিচেল ওয়েন নামের এক ২৩ বছরের তরুণ। দারুণ শতকে ম্যান অব দা ফাইনাল হওয়ার পরই মিচেলের ১০ বছর পুরোনো একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে ওঠে। তাতে দেখা যায় হোবার্ট হ্যারিকেনসের জার্সি গায়ে গ্যালারিতে বসে আছে ১৩ বছরের উচ্ছ্বসিত ওয়েন। অর্থাৎ ক্ষুদে ভক্ত থেকে সেই দলের ক্রিকেটার। একাদশ আসরে এসেও ঠিক এই জায়গাটাতে একদমই পিছিয়ে বিপিএল। বরিশালকে টানা দ্বিতীয় শিরোপা এনে দিয়ে তামিম এবার সে দিকে নজর দিতে বললেন বিসিবিকে।
আইপিএলে দেখা যায় মহেন্দ্র সিং ধোনী মানেই চেন্নাই সুপার কিংস, মুম্বাইয়ের নাম নিলে সবার আগে আসবে রোহিত শর্মা। অন্যদিকে রয়েল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালর ও বিরাট কোহলি তো সমার্থক। সমর্থকরা জানেন যে কিছু ক্রিকেটার সবসময়ই খেলবে তাদের হয়ে। অথচ প্রতি মৌসুমে বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ও নামে বদল আসাটা চিরন্তনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। ক্রিকেটাররা এই মৌসুমে রাজধানীর দলে তো পরের মৌসুমে চায়ের দেশের দলে। থিতু হওয়ার সুযোগই নেই। এই ব্যাপারগুলোর দিকে দৃষতি দিতে বললেন তামিম। দেশ সেরা এই ওপেনারের চাওয়া, প্রতি আসরে প্রতি দলে ৪ থেকে ৬ জন ক্রিকেটার ধরে রাখার নিয়ম যেন রাখা হয় বিপিএলে।
২০২২ সালে বিসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোকে তিন বছরের জন্য বিপিএলের মালিকানা দিয়েছিল, যা এবার শেষ হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে আগামী মৌসুম থেকে বিসিবি সেই সময় বাড়িয়ে পাঁচ বছরে নেওয়ার কথা ভাবছে। তবে দুশিন্তার ব্যাপার হচ্ছে ক্রিকেটারদের পরিবর্তন হওয়াটা অবধারিত। গত দুই আসরে প্রতিটি দল সর্বোচ্চ তিনজন ক্রিকেটারকে তাদের স্কোয়াডে ধরে রাখতে পারত। ফলে টানা দুই শিরোপা জয়ী বরিশাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে ছাড়তে বাধ্য হবে। ক্রিকেটার যেই হোক, একই দলে নিয়মিত খেলাটা জরুরী।
আরো পড়ুন:
তামিমের কাছে গত আসরের শিরোপাটাই বেশি তৃপ্তির
মিরাজ ম্যান অব দ্য বিপিএল, কে জিতলেন কোন পুরস্কার
ফাইনালের পর সংবাদ সম্মেলনে এই ব্যাপারে তামিম বলেন, “এত কষ্ট করে একটা সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করেছি আমরা। এই জিনিসটা কিন্তু প্রথম বিপিএল থেকে সবাই চাইত যে সব ফ্র্যাঞ্চাইজির একটা সমর্থকগোষ্ঠি হোক। আইপিএলের উদাহরণ একটা দিই। সেখানে নিয়ম কখনও পরিবর্তন হয় না। কোর ক্রিকেটাররা কিন্তু একই দলে থেকে যায়। ঠিক আছে তিন বছরের একটা চক্র শেষ হয়ে গেছে। পাঁচ বছরের একটা চক্র আসবে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে তাদের কোর ক্রিকেটারগুলো ধরে রাখার একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। আপনি যদি মাত্র একজনকে ধরে রাখেন তাহলে তো এত দিন ধরে যে (সমর্থকগোষ্ঠী) গড়েছেন, সব শেষ হয়ে যাবে। তাই যদি ৫টা, ৬টা বা ৪টা.
মালিকানা বদলালেও যেন ক্রিকেটাররা নিজ দলে থেকে যাওয়ার সুযোগ পান সেই ব্যাপারেও পরামর্শ দিলেন তামিম, “এখন যেটা সমস্যা হয়, মালিকপক্ষ বদলে যায়। উদাহরণ ধরা যাক, চিটাগং এবার এক মালিক, পরের বছর আরেক মালিক। কিন্তু এটাতেও দলটা তো একই থাকছে। ক্রিকেটাররা তো একই থাকছে। তাই মালিক পরিবর্তন হোক বা না হোক, অন্য কেউ আসুক বা না আসুক, কিন্তু কেউ যদি চিটাগংয়ের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে তাহলে তাকে স্কোয়াডে ধরে রাখার অনুমতিটা রাখা উচিত। তাদের যদি ইচ্ছে হয় যে ধরে রাখবে না, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। শুধুমাত্র মালিক বদলে যাওয়ার কারণে অন্য দলগুলো ভুগবে, এটা ঠিক নয়। তাই আমার মনে হয়, অন্তত যদি ৬ জন ক্রিকেটারকে ধরে রাখার সুযোগ যদি দেয়, তাহলে এই ধরনের ফ্যানবেইজ, আপনারা যা দেখছেন, এটা আরও বড় হবে।”
ঢাকা/নাভিদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ত ম ম ইকব ল জন ক র ক ট র ফ র য ঞ চ ইজ ব প এল বছর র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা সংকট ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। প্রায় সাত বছরের মাথায় তাঁর দ্বিতীয় দফা সফরে মূলত রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকারের প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব শুক্রবার ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তাঁরা দুজনে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে একসঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন।
গুতেরেসের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তিনি (আন্তোনিও গুতেরেস) রমজান মাসে সংহতি জানাতে বাংলাদেশে আসছেন। প্রতিবছর তিনি রমজান মাসে মুসলিম দেশগুলোতে সফর করে থাকেন। এই সফরে তিনি রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয়টিও উঠে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে সংস্কার, নির্বাচন এবং জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাংলাদেশিদের পাশে থেকেছে। ফলে জাতিসংঘের সহযোগিতা ও সংহতি চলবে। কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী, তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘকে জানাবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব সরাসরি হোটেলে যাবেন।
পরদিন সকালে মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে তাঁর সঙ্গে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈঠক শেষে একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে যাবেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁরা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে যাবেন।
রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘের কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবেন। শরণার্থীশিবির পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা ও পবিত্র রমজানের প্রতি সংহতি জানিয়ে সেখানেই জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা।
আগামী শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে যাবেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এরপর দুপুরে হোটেলে ফিরে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন আন্তোনিও গুতেরেস। এ ছাড়া সেখানে বাংলাদেশে যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।
এদিন বিকেলে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। পরদিন রোববার সকালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের।
রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহায়তা প্রত্যাশাগৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমারের রাখাইনের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির বাংলাদেশকে জানিয়েছে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা না করা গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত অন্য জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে জাতিসংঘ।
তবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমন অনুরোধকে এখনো ইতিবাচকভাবে দেখছে না। নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করছে।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটিতে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের পণ্য প্রবেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। কোনো আয়ের উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে। জরুরি সেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মার্চ অথবা আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ইতিমধ্যে রাখাইনের পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বৈশ্বিক সংস্থাটি বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে চায়। ইতিমধ্যে কক্সবাজার হয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে সহায়তার একটি চালান সেখানে পাঠিয়েছে জাতিসংঘ।
তবে দ্বিতীয় চালান পাঠাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে সংস্থাটি। দ্বিতীয় চালানটি আর বাংলাদেশ অতিক্রম করতে দেয়নি সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই রাখাইনে সহায়তা দিতে বাংলাদেশকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সীমান্ত দিয়ে পণ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি সরবরাহব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।