আমি মনে করি না আমার ভাষারীতি গীতল-কোমল
Published: 8th, February 2025 GMT
সুহান রিজওয়ান: বইমেলায় আপনার একটি গল্পের বই আসছে শুনেছি...
সাগুফতা শারমীন তানিয়া: হ্যাঁ, এবার বইমেলায় ঐতিহ্য থেকে এবার ‘প্রিয় ১৫’ সিরিজে আমার গল্পের বই আসছে। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। প্রকাশে দূতিয়ালি করেছেন পিয়াস মজিদ। আর এ বই উৎসর্গ করেছি সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক ফয়জুল ইসলাম ভাইকে।
সুহান: তাহলে গল্প লেখা নিয়েই প্রশ্ন করি। জানতে চাইব আপনার গল্প লেখার কায়দা নিয়ে। একেকটা গল্প একদম শুরু থেকে শেষ করেন ঠিক কী কী ধাপ মেনে? নাকি একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত থাকে রচনাপ্রক্রিয়া?
সাগুফতা: অনেক দিন ধরে কোনো ক্রাফট নিয়ে পড়ে থাকলে কোনটা স্বতঃস্ফূর্ত আর কোনটা বাঁধাধরা চর্চা, তা আর আলাদা থাকে না। নিয়মিত চর্চাটাই তখন স্বতঃস্ফূর্ত হতে বাধ্য। আমার গল্প লেখার কায়দাটা ইন্ধননির্ভর, কোনো একটি মেটাফোরকে ধরে নিয়েও একটা পুরো প্লটে পৌঁছেছি এমনও হয়েছে। কখনো অকারণই মনে লেখা ভেসে আসে। প্যারাগ্রাফ, উপমা, অ্যানেকডোট। তখনই লিখে রাখি। কোনো খবর বা নিবন্ধ পড়তে গেলেও লিখে রাখি, কিছু একান্ত গবেষণা ছাড়া তো লেখা যায় না। তারপর একদিন লিখতে বসে দেখি, ওসব একের পর এক জুড়ে যাচ্ছে। দু-একসময় আমি শেষটুকু আগে লিখেছি, কিন্তু যেতে যেতে শেষটা সামান্য বদল করতে হয়েছে। কখনো একটানা লিখে শেষ করে কয়েক দিন পর ফেরত আসি, তারপর শুচিবায়ুগ্রস্তের মতো এডিট করি। যা আমাকে উদ্দীপিত করে, স্পর্শ করে, ভাবিত করে, আমি তা–ই নিয়ে লিখি। সেদিক থেকে স্বতঃস্ফূর্তই বলতে পারেন।
সুহান: আপনার গদ্য পড়তে গেলে আমি আগাগোড়া একটা কাব্যগন্ধী ব্যাপার টের পাই। খুব রুঢ় বিষয়ে বলতে গিয়েও আপনার শব্দরা যেন কোমলতা হারায় না। এই ভাষারীতি আয়ত্ত করতে ঠিক কী কী ব্যাপার প্রভাবিত করেছে আপনাকে?
সাগুফতা: এই ‘কাব্যগন্ধী’ শব্দটায় আমার টনি মরিসনের লিখনরীতি নিয়ে একটি প্রিয় উক্তির কথা মনে পড়ল, যাকে বলে ‘প্রিটি ল্যাঙ্গুয়েজ’, তা মরিসন ব্যবহার করেছেন, কিন্তু ‘প্রিটি’ আর ‘সুগার’ এক নয়। প্রিটি ল্যাঙ্গুয়েজও পরখ করে দেখলে দেখবেন, প্রয়োগের কারণে নৃশংস, নির্মেদ, চোখা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইতর হতে পারে। শব্দকে অনিবার্য হতে হবে, শব্দের পরবর্তী শব্দের সঙ্গে অন্বয় থাকতে হবে। আমি সেই চেষ্টাই করি। মনে করি না আমার ভাষারীতি গীতল-কোমল। বাংলা ও ইংরেজিতে পঠিত যত গল্পে জ্বলজ্বল করছে মানুষের প্রতিভা, তার সবই আমাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁরা প্রত্যেকে একে অন্যের থেকে আলাদা। ন্যারেটিভ ভয়েস অত্যন্ত জরুরি জিনিস, সেদিক থেকে তিন বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ সান্যাল, বিমল কর, সুবোধ ঘোষ, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ…বহু লেখক আমার চিন্তা, আমার রীতিকে প্রভাবিত করেছেন।
সুহান: এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অন্তর্জগতের টানাপোড়েন নিয়ে নাড়াচাড়া দেখতে চান আপনি। এমন টানাপোড়েন, যেটা ‘আরবান’। প্রশ্নটা করছি সেখান থেকেই, যেহেতু দুনিয়াজোড়া মেট্রোপলিসগুলো এখন একই ঘরানার; সেটা কি এই আরবান ধাঁচের গল্প লেখায় একটা সমস্যা, না সম্ভাবনা?
সাগুফতা: দুনিয়াজোড়া মেট্রোপলিস একই ঘরানার হয়ে গেছে? এ কথায় আমার মনে হলো, হয়তো গুহায় ঘুমিয়ে ছিলাম, জেগে উঠে শতবর্ষ পুরোনো মুদ্রা নিয়ে হাটবাজারে হাজির হয়েছি। একেকটা শহর একেক ভঙ্গিমায় গল্প বলে। শহরবাসীরা আবার একে অপরের থেকে আলাদা, তাদের টানাপোড়েন আলাদা, তাদের আকাঙ্ক্ষা আর আর্তি আলাদা। তারা প্রত্যেকে একেক সময়ে প্রায় প্রতিপাদস্থানের মতো উল্টো বা দ্বান্দ্বিক মনোভাব পোষণ করতে পারে বা তেমন কাজ করতে পারে। আবার একই শহর একেক শতাব্দীতে একেক টোনে গল্প বলেছিল। ফলে প্রবাবিলিটি ট্রিতে অনেক ডালপালা, সম্ভাবনা অসীম।
আমরা ভুবনপল্লির বাসিন্দা, গ্রামের ভিটিবাড়ির মাটিতে, পানাপুকুরে স্তরে স্তরে প্লাস্টিক ঢোকার মতো করে গ্রামবাসীর ‘পাস্টোরাল’-এ–ও বহু ‘আরবান’ ঢুকে গেছে। ফলে একই ধাঁচের হওয়ার সমস্যা ও সম্ভাবনা সেখানেও বিদ্যমান। প্রতিটি চেনা গল্পের ভেতরই কিছু উদ্ভট অনাবিষ্কৃত দৃষ্টিকোণ থাকে, সেটাই আশার কথা।
সুহান: আপনার লেখা প্রথম পড়ি সেই দেড় দশক আগে। লেখক হিসেবে আপনার সঞ্চারপথ তাই খুব কম নয়। যখন লিখতে শুরু করেছিলেন, আর এই যে এখনো লিখে যাচ্ছেন—এই দুটো বিন্দুর মধ্যে বাংলাদেশি সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির কেমন বদল দেখতে পান?
সাগুফতা: সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির বদল দেখার জন্য দেড় দশক খুব হ্রস্ব সময়। দূরে থাকি, সেটাও পর্যবেক্ষণের বাধা। তবে নিয়মিত পড়ি। দু-তিন দশক আগে যে প্রস্তুতি-চর্চা নিয়ে এমনকি কমার্শিয়াল ফিকশনের সাহিত্যিকেরা লিখতে বসতেন, এখনকার মানুষ বোধ হয় তার প্রয়োজন বোধ করেন না। ‘সাহিত্যশিক্ষিত’ হতে হবে না, ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন’ বলে মাঠে নেমে পড়লেই হবে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, ক্ষমাই কি চাই শুধু, মুগ্ধতা চাই না? সাহিত্যে হিউমার বেড়েছে, সেটি একটি পজিটিভ দিক। কথায় কথায় আমরা শুনিয়ে দিই, ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়া জাতি আমরা, কিন্তু বাংলা ভাষার ঋদ্ধি-শুদ্ধি-বিকার-বিলয় কিছুমাত্র নিয়ে মাথা ঘামাই না। পশ্চিমে বলা হয়, সাহিত্যিককে বৈয়াকরণের চেয়ে বেশি ব্যাকরণ জানতে হবে, কারণ সে সেটা জেনেশুনে ভাঙবে, নাপিতের নির্বিকার ছুরি হাতে নয়। অনেক ভাষাভাষী আমাদের, কিন্তু ভাষাচর্চার প্রসার নিয়ে কাজ কম, উদাসীনতা বেশি। মানভাষা আর আঞ্চলিকের দ্বন্দ্ব ছাড়া আমাদের আর কোনো কোলাহল নেই। ভাষা নিয়ে যাঁরা এত নিরুদ্বেগ, তাঁদের সাহিত্য যেখানে যাওয়ার, সেখানেই চলেছে।
গল্প
প্রিয় ১৫ গল্প
সাগুফতা শারমীন তানিয়া
প্রকাশক: ঐতিহ্য, ঢাকা
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ব ত কর কর ছ ন আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
সেরা কোচ পেতে ক্ষতিপূরণে আপত্তি নেই ব্রাজিলের
দরিভাল জুনিয়রকে বরখাস্ত করার পর ব্রাজিলের জন্য নতুন কোচ খুঁজছে কনফেডারেশন অব ব্রাজিল ফুটবল (সিবিএফ)। চার কোচের সংক্ষিপ্ত তালিকাও করেছে ব্রাজিল। যে তালিকায় আছেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি, আল হিলালের কোচ হোর্হে জেসুস, ফেনারবেচের কোচ হোসে মরিনহো ও পালমেইরাসের আবেল পেরেইরা।
এই চার কোচের সঙ্গেই তাদের বর্তমান ক্লাবের চুক্তি আছে। ওই চুক্তি বাতিল করে তাদের কাউকে ব্রাজিলের ডাগ আউটে পেতে হলে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সিবিএফের। কনফেডারেশন প্রেসিডেন্ট এডনাল্ডো রদ্রিগুয়েজ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত তারা।
রদ্রিগুয়েজ বলেন, ‘জাতীয় দলের জন্য সিবিএফ সেরা কোচকেই চান। জাতীয় দলের জন্য সেরা কোচ পাওয়ার জন্য এটাকে (ক্ষতিপূরণ দেওয়া) আমরা বিনিয়োগ হিসেবে দেখছি।’
রদ্রিগুয়েজ জানিয়েছেন, কোচ নিয়োগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া ও পরিকল্পনা-কৌশল সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার কাজটা সিবিএফের নির্বাহী সমন্বয়ক রদ্রিগো কায়তানো দেখভাল করছেন। রদ্রিগো বিষয়টি সম্পর্কে চূড়ান্ত খোঁজ-খবর নেওয়া সম্পন্ন করলে প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে বসবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সিবিএফ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিস্তারিত (কোচ সম্পর্কে) তথ্য রদ্রিগো কায়তানোর কাছে পাওয়া যাবে। তিনি এটা দেখভাল করছেন। তার হাতে এরই মধ্যে একজনের নাম এসেছে, অন্যরাও আলোচনায় আছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি, তবে খুব সতর্কতার সঙ্গে করতে হচ্ছে। কোচদের সঙ্গে কথা বলার আগে তাদের ক্লাবের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। দ্রুতই তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবেন, এরপর আমরা বসবো।’
ব্রাজিলের কোচ হিসেবে সিবিএফ প্রেসিডেন্ট এডনাল্ডো রদ্রিগুয়েজের প্রথম পছন্দ কার্লো আনচেলত্তি। জুলাইয়ের আগে তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় হোর্হে জেসুসকে এগিয়ে রাখা হচ্ছিল। তবে রিয়াল মাদ্রিদে ডন কার্লোর চাকরি সুতোর ওপর ঝুলছে বলে খবর। আর্সেনালের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে জিতে সেমিফাইনালে যেতে না পারলে বরখাস্ত হতে পারেন তিনি। বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে সিবিএফ। আর্সেনালের বিপক্ষে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হেরেছে রিয়াল।