কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের ওপার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আট বাংলাদেশিকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদের মধ্যে রুপচাঁদ মণ্ডল নামের এক জনকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্যদের ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে সীমান্ত থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের নদীয়া জেলার করিমপুর থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি গ্রামের মহসিন মণ্ডলের ছেলে রুপচাদ মণ্ডলকে আটক করে বিএসএফ। খবর পেয়ে বিজিবির কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) পক্ষ থেকে বিএসএফের ১৪৬ ব্যাটালিয়নকে চিঠি দেওয়াসহ কমান্ড্যান্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রুপচাদ মণ্ডলকে শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে দৌলতপুর সীমান্তের রামকৃষ্ণপুর বিওপির ১৫৫ এমপি এলাকা দিয়ে ফেরত পাঠায় বিএসএফ।

জিজ্ঞাসাবাদে রুপচাঁদ মণ্ডল বিজিবিকে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে অবৈধভাবে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কেরালা রাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন রুপচাঁদ। বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ফেরার পথে ১৪৬ ব্যাটালিয়ন বিএসএফের বাউসমারী ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে আটক করেন। এ সময় আরো সাত বাংলাদেশি ও তিন ভারতীয় দালালকেও আটক করে বিএসএফ। 

আটককৃত বাংলাদেশিরা হলেন—কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত গ্রামের মুনি ইসলামের ছেলে রনি আহমেদ, সোনাতলা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মহাবুল ইসলাম, একই গ্রামের ছাতার মণ্ডলের ছেলে স্বপন মণ্ডল, শমসের বিশ্বাসের ছেলে হামিদুল বিশ্বাস, জমসেদ বিশ্বাসের ছেলে জালাল বিশ্বাস, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের জুলফিকারের ছেলে লিটন হোসেন ফকির ও জয়পুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে রতন আলী। তারা ভারতের জলঙ্গি থানায় পুলিশ হেফাজতে আছেন। আটকের পর বিএসএফ সদস্যরা শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে রুপচাঁদ মণ্ডল জানিয়েছেন। 

বিজিবির কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব মুর্শেদ রহমান বলেছেন, “আটকের পর বিজিবির অনুরোধে রুপচাঁদ মণ্ডলকে ছেড়ে দিয়েছে বিএসএফ। রুপচাঁদ জানিয়েছেন, আরো ৭ বাংলাদেশি ও ৩ ভারতীয় দালালকে আটক করেছে বিএসএফ। তাদের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ লতপ র ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফের সদস্যদের পিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আহত অবস্থায় ওই যুবককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মুরাদুল ইসলাম ওরফে মুন্না (৪০) বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। সেজামুড়া গ্রামটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ভারতের বিএসএফ সদস্যরা মুরাদুলকে ডেকে ভারতের সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।

তবে নিহত মুরাদুলের পরিবারের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সম্পর্কে গতকাল রাতে ২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা নানা কথা বলতেই পারেন। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটি হলো ওই ব্যক্তি (মুরাদুল) দুই দেশের সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেন এবং সুস্থভাবেই বাংলাদেশে ফেরত আসেন। সীমান্তের বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাঁকে দেখতে পান। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। তবে ভারতের অভ্যন্তরে গিয়েছেন বলে স্বীকার করেননি। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি আহত হয়েছিলেন কি না বা কোনো চোরাকারবারির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে কি না জানা যায়নি।’

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ১৫০ থেকে ৩০০ গজের ভেতরে বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়ায় মুরাদুলের পরিবারের ফসলি জমি রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মুরাদুল সেখানেই বসবাস করেন। গতকাল দিনভর মুরাদুল নিজের লিচুগাছে পানি দেন। দুপুরে ঘরে ভাত খেয়ে জমি দেখতে যান মুরাদুল। বিকেল পাঁচটা পরও তিনি বাড়িতে ফেরেননি। স্ত্রী রত্না আক্তার বাড়ি থেকে বের হয়ে সীমান্তে খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি। একজন ফোন দিয়ে তাঁকে জানিয়েছিলেন, মুরাদুলকে বিএসএফের সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। সন্ধ্যার দিকে ফসলি জমিতে মুরাদুল পড়ে ছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে চম্পকনগর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

রত্না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় আমার স্বামী জানিয়েছেন, তাঁকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। বিএসএফ তাঁকে ফেরত দেওয়ার পর বিজিবির সদস্যরা তাঁকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যান। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি হত্যার বিচার চাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সফিউল্লাহ আরাফাত বলেন, গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে (মুরাদুল) হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ১০টা ২১ মিনিট সময়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।

২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘নিহত মুরাদুল ভারতের অভ্যন্তরে কীভাবে গিয়েছেন, কেন গিয়েছেন বা কী উদ্দেশ্যে গিয়েছেন, তাঁকে কে মারধর করেছে কিংবা চোরাকারবারির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এসব আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সীমান্তে বিএসএফের মারধরে বাংলাদেশি যুবক নিহতের অভিযোগ
  • বিএসএফের বিরুদ্ধে বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে