‘হামলাকারীদের রাতেই গ্রেপ্তার না করলে তাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে আমাদের’
Published: 8th, February 2025 GMT
গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের যদি রাতের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে আমাদেরকে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
শনিবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সারজিস আলম এসব কথা বলেন। দুপুরে জেলার রাজবাড়ি উপজেলায় প্রথমে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। পরে একটি মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
সারজিস বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অন্তর্বতীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়, এই পুলিশ যদি আজকে রাতের মধ্যে গতকালকের হামলার সঙ্গে জড়িতদের যদি গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে আমাদেরকে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা সংকট ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। প্রায় সাত বছরের মাথায় তাঁর দ্বিতীয় দফা সফরে মূলত রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকারের প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব শুক্রবার ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তাঁরা দুজনে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে একসঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন।
গুতেরেসের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তিনি (আন্তোনিও গুতেরেস) রমজান মাসে সংহতি জানাতে বাংলাদেশে আসছেন। প্রতিবছর তিনি রমজান মাসে মুসলিম দেশগুলোতে সফর করে থাকেন। এই সফরে তিনি রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয়টিও উঠে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে সংস্কার, নির্বাচন এবং জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাংলাদেশিদের পাশে থেকেছে। ফলে জাতিসংঘের সহযোগিতা ও সংহতি চলবে। কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী, তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘকে জানাবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব সরাসরি হোটেলে যাবেন।
পরদিন সকালে মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে তাঁর সঙ্গে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈঠক শেষে একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে যাবেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁরা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে যাবেন।
রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘের কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবেন। শরণার্থীশিবির পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা ও পবিত্র রমজানের প্রতি সংহতি জানিয়ে সেখানেই জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা।
আগামী শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে যাবেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এরপর দুপুরে হোটেলে ফিরে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন আন্তোনিও গুতেরেস। এ ছাড়া সেখানে বাংলাদেশে যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।
এদিন বিকেলে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। পরদিন রোববার সকালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের।
রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহায়তা প্রত্যাশাগৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমারের রাখাইনের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির বাংলাদেশকে জানিয়েছে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা না করা গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত অন্য জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে জাতিসংঘ।
তবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমন অনুরোধকে এখনো ইতিবাচকভাবে দেখছে না। নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করছে।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটিতে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের পণ্য প্রবেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। কোনো আয়ের উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে। জরুরি সেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মার্চ অথবা আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ইতিমধ্যে রাখাইনের পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বৈশ্বিক সংস্থাটি বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে চায়। ইতিমধ্যে কক্সবাজার হয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে সহায়তার একটি চালান সেখানে পাঠিয়েছে জাতিসংঘ।
তবে দ্বিতীয় চালান পাঠাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে সংস্থাটি। দ্বিতীয় চালানটি আর বাংলাদেশ অতিক্রম করতে দেয়নি সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই রাখাইনে সহায়তা দিতে বাংলাদেশকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সীমান্ত দিয়ে পণ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি সরবরাহব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।