একের পর এক দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় দেশের ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘মধুমিতা’ দুই দফা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন হলটির কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।
এ প্রসঙ্গে নওশাদ বলেন, “পরিচালনা পর্ষদের সবাই মিলে মধুমিতা হল নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা করেছি। এরপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই, আপাতত সিনেমা হল বন্ধ করা হবে না। আমরা যদি সিনেমা হল বন্ধ করি, তাহলে সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে অবহিত করব।’’
নওশাদ আরো জানান, কোটি টাকা খরচ করে সিনেমা হলটির আধুনিকায়ন করেছিলেন। তার আশা ছিল পৈতৃক ব্যবসা আঁকড়ে থাকবেন। কিন্তু দেশে সিনেমার বাজারের ধারাবাহিক পতনে সেই আশা এখন মরিচীকায় রূপ নিয়েছে।
১৯৬৭ সালের ১ ডিসেম্বর মধুমিতা উদ্বোধন করা হয়। সিনেমার বাজার ভালো না থাকায় হলের পরিবর্তে এখানে মাল্টিপ্লেক্স গড়ে তোলার কথা শোনা যাচ্ছিল। ভাছিলেন। এমনকি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে আলাপও করেছিলেন এর কর্ণধার।
আসছে ঈদুল ফিতরে মধুমিতায় মুক্তি পাবে শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’।
ঢাকার অন্যতম প্রাচীন এই প্রেক্ষাগৃহ উদ্বোধন করেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান। হলটিতে একসঙ্গে ১ হাজার ২২১ জন দর্শক সিনেমা উপভোগ করতে পারেন।
ঢাকা/রাহাত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সারা দেশে আজ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘রেল ব্লকেড’
ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা এলাকায় দিনভর সড়ক অবরোধের কারণে কার্যত ঢাকা নগরী স্থবির হয়ে পড়ে। কুমিল্লায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
সড়ক অবরোধে বসে শিক্ষার্থীরা ‘যাদের হাতে স্ক্রু ড্রাইভার, তাদের হাতে চক-ডাস্টার মানায় না’, ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘১১৩–এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আসো মামা খেলা হবে’, ‘ক্রাফট মামা হঠাও, পলিটেকনিক শিক্ষা বাঁচাও’, ‘তুমি কে, আমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’সহ নানা স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তখন শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার শুরু করেন।৮ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়লেন রাজধানীর শিক্ষার্থীরা
প্রায় আট ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকার সড়ক ছাড়েন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যান। গতকাল সকালে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেও এক ঘণ্টার জন্য সড়ক অবরোধ করেন। এতে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
ছয় দফা দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে একদল শিক্ষার্থী সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ–টিএসসিসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা ছিলেন।
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে সাতরাস্তা ও আশপাশের এলাকার সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। দিনভর বিক্ষোভ শেষে সড়ক ছেড়ে দেওয়ার পর সন্ধ্যায় সাতরাস্তা দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। অবশ্য যান চলাচল শুরু হলেও যানজটের তীব্রতা কমেনি। সকালে সাতরাস্তা অবরোধ করার পর মগবাজার থেকে মহাখালী রেলগেট পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ধীরে ধীরে হাতিরঝিল, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানজটের তীব্রতা বাড়তে থাকে। এসব এলাকায় সাধারণ মানুষকে গণপরিবহন থেকে হেঁটে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীদেরও নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। অনেক মানুষ এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন।
দাবি না মেনে নিলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে। আগামীকাল ঢাকাসহ সারা দেশে “রেল ব্লকেড” ঘোষণা করছি।বাংলাদেশের কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারীঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাতরাস্তা অবরোধ করার কারণে মগবাজার থেকে মহাখালী রেলগেট পর্যন্ত সড়কে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। এ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার বিজয় সরণি উড়ালসড়ক দিয়েও গাড়ি পার করা যাচ্ছিল না। এতে বিজয় সরণিতে যানজট তৈরি হয়।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, জাহাঙ্গীর গেট এলাকাতেও ছিল তীব্র যানজট। সড়ক অবরোধের কারণে সোনারগাঁও হোটেল ও হাতিরঝিল এলাকায় যানজট দেখা দেয়। বিকল্প সড়ক দিয়ে গাড়িগুলো পার করেও যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
গতকাল বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সাতরাস্তায় আসে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। তাঁরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। সব দাবি মেনে নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তখন শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার শুরু করেন।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘দাবি না মেনে নিলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে। আগামীকাল ঢাকাসহ সারা দেশে “রেল ব্লকেড” ঘোষণা করছি।’
ছয় দফা দাবি
বিক্ষোভের বিষয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাহেল রানা বলেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন সময় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার শুধু আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু দাবি পূরণ হচ্ছে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথে থাকবেন।
ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। যান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। গতকাল দুপুরে