মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘আজকের অনুষ্ঠানে অনেক শেফের কথা বলা হলেও কিন্তু আমি মনে করি প্রতিটি বাড়িতে এক একজন শ্রেষ্ঠ শেফ রয়েছে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মায়ের ওপর বড় কোনো শেফ হয়? কিন্তু অনেক সময় বিজ্ঞাপনে যখন দেখানো হয় মায়ের রান্নার মতো স্বাদ, মায়ের রান্না যখন পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে তখন তা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।’’
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বনানীর মোস্তফা কামাল আতার্তুক পার্কে তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের আয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ‘এসো দেশ বদলাই পৃথিবী বদলাই’ শিরোনামে বাংলার ভোজ বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবার উৎসব বাংলাদেশ সেফ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশীয় খাবারকে সংস্কৃতির অংশ উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আমাদের কাছে নতুন বাংলাদেশ এসেছে; আর নতুন দেশে তরুণরা আমাদের পথ দেখিয়েছে। এ তরুণদের সঙ্গে দেশীয় খাবারের পরিচয় করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী প্রজন্ম যদি দেশীয় খাবারের সঙ্গে পরিচিত না হয়; তখন মনে হবে তরুণরা দেশে থেকেও যেন দেশে নাই। তাই দেশীয় খাবারের প্রতি সন্তানদের আগ্রহ সৃষ্টি করার দায়িত্ব প্রতিটি অভিভাবকের।’’
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। বৈশাখে ইলিশের ব্যান পিরিয়ড থাকে আর তখন ব্যাপকভাবে ইলিশ খাওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। আমাদের সংস্কৃতি হলো চৈত্র সংক্রান্তি। এ সময় মাছ-মাংস ছাড়া বিভিন্ন রকমের শাক দিয়ে রান্না করা হয় আর এগুলোই বাঙালি সংস্কৃতি।’’
ট্যুরিজম বোর্ডের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘শেফ বলে নারীদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ঘরে রান্না করলে রাঁধুনী আর ড্রেস পরে রান্না করলে শেফ বলা হয়। এই যে পার্থক্য, তা আমাদের দূর করতে হবে।’’ শেফদের শিল্পীর মর্যাদা দানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি শেফ একেকজন শিল্পী। তাদের নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ফলে রান্নার বৈচিত্র্য দেখা যায়। তাই তারা শিল্পীর মর্যাদা প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে।’’
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ড্রাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী (গ্রেড-১) আবু তাহির মুহাম্মদ জাবের, এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ড্রাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল শাহিদ হোসেন শামীম।
উপদেষ্টা পরে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, লা মেরিডিয়ান, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ক্রাউন প্লাজা, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, ওয়েস্টিন, রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন ও সিক্স সিজনস হোটেলের এক্সিকিউটিভ শেফদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়াশা উৎসব শুরু
শিশিরের মতো নির্মল হও প্রাণ, কুয়াশায় ভিজে মুক্ত অনির্বাণ এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ২ দিনব্যাপী কুয়াশা উৎসব-১৪৩১।
শুক্রবার সকালে রাগ সংগীত ও পিঠা পুলির আসরের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চতুর্থবারের মতো শুরু হয় এ উৎসব।
উৎসব আয়োজকরা জানান, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে কুয়াশা উৎসবের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন পড়ে অনেক টাকার। আয়োজনে সহযোগিতা করতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত, চারুকলা, নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগসহ সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আলাদা আলাদা টিম গঠন করে ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন হাটবাজারে সাধারণ মানুষকে গান শুনিয়ে সংগ্রহ করেন টাকা। সেই টাকায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনেন তারা।
মাসভর শ্রম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালাকার খেলার মাঠজুড়ে কুঁড়েঘর, গরুর গাড়িসহ একটি মনোরম গ্রামীণ পরিবেশ গড়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা। সফল হয় তাদের শ্রম। অসাধারণ গ্রামীণ চিত্রে সজ্জিত কুয়াশা উৎসবের আয়োজন মন কাড়ে দর্শনার্থীদের। ব্যাপক সাড়া ও প্রশংসা কুড়ায় ওই আয়োজন। মাঝের দুই বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ থাকে কুয়াশা উৎসবের আয়োজন। গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জাঁকজমকপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রমের সফল হয় দুই দিনব্যাপী কুয়াশা উৎসব।
এবারের দুই দিনব্যাপী কুয়াশা উৎসব আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। তাই চুরুলিয়া মঞ্চ, নজরুল বেদি, জয়ধ্বনি মঞ্চ ও ক্যাম্পাসের কয়েকটি সড়ক ব্যবহার করেন আয়োজকরা। তবে এ উৎসব ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও কুয়াশা উৎসবে থাকছে চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রাগ সঙ্গীত, লোকনৃত্য, সাহিত্য আলোচনা, অভিক নৃ, ঘাটু গানসহ রস উৎসব, পিঠা পার্বণ ও নানা আয়োজন। উৎসব বন্ধুদের অর্থায়নে আয়োজন হয়েছে এই উৎসবের।
শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণের স্পন্দনে হাতের ছোঁয়ায় নানারূপে সেজেছে চুরুলিয়া মঞ্চ, নজরুল বেদি, জয়ধ্বনি মঞ্চ ও ক্যাম্পাস সড়কের গাছগুলোও। উপজাতি সম্প্রদায়ের কুঁড়েঘর। বসেছে বাহারি পিঠা ও বইয়ের স্টল। চুরুলিয়া মঞ্চে চলছিল সাহিত্য আড্ডা “ভয়” তাতে অংশ নেন গায়ক ও লেখক অরুপ রাহী, লেখক ও শিক্ষক উম্মে ফারহানা ও রবীন্দ্র কুমার রায়। নজরুল বেদিতে বসে গানের আসর।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অন্যন্যা বলেন, প্রতি বছর আমরা এ উৎসবটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। প্রতি বছর পালিত হোক এ উৎসব।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা জানান, শুরু থেকেই উৎসব বন্ধুদের আর্থিক সহযোগিতায় চার বছর ধরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়াশা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এ উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব।
কুয়াশা উৎসবের উপদেষ্টা ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে ফারহানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ আয়োজনটি ভিন্নধর্মী ও ভিন্ন আমেজের।
কুয়াশা উৎসবের আরেক উপদেষ্টা ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোজ কুমার প্রামাণিক জানান, কোনোপ্রকার স্পন্সর ছাড়াই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং আমাদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এ উৎসব চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্নস্থান থেকে এসেছে দর্শনার্থীরা।