ব্যঙ্গ করে নাম ডাকা নিয়ে বিরোধ, হোমনায় কিশোরের ছুরিকাঘাতে কিশোর খুন
Published: 8th, February 2025 GMT
কুমিল্লার হোমনায় ব্যঙ্গ করে নাম ডাকা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে মো. কাউসার আলম (১৬) নামের আরেক কিশোর খুন হয়েছে। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে কাইয়ুম (১৭) নামের আরেক কিশোর আহত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার চান্দেরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাউসার তাতুয়ার চর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সে চান্দেরচর বাজারে একটি আসবাবের দোকানে কাজ করত। খুনে অভিযুক্ত কিশোর চান্দেরচর এলাকার বাসিন্দা। সে পেশায় রিকশাচালক।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, চান্দেরচর বাজারের ওই আসবাব তৈরির দোকানে কাউসার ছাড়াও নাজমুল হোসেন, কাইয়ুম, সাইদুল ইসলাম, সাব্বির নামের কয়েকজন তরুণ কাজ করে। সেই দোকানের পাশেই চান্দেরচর আলিম মাদ্রাসা। ২ ফেব্রুয়ারি ওই মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী শায়খ ইসলাম ও ইমন মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় আসবাবের দোকানে কর্মরত নাজমুল তার বন্ধু সাব্বিরকে ‘সাবরি’ বলে ডাক দেয়। তখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শায়খ মনে করে ব্যঙ্গ করে তাঁকে ‘সাবরি’ বলে ডাকা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে চান্দেরচর এলাকায় বসা মেলায় মাদ্রাসাশিক্ষার্থী ইমন ও তার এলাকার বন্ধু রিকশাচালক শাহাদত হোসেন আসে। মেলার মধ্যে আসবাবের দোকানে কর্মরত কাউসার, কাইয়ুম, নাজমুল ও সাইদুলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এ সময় পূর্ববিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে আবারও কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শাহাদাত আশপাশের কোনো স্থান থেকে ছুরি এনে কাউসারের বুকে আঘাত করে। আর ইমন কাইয়ুমের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন কাউসার ও কাইয়ুমকে উদ্ধার করে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে কাউসারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় কাউসারের মৃত্যু হয়। পরে স্বজনেরা কাউসারের মরদেহ এলাকায় নিয়ে আসেন।
এদিকে কাউসারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা চান্দেরচর গ্রামে গিয়ে অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে হোমনা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার সকালে কাউসারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি।
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফার্নিচার দোকানে কর্মরতদের পুরোনো বিরোধকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িতরা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। তাদের ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত একজন রিকশাচালক এবং অপরজন দাখিল পরীক্ষার্থী। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ন দ রচর এ ঘটন য় র এল ক এল ক য় আসব ব
এছাড়াও পড়ুন:
বনানীতে দুই নারীকে চাপা দেওয়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাময়িক স্থগিত, চালক গ্রেপ্তার
রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় জড়িত ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। রাজধানী ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চালকের নাম টিটন ইসলাম। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘাতক পিকআপটি জব্দ করা হয়েছে। রাতে পিকআপের চালক টিটন ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাময়িক স্থগিত করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের (ইকুরিয়া) উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) সানাউল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি জানানো হয়। পত্রে ঢাকা মেট্রো-ন-১৪-০৭৬২ নম্বর মোটরযানের মালিককে মোটরযানটির যাবতীয় কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন স্থায়ীভাবে বাতিল করাসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সোমবার সকালে রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় বনানী এলাকার চেয়ারম্যানবাড়ী ইউটার্নে এক নারী নিহত এবং অপর একজন আহত হয়েছেন। তারা দু’জন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার কর্মী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী সড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে রাখেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এমনকি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরজীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভোগ। সড়ক দুর্ঘটনায় সহকর্মী হতাহতের প্রতিবাদে সকাল ৭টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে বনানী-মহাখালী, মগবাজার, গুলশান, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে অনেকেই গন্তব্যে হেঁটে যেতে বাধ্য হন।
সড়ক দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকালে চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় কয়েকজন নারী রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এ সময় রাস্তার মাঝখানে চলে আসা এক নারীকে দ্রুতগতির পিকআপ ভ্যান চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে সঙ্গে থাকা অন্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিলে দু’পাশের সড়কে শত শত গাড়ি আটকে পড়ে। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের আশ্বাস ও শ্রমিক নেতাদের হস্তক্ষেপে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সড়ক ছেড়ে দেন তারা। এরপর ধীরে ধীরে বনানী, মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, শ্রমিকরা তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।