Risingbd:
2025-02-08@13:54:25 GMT

বৃত্তের বাইরের ভাবনায় বইমেলা 

Published: 8th, February 2025 GMT

বৃত্তের বাইরের ভাবনায় বইমেলা 

অমর একুশে বইমেলা আজ প্রসাদগুণেই আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের মাইল ফলক। নানামাত্রিক ব্যঞ্জনে বইমেলার ব্যাপ্তি বেড়েছে। দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীতে আমাদের চিরচেনা বইমেলার রং ও রূপ বদলাচ্ছে। আমরাও এই অভিযোজনে নতুন মাত্রিকতা নিয়ে বইমেলাকে নবআঙ্গিকে ভিন্নরূপে সাজাতে চাচ্ছি। গত শতাব্দির নব্বই-এর দশকের বাংলা একাডেমির পুকুরপাড়ে ভিড় ঠেলা বইমেলা- এ প্রজন্মের কাছে প্রার্থিত নয়। তখন যে অনুষঙ্গগুলো বইমেলাতে ক্রিয়াশীল ছিলো এখন সেসবের অনেকটা যুগ চাহিদার প্রয়োজনে বিলীন। প্রয়োজনের তাগিদেই যুক্ত হচ্ছে নতুন বিষয়।

সপ্তদশ শতকের কবি আব্দুল হাকিম বলেছিলেন ‘যেই দেশে সেই বাক্য কহে নরগণ সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।’ পরিতাপের বিষয় আমাদের শাসকরা কিংবা কর্তৃপক্ষ জনমানুষের ভাষা বেশিরভাগ সময় বুঝে না। এ কারণে সেবাদাতা ও গৃহিতার মধ্যে একটা বৈরিতা থাকে। উভয়ের প্রতি সর্ম্পকের বৈপরীত্য লক্ষ্যনীয়। এ ক্ষেত্রে সহনমাত্রা কম ও পরস্পরকে আমলে নেওয়ার সমস্যাও প্রকট। অমর একুশে বইমেলায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এ বিষয় থেকে বিযুক্ত নয়। তবে বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমির প্রতি অনুযোগ সর্বাংশে যৌক্তিক নয়। আমার মনে হয় বইমেলার অংশীজন হিসেবে লেখক, প্রকাশক পাঠকদের প্রতিও বাংলা একাডেমির বইমেলার দায় ও দায়িত্ব নিয়ে বলার আছে। 

সে স্পেস বাংলা একাডেমিকে দেওয়া হয় না। বইমেলার ব্যবস্থাপনা ও মেলা পরিকল্পনে দর্শনের দারিদ্র্য  বুলেট পয়েন্টে লিপিবদ্ধ করা যাবে। কিন্তু পাশাপাশি বইমেলাকে সার্বিক ক্যানভাসে এগিয়ে নিতে অংশীজনদের যুথবদ্ধ প্রয়াস কতটুকু- সে ব্যারোমিটারের পারদের পরখ আমরা করি না! 

এখন পরস্পরকে দোষের বাণ নিক্ষেপ না করে সবাই মিলে বইমেলাকে নবআঙ্গিকে ভিন্ন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার সময়। প্রায় দুই যুগ বইমেলার সাথে সংযুক্ত থেকে একটা বিষয় বারবার মনে হয় বইমেলা যেন তোতা পাখির সংস্কৃতিতে আবব্ধ। মেলা আসলেই সেই গতানুগতিক আয়োজনের ব্যবস্থাপনা আর অংশীজনদের প্রবেশ গেটের সমস্যা, ধুলোর সমস্যা, অল্প পরিমান ওয়াশ রুম নিয়ে আলোচনা, স্টল বিন্যাসের সমস্যা ইত্যাদি নিয়েই মুখরিত থাকি আমরা। বাঙালি সংস্কৃতির উৎস ভূমি তথা মিলনতীর্থ নিয়ে আমাদের আবেগের মাখামাখি থাকলেও বিশ্বময় বাংলা ভাষাভাষীদের সাথে যোগসূত্রের প্রয়াস কতটুকু? আমরা যেন মেলার গৎবাঁধা কুণ্ডলির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। লেখকের সাথে দেখা হলে আপনার মেলাতে কয়টি বই আসলো, প্রকাশকের সাথে দেখা হলে বিক্রি কেমন- আলোচনা যেন এই পরিমণ্ডলে থিতু থাকে। কিন্তু পরিমানগত উৎকর্ষের সাথে গুণগত নিয়ে কতটা ভাবা হয়! কিংবা শুধু বিক্রির মাধ্যমেই পাঠকের সাথে সংযোগ তৈরি হয় না- আরো নানা মাত্রিকতা আছে। এসব বিষয় নিয়ে আয়োজক বাংলা একাডেমি কিংবা অংশীজন লেখক, প্রকাশক, পাঠক কতটুকু ভাবে?

উদাহরণ টেনে বলা যায়, বইমেলার সময় যে আলোচনার আয়োজন করা হয় তার কতটা বই, প্রকাশনা, লেখক পাঠক বিষয়ক। সারাবছর আলোচনা অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমিকে একঘেয়েমি করে রাখে। তারপর সেই একই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে মেলার উৎকর্ষের কাজে আসতে পারে এমন আলোচনার আয়োজন করা যায়। এরূপ অনেক বিষয় সংযুক্ত করে বইমেলাকে অংশীজনদের কাছে লোকপ্রিয় করা যায়। বইমেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য আর্ন্তজাতিক যোগসূত্র জরুরি। এক্ষেত্রে অংশীজনদের কাঠামোগত, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি বাংলা একাডেমির তথ্য প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক ইউনিটের প্রয়োজনীয় তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে। বইমেলাতে সর্বাধিক বই উৎপাদন করে সব বই বিক্রি করার প্রবণতার সাথে জরুরি সারাবছর যেন বই বিক্রির ব্যবস্থা জারি থাকে সে উদ্যোগ নেওয়া। শুধু বিক্রি নয়, বইমনস্ক সমাজ সৃজনে মেলার মাস যেন সারাবছরের প্রভাবক হয় সে বিষয়টি মগজে থাকা প্রয়োজন। কাঙ্খিত পাঠক যেন মেলা পরবর্তী সময়ে বাস্তব ক্রেতায় পরিণত হয় সেই কর্ম কৌশলের আঁতুরঘর হতে হবে বইমেলা।

আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলা একাডেমি ভিন্ন সংশিষ্ট কোনো পক্ষের বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি এখনো গড়ে ওঠেনি। সঙ্গত কারণে বাংলা একাডেমির দোষের ফিরিস্তি কমিয়ে বইমেলায় ক্রিয়াশীল বিষয়ে মনে দিলে আখেরে ফলাফল ভালো হবে। বাংলা একাডেমি নিয়ে আমাদের আশার ভেলাও বড় বিস্তৃত। কারণ বাংলা একাডেমির অঙ্কুরলগ্নে বহুত্ববাদী ও বৌদ্ধিক চিন্তন ছিলো প্রতিষ্ঠানের দার্শনিক পরিকল্পণে। মূলত ১৯৮৪ সাল থেকে মেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ প্রস্তত ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি বইমেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রার সূচনা করে। ১৯৮৪ সালের বইমেলার স্লোগান ছিলো:
‘একুশের স্বপ্ন: মুক্তি
দারিদ্র্য থেকে মুক্তি
অশিক্ষা থেকে মুক্তি
জড়তা থেকে মুক্তি।’

বইমেলা আপন লয়ে এগুতে থাকে। একাডেমির স্লোগান ‘জাতির মননের প্রতীক’ হতে বিস্তৃত আঙ্গিকে দাঁড়ায় ‘বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষের প্রতীক’। বইমেলাকে সাথে নিয়ে এগুয় বাংলা একাডেমি। তবে এগিয়ে যাওয়ার গতি ও পরিসর কখনই হাততালি দেওয়ার মতো ছিলো না। ২০১৪ সালে বইমেলা বাংলা একাডেমির ছোট আঙ্গিনা ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিস্তৃত হয়। বইমেলা আয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছুরি-কাঁচি চলতে থাকে। কিন্তু বইমেলা নিয়ে একাডেমির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লাগসই পরিকল্পন কাঙ্খিত মাত্রায় দৃশ্যমান হয়নি। বইমেলার উৎকর্ষের নানা ফিরিস্তি দেয়া যাবে। যেমন-২০১৪ সালে যখন বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্পসারিত হয় তখন বড় পরিসর কমবেশি পাঁচলক্ষ বর্গফুট, মোট ৫৩৪টি ইউনিট বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। ২০২৫ সালে এসে ইউনিটের সংখ্যা হয়েছে ১০৮৪টি, আয়োতন কমবেশি পনেরো লক্ষ বর্গফুট। সাথে ৩৭টি প্যাভিলিয়ন।

প্রশ্ন মাথায় উঁকি দেয়, প্রকাশনায় এতটা বিপ্লব ঘটে গেলো অথচ যথার্থ অনুধাবন করতে পারলাম না! তবে এ প্রশ্ন সমাসীন এই যে বিস্তৃতি এর কতটা মৌলিক, কতটা দেখানিপনা, কিংবা কতটুকু চাপ-তাপের ফল। এ কথা মানতে হবে সরকারি উন্নয়নের অনেকটা জুরে আছে ইট, বালি, পাথর। সোজাসাপটা বললে সরকারি উন্নয়নে দৃশ্যমান জিনিস অগ্ররাধিকার পায়। ‘চেতনার জাগরণে বই’ এরূপ মনমোহনী স্লোগান সরকারি বরাদ্দকে আকৃষ্ট করতে পারে না। এসব কারণে বইমেলার বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তবে অর্থের সাথে চিন্তা, পরিকল্পনা ও দর্শনের যে দারিদ্র্য সংযুক্ত পক্ষগুলোর রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। এসব বিষয়ে বাংলা একাডেমিও কালেভদ্রে খানিক বলেছে।

২০২২-বইমেলার সমাপনী বক্তব্যে বাংলা একাডেমির তৎকালিন মহাপরিচালক বইমেলার স্থায়ী কাঠামো, তহবিল ও মেলা সচিবালয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এবং সদস্য সচিব বইমেলার সীমাদ্ধতার কথা বলতে-কপিরাইট টাস্কফোর্সের দুর্বলতা, যত্রতত্র খাবার দোকান, স্টল বিন্যাস কাঙ্খিত মানের নয় বলে স্বীকার করেন। [সূত্র: বইমেলা সদস্য সচিবের প্রতিবেদন ২০২২]

বইমেলাতে নিয়ম ভাঙা যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর কিছু প্রকাশনাকে সতর্ক নোটিশ, কালো তালিকাভুক্ত করা হলেও পরবর্তী বছরে অধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অঙ্গীকার থাকলেও প্রতিপালন হয় না। এতে নিয়ম ভঙ্গকারি প্রতিষ্ঠান বীরবিক্রমে অপকর্ম চালিয়ে যায়। এসব বিষয় বইমেলার সৌন্দর্যে বিঘ্ন ঘটায়। বাংলা একাডেমির বইমেলা আয়োজনে সারাবছর কার্যক্রম পরিচালনায় নির্দিষ্ট সেল নেই। বিভিন্ন বিভাগ থেকে লোক সংগ্রহ করে কাজ চালানো হলেও এদের মেলা বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা ও দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। সর্বমহল থেকে এ বিষয়ে বারবার বলা সত্তেও একাডেমির বিষয়টির প্রতি আন্তরিক উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি মেলার অংশীজন লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মেলাসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি কাম্যমাত্রার নয়। বাংলা একাডেমির বইমেলার জন্য অংশীজনদের দীর্ঘমেয়াদী অর্ন্তভূক্তিমূলক সংযোগ জরুরি।

বইমেলার জন্য চাই সর্বাগ্রে একটি সুষম স্থায়ী মেলার মাঠ। যেখানে বাতাস থেকে বৃষ্টির পানির নিষ্কাষণের ব্যবস্থা থাকা চাই। এরকম শতক চিন্তার যোজনা প্রয়োজন। দেশের জেন-জি প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রিন্টেড বইয়ের সাথে ই-বুক, ভিডিও টকিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সংযোগ ঘটাতে হবে। বইমেলার বর্হিসংযোগটা জরুরি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বইমেলাকে শুধু পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের ঘোরটোপে থিতু হলে চলবে না। বাংলা ভাষাভাষি বিশ্ববাসীর জন্য বইমেলার সংযোগ প্রয়োজন। অমর একুশে বইমেলাকে বহুজাতিক, বহুভাষিক মেলায় রূপান্তর না করলেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সহনশীল উপযোগী হওয়া সময়ের দাবি। 

বাংলা একাডেমির প্রথম পরিচালক ড.

এনামুল হক একাডেমিকে জাতির স্বপ্নসৌধরূপে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সবিশেষ ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একাডেমির জন্য প্রবর্তিত আইনে বলা- একাডেমির কার্যাবলির প্রথমেই উৎকীর্ণ-জাতীর আশা আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন লালন ও প্রসার সাধন। [সূত্র: বাংলা একাডেমি আইন, ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩/০৭ আশ্বিন, ১৪২০]

আইনে বাংলা একাডেমির কার্যাবলির ২২ অনুচ্ছেদ থাকলেও অমর একুশে বইমেলার করার জন্য একাডেমির কোনো বিধিগত বাধ্য-বাধকতা নেই। ১৩নং অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা বর্হিবিশ্বে প্রচার ও পরিচিতি করিবার জন্য বিদেশে সেমিনার ও বইমেলার আয়োজন করা।’ বাংলা একাডেমি এ দায়িত্ব কতটুকু পারঙ্গমতায় এ যাবত অর্জন করেছে সেই বার্তা বোধকরি সুখকর নয়। বাংলা একাডেমিকে ইতিবাচক কাজের সাথে নেতিবাচক বিষয় টেনে আঙ্গুল তোলা যাবে। যেমন কেন আইনে বলা থাকলেও এখনো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সাথে কর্মযোগ গড়া হয়নি বাংলা একাডেমির- এরকম অনেক বিষয়। বাংলা একাডেমিকে স্বায়ত্বশাসিত বা বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যাই বলি এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক, আইনি, সাংগঠনিক নানা সীমাবদ্ধতা আছে। বইমেলার উৎকর্ষের পরিকাঠামোতে যত পরিকল্পনাই থাকুক কেন মনে রাখতে হবে বইমেলার মূল আধেয়গত বিষয় হলো অমর একুশের চেতনা। এই চেতনাগত দার্শনিক ভিতের মাঝেই বইমেলার উৎকর্ষের তাগিদ আছে। একুশের চেতনাই ছিলো বাধাবিঘ্ন অস্বীকার করে নিজেদের কথা বলা, নতুন কথা বলা। এ বলতে গেলেই কর্ম ও চিন্তার বৈচিত্রের ও ভিন্নতার উপস্থিতি স্বীকৃত। এই বহুত্ববাদের উৎকর্ষ ভাবনাকে সময়োপয়েগী অভিযোজন ঘটিয়ে বইমেলাকে এগিয়ে নিতে হবে। 

বাংলা একাডেমির প্রতি জনসমাজে যে সিম্বলিক ভ্যালু আছে সেটা কাজে লাগাতে হবে। বই মেলাতে অনুরোধের ঢেকি গিলে স্টল বরাদ্দ ও স্টল পরিসর বৃদ্ধিতে রাশ টানা গেলে পরিবেশ অনেক কাঙ্খিতমানের হবে। একই সাথে ২০২৫ সালের বইমেলা নিয়ে নানা উদ্বেগ ও মিথস্ক্রি রয়েছে। সঙ্গত কারণেই বইমেলার আয়োজনে বাংলা একাডেমির শক্তির সাথে অন্য অংশীজনদের সংযোগ জরুরি।

লেখক প্রকাশকদের দিক থেকে শুধু বাণিজ্য সফলতার নিক্তিতে বইমেলাকে পরিমাপ না করে মানবিক সূচকে বইমেলার ভূমিকা কতটুকু ও লেখক প্রকাশকদের এক্ষেত্রে শেয়ার কতটুকু তা ভেবে দেখতে হবে। মেলাসংশিষ্টরা পরস্পরকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে একীভূত হয়ে কর্মযোগ ঘটালে বসন্তকালীন অমর একুশে বইমেলাতে নব বসন্তের সমীরণের ছোঁয়ার দ্বার এখনো উন্মুক্ত।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক ড ম র ব এক ড ম র প বইম ল র ব র ব যবস থ অ শ জনদ র বইম ল র স এক ড ম ক স র বছর র বইম ল য় বইম ল বইম ল ত বইম ল ক র সমস য থ কল ও আম দ র অ শ জন র জন য কতট ক

এছাড়াও পড়ুন:

বৃত্তের বাইরের ভাবনায় বইমেলা 

অমর একুশে বইমেলা আজ প্রসাদগুণেই আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের মাইল ফলক। নানামাত্রিক ব্যঞ্জনে বইমেলার ব্যাপ্তি বেড়েছে। দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীতে আমাদের চিরচেনা বইমেলার রং ও রূপ বদলাচ্ছে। আমরাও এই অভিযোজনে নতুন মাত্রিকতা নিয়ে বইমেলাকে নবআঙ্গিকে ভিন্নরূপে সাজাতে চাচ্ছি। গত শতাব্দির নব্বই-এর দশকের বাংলা একাডেমির পুকুরপাড়ে ভিড় ঠেলা বইমেলা- এ প্রজন্মের কাছে প্রার্থিত নয়। তখন যে অনুষঙ্গগুলো বইমেলাতে ক্রিয়াশীল ছিলো এখন সেসবের অনেকটা যুগ চাহিদার প্রয়োজনে বিলীন। প্রয়োজনের তাগিদেই যুক্ত হচ্ছে নতুন বিষয়।

সপ্তদশ শতকের কবি আব্দুল হাকিম বলেছিলেন ‘যেই দেশে সেই বাক্য কহে নরগণ সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।’ পরিতাপের বিষয় আমাদের শাসকরা কিংবা কর্তৃপক্ষ জনমানুষের ভাষা বেশিরভাগ সময় বুঝে না। এ কারণে সেবাদাতা ও গৃহিতার মধ্যে একটা বৈরিতা থাকে। উভয়ের প্রতি সর্ম্পকের বৈপরীত্য লক্ষ্যনীয়। এ ক্ষেত্রে সহনমাত্রা কম ও পরস্পরকে আমলে নেওয়ার সমস্যাও প্রকট। অমর একুশে বইমেলায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এ বিষয় থেকে বিযুক্ত নয়। তবে বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমির প্রতি অনুযোগ সর্বাংশে যৌক্তিক নয়। আমার মনে হয় বইমেলার অংশীজন হিসেবে লেখক, প্রকাশক পাঠকদের প্রতিও বাংলা একাডেমির বইমেলার দায় ও দায়িত্ব নিয়ে বলার আছে। 

সে স্পেস বাংলা একাডেমিকে দেওয়া হয় না। বইমেলার ব্যবস্থাপনা ও মেলা পরিকল্পনে দর্শনের দারিদ্র্য  বুলেট পয়েন্টে লিপিবদ্ধ করা যাবে। কিন্তু পাশাপাশি বইমেলাকে সার্বিক ক্যানভাসে এগিয়ে নিতে অংশীজনদের যুথবদ্ধ প্রয়াস কতটুকু- সে ব্যারোমিটারের পারদের পরখ আমরা করি না! 

এখন পরস্পরকে দোষের বাণ নিক্ষেপ না করে সবাই মিলে বইমেলাকে নবআঙ্গিকে ভিন্ন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার সময়। প্রায় দুই যুগ বইমেলার সাথে সংযুক্ত থেকে একটা বিষয় বারবার মনে হয় বইমেলা যেন তোতা পাখির সংস্কৃতিতে আবব্ধ। মেলা আসলেই সেই গতানুগতিক আয়োজনের ব্যবস্থাপনা আর অংশীজনদের প্রবেশ গেটের সমস্যা, ধুলোর সমস্যা, অল্প পরিমান ওয়াশ রুম নিয়ে আলোচনা, স্টল বিন্যাসের সমস্যা ইত্যাদি নিয়েই মুখরিত থাকি আমরা। বাঙালি সংস্কৃতির উৎস ভূমি তথা মিলনতীর্থ নিয়ে আমাদের আবেগের মাখামাখি থাকলেও বিশ্বময় বাংলা ভাষাভাষীদের সাথে যোগসূত্রের প্রয়াস কতটুকু? আমরা যেন মেলার গৎবাঁধা কুণ্ডলির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। লেখকের সাথে দেখা হলে আপনার মেলাতে কয়টি বই আসলো, প্রকাশকের সাথে দেখা হলে বিক্রি কেমন- আলোচনা যেন এই পরিমণ্ডলে থিতু থাকে। কিন্তু পরিমানগত উৎকর্ষের সাথে গুণগত নিয়ে কতটা ভাবা হয়! কিংবা শুধু বিক্রির মাধ্যমেই পাঠকের সাথে সংযোগ তৈরি হয় না- আরো নানা মাত্রিকতা আছে। এসব বিষয় নিয়ে আয়োজক বাংলা একাডেমি কিংবা অংশীজন লেখক, প্রকাশক, পাঠক কতটুকু ভাবে?

উদাহরণ টেনে বলা যায়, বইমেলার সময় যে আলোচনার আয়োজন করা হয় তার কতটা বই, প্রকাশনা, লেখক পাঠক বিষয়ক। সারাবছর আলোচনা অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমিকে একঘেয়েমি করে রাখে। তারপর সেই একই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে মেলার উৎকর্ষের কাজে আসতে পারে এমন আলোচনার আয়োজন করা যায়। এরূপ অনেক বিষয় সংযুক্ত করে বইমেলাকে অংশীজনদের কাছে লোকপ্রিয় করা যায়। বইমেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য আর্ন্তজাতিক যোগসূত্র জরুরি। এক্ষেত্রে অংশীজনদের কাঠামোগত, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি বাংলা একাডেমির তথ্য প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক ইউনিটের প্রয়োজনীয় তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে। বইমেলাতে সর্বাধিক বই উৎপাদন করে সব বই বিক্রি করার প্রবণতার সাথে জরুরি সারাবছর যেন বই বিক্রির ব্যবস্থা জারি থাকে সে উদ্যোগ নেওয়া। শুধু বিক্রি নয়, বইমনস্ক সমাজ সৃজনে মেলার মাস যেন সারাবছরের প্রভাবক হয় সে বিষয়টি মগজে থাকা প্রয়োজন। কাঙ্খিত পাঠক যেন মেলা পরবর্তী সময়ে বাস্তব ক্রেতায় পরিণত হয় সেই কর্ম কৌশলের আঁতুরঘর হতে হবে বইমেলা।

আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলা একাডেমি ভিন্ন সংশিষ্ট কোনো পক্ষের বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি এখনো গড়ে ওঠেনি। সঙ্গত কারণে বাংলা একাডেমির দোষের ফিরিস্তি কমিয়ে বইমেলায় ক্রিয়াশীল বিষয়ে মনে দিলে আখেরে ফলাফল ভালো হবে। বাংলা একাডেমি নিয়ে আমাদের আশার ভেলাও বড় বিস্তৃত। কারণ বাংলা একাডেমির অঙ্কুরলগ্নে বহুত্ববাদী ও বৌদ্ধিক চিন্তন ছিলো প্রতিষ্ঠানের দার্শনিক পরিকল্পণে। মূলত ১৯৮৪ সাল থেকে মেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ প্রস্তত ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি বইমেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রার সূচনা করে। ১৯৮৪ সালের বইমেলার স্লোগান ছিলো:
‘একুশের স্বপ্ন: মুক্তি
দারিদ্র্য থেকে মুক্তি
অশিক্ষা থেকে মুক্তি
জড়তা থেকে মুক্তি।’

বইমেলা আপন লয়ে এগুতে থাকে। একাডেমির স্লোগান ‘জাতির মননের প্রতীক’ হতে বিস্তৃত আঙ্গিকে দাঁড়ায় ‘বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষের প্রতীক’। বইমেলাকে সাথে নিয়ে এগুয় বাংলা একাডেমি। তবে এগিয়ে যাওয়ার গতি ও পরিসর কখনই হাততালি দেওয়ার মতো ছিলো না। ২০১৪ সালে বইমেলা বাংলা একাডেমির ছোট আঙ্গিনা ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিস্তৃত হয়। বইমেলা আয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছুরি-কাঁচি চলতে থাকে। কিন্তু বইমেলা নিয়ে একাডেমির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লাগসই পরিকল্পন কাঙ্খিত মাত্রায় দৃশ্যমান হয়নি। বইমেলার উৎকর্ষের নানা ফিরিস্তি দেয়া যাবে। যেমন-২০১৪ সালে যখন বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্পসারিত হয় তখন বড় পরিসর কমবেশি পাঁচলক্ষ বর্গফুট, মোট ৫৩৪টি ইউনিট বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। ২০২৫ সালে এসে ইউনিটের সংখ্যা হয়েছে ১০৮৪টি, আয়োতন কমবেশি পনেরো লক্ষ বর্গফুট। সাথে ৩৭টি প্যাভিলিয়ন।

প্রশ্ন মাথায় উঁকি দেয়, প্রকাশনায় এতটা বিপ্লব ঘটে গেলো অথচ যথার্থ অনুধাবন করতে পারলাম না! তবে এ প্রশ্ন সমাসীন এই যে বিস্তৃতি এর কতটা মৌলিক, কতটা দেখানিপনা, কিংবা কতটুকু চাপ-তাপের ফল। এ কথা মানতে হবে সরকারি উন্নয়নের অনেকটা জুরে আছে ইট, বালি, পাথর। সোজাসাপটা বললে সরকারি উন্নয়নে দৃশ্যমান জিনিস অগ্ররাধিকার পায়। ‘চেতনার জাগরণে বই’ এরূপ মনমোহনী স্লোগান সরকারি বরাদ্দকে আকৃষ্ট করতে পারে না। এসব কারণে বইমেলার বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তবে অর্থের সাথে চিন্তা, পরিকল্পনা ও দর্শনের যে দারিদ্র্য সংযুক্ত পক্ষগুলোর রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। এসব বিষয়ে বাংলা একাডেমিও কালেভদ্রে খানিক বলেছে।

২০২২-বইমেলার সমাপনী বক্তব্যে বাংলা একাডেমির তৎকালিন মহাপরিচালক বইমেলার স্থায়ী কাঠামো, তহবিল ও মেলা সচিবালয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এবং সদস্য সচিব বইমেলার সীমাদ্ধতার কথা বলতে-কপিরাইট টাস্কফোর্সের দুর্বলতা, যত্রতত্র খাবার দোকান, স্টল বিন্যাস কাঙ্খিত মানের নয় বলে স্বীকার করেন। [সূত্র: বইমেলা সদস্য সচিবের প্রতিবেদন ২০২২]

বইমেলাতে নিয়ম ভাঙা যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর কিছু প্রকাশনাকে সতর্ক নোটিশ, কালো তালিকাভুক্ত করা হলেও পরবর্তী বছরে অধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অঙ্গীকার থাকলেও প্রতিপালন হয় না। এতে নিয়ম ভঙ্গকারি প্রতিষ্ঠান বীরবিক্রমে অপকর্ম চালিয়ে যায়। এসব বিষয় বইমেলার সৌন্দর্যে বিঘ্ন ঘটায়। বাংলা একাডেমির বইমেলা আয়োজনে সারাবছর কার্যক্রম পরিচালনায় নির্দিষ্ট সেল নেই। বিভিন্ন বিভাগ থেকে লোক সংগ্রহ করে কাজ চালানো হলেও এদের মেলা বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা ও দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। সর্বমহল থেকে এ বিষয়ে বারবার বলা সত্তেও একাডেমির বিষয়টির প্রতি আন্তরিক উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি মেলার অংশীজন লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মেলাসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি কাম্যমাত্রার নয়। বাংলা একাডেমির বইমেলার জন্য অংশীজনদের দীর্ঘমেয়াদী অর্ন্তভূক্তিমূলক সংযোগ জরুরি।

বইমেলার জন্য চাই সর্বাগ্রে একটি সুষম স্থায়ী মেলার মাঠ। যেখানে বাতাস থেকে বৃষ্টির পানির নিষ্কাষণের ব্যবস্থা থাকা চাই। এরকম শতক চিন্তার যোজনা প্রয়োজন। দেশের জেন-জি প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রিন্টেড বইয়ের সাথে ই-বুক, ভিডিও টকিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সংযোগ ঘটাতে হবে। বইমেলার বর্হিসংযোগটা জরুরি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বইমেলাকে শুধু পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের ঘোরটোপে থিতু হলে চলবে না। বাংলা ভাষাভাষি বিশ্ববাসীর জন্য বইমেলার সংযোগ প্রয়োজন। অমর একুশে বইমেলাকে বহুজাতিক, বহুভাষিক মেলায় রূপান্তর না করলেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সহনশীল উপযোগী হওয়া সময়ের দাবি। 

বাংলা একাডেমির প্রথম পরিচালক ড. এনামুল হক একাডেমিকে জাতির স্বপ্নসৌধরূপে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সবিশেষ ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একাডেমির জন্য প্রবর্তিত আইনে বলা- একাডেমির কার্যাবলির প্রথমেই উৎকীর্ণ-জাতীর আশা আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন লালন ও প্রসার সাধন। [সূত্র: বাংলা একাডেমি আইন, ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩/০৭ আশ্বিন, ১৪২০]

আইনে বাংলা একাডেমির কার্যাবলির ২২ অনুচ্ছেদ থাকলেও অমর একুশে বইমেলার করার জন্য একাডেমির কোনো বিধিগত বাধ্য-বাধকতা নেই। ১৩নং অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা বর্হিবিশ্বে প্রচার ও পরিচিতি করিবার জন্য বিদেশে সেমিনার ও বইমেলার আয়োজন করা।’ বাংলা একাডেমি এ দায়িত্ব কতটুকু পারঙ্গমতায় এ যাবত অর্জন করেছে সেই বার্তা বোধকরি সুখকর নয়। বাংলা একাডেমিকে ইতিবাচক কাজের সাথে নেতিবাচক বিষয় টেনে আঙ্গুল তোলা যাবে। যেমন কেন আইনে বলা থাকলেও এখনো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সাথে কর্মযোগ গড়া হয়নি বাংলা একাডেমির- এরকম অনেক বিষয়। বাংলা একাডেমিকে স্বায়ত্বশাসিত বা বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যাই বলি এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক, আইনি, সাংগঠনিক নানা সীমাবদ্ধতা আছে। বইমেলার উৎকর্ষের পরিকাঠামোতে যত পরিকল্পনাই থাকুক কেন মনে রাখতে হবে বইমেলার মূল আধেয়গত বিষয় হলো অমর একুশের চেতনা। এই চেতনাগত দার্শনিক ভিতের মাঝেই বইমেলার উৎকর্ষের তাগিদ আছে। একুশের চেতনাই ছিলো বাধাবিঘ্ন অস্বীকার করে নিজেদের কথা বলা, নতুন কথা বলা। এ বলতে গেলেই কর্ম ও চিন্তার বৈচিত্রের ও ভিন্নতার উপস্থিতি স্বীকৃত। এই বহুত্ববাদের উৎকর্ষ ভাবনাকে সময়োপয়েগী অভিযোজন ঘটিয়ে বইমেলাকে এগিয়ে নিতে হবে। 

বাংলা একাডেমির প্রতি জনসমাজে যে সিম্বলিক ভ্যালু আছে সেটা কাজে লাগাতে হবে। বই মেলাতে অনুরোধের ঢেকি গিলে স্টল বরাদ্দ ও স্টল পরিসর বৃদ্ধিতে রাশ টানা গেলে পরিবেশ অনেক কাঙ্খিতমানের হবে। একই সাথে ২০২৫ সালের বইমেলা নিয়ে নানা উদ্বেগ ও মিথস্ক্রি রয়েছে। সঙ্গত কারণেই বইমেলার আয়োজনে বাংলা একাডেমির শক্তির সাথে অন্য অংশীজনদের সংযোগ জরুরি।

লেখক প্রকাশকদের দিক থেকে শুধু বাণিজ্য সফলতার নিক্তিতে বইমেলাকে পরিমাপ না করে মানবিক সূচকে বইমেলার ভূমিকা কতটুকু ও লেখক প্রকাশকদের এক্ষেত্রে শেয়ার কতটুকু তা ভেবে দেখতে হবে। মেলাসংশিষ্টরা পরস্পরকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে একীভূত হয়ে কর্মযোগ ঘটালে বসন্তকালীন অমর একুশে বইমেলাতে নব বসন্তের সমীরণের ছোঁয়ার দ্বার এখনো উন্মুক্ত।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ