নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার ভাবনা
Published: 8th, February 2025 GMT
বাংলাভাষা আর একুশে ফেব্রুয়ারি—এ দুটি শব্দই সংগ্রামী চেতনা, মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি তরুণরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাতৃভাষার অধিকার। এ কারণেই বাঙালি জাতির কাছে একুশ মানেই সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষার ভাবনা তুলে ধরেছেন।
ভাষা শুধু ফেব্রুয়ারির জন্য নয়
ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও ভালোবাসার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরো তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ নজরুল শুধু বিদ্রোহী কবি নন, তিনি ভাষার শক্তির প্রতীকও।
ভাষার প্রতি ভালোবাসা কেবল ফেব্রুয়ারি মাসের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। ভাষা আন্দোলনের চেতনা প্রতিদিনের চর্চার বিষয়। বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার, মাতৃভাষায় গবেষণা, সাহিত্যচর্চা এবং একে প্রযুক্তির সঙ্গে মানানসই করে তোলার দায়িত্বও শিক্ষার্থীদের নিতে হবে।
ভাষা সংরক্ষণে আমাদের নজরুলের মতো সাহসী হতে হবে। ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখা প্রয়োজন, তবে মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় বাংলা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য বাংলা কনটেন্ট তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। ভাষা কেবল কথার মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির মূল শিক্ষা হওয়া উচিত, বাংলা ভাষা শুধু বইয়ের পাতায় নয়, প্রতিদিনের জীবনযাপন ও গবেষণায় বাস্তবায়ন।
(লেখক: আসাদুল্লাহ আল গালিব, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ)
বাংলা ভাষার বিকৃত চর্চা বন্ধ হোক
বাংলা ভাষা শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি আমাদের পরিচয়, গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। অথচ দুঃখজনকভাবে আমরা নিজেরাই বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটিয়ে চলেছি। এই বিকৃতি শুধু ভুল বানানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভাষার কাঠামোগত সৌন্দর্যও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলা ভাষার অপব্যবহার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেকেই বাংলা টাইপ করাকে তুচ্ছ মনে করেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে আমরা দেখি, ‘তুমি’ লেখা হয় ’tumi’, ‘ভালোবাসা’ হয়ে যায় ‘valoBasha’ ইত্যাাদি। কিছু তরুণের কাছে এটি আধুনিকতা মনে হলেও বাস্তবে এটি বাংলা ভাষার বিকৃতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।
শুধু লেখায় নয়, কথায়ও বাংলার বিকৃতি স্পষ্ট। অনেকেই বাংলার মাঝে অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে কথা বলেন। যেমন- ‘আমি আজকে খুব busy, কাল meet করা যাবে?’ কিংবা ‘আমি Exam এর preparation নিচ্ছি’। এ ধরনের অভ্যাস ধীরে ধীরে বাংলার স্বকীয়তা নষ্ট করছে।
ভাষাবিদরা মনে করেন, এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষাব্যবস্থায় শুদ্ধ বাংলা চর্চাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল-কলেজে বাংলা বানানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমেও শুদ্ধ বাংলা প্রচলনের জন্য গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
(লেখক: ফায়জুন্নাহার শান্তা, প্রথম বর্ষ, আইন ও বিচার বিভাগ)
ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার
ভাষার মাস প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এক অনন্য আবেগ জাগায়। ফেব্রুয়ারি এলেই মনের গভীরে ভেসে ওঠে ১৯৫২ সালের সেই সংগ্রামী অধ্যায়, যখন ভাষার জন্য অকুতোভয় তরুণেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন।
ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মত্যাগের গৌরবময় ইতিহাস আমাদের গর্বিত করে। তবে সেটি কেবল ফেব্রুয়ারি মাসের জন্যই নয়, সারা বছর ধরে ভাষার যথাযথ চর্চা করা উচিত।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। এটি আমাদের ভাষার মর্যাদা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু ভাষা দিবসে আমরা যে আবেগ ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করি, সেটি যদি প্রতিদিনের অভ্যাসে রূপ না নেয়, তবে ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যাবে।
আমাদের উচিত প্রতিদিন বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা করা, একে সমৃদ্ধ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা। তাহলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
(লেখক: মো.
বাংলা হোক আরো সমৃদ্ধ
ভাষার মাস এলেই হৃদয়ে এক অন্যরকম আবেগ জাগে। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ ভাষা শুধু কথার মাধ্যম নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়েছে যে, ভাষার প্রতি ভালোবাসা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি চর্চা, যত্ন ও গর্বের বিষয়। তবে বর্তমান সমাজে প্রশ্ন ওঠে— ভাষার প্রতি আমাদের দরদ কি শুধু ফেব্রুয়ারিতেই?
অনেকাংশে বিষয়টা এমনই মনে হয়। কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ বছরের প্রতিটি দিনই থাকা উচিত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানানের বিকৃতি আমাকে পীড়া দেয়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাংলিশ’ লেখার প্রবণতা এবং ‘ই’ ও ‘য়’ এর ব্যবহারে ভুল লক্ষ্য করা যায়, যা ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমির লেখালেখিতেও শুদ্ধ বানানের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। তরুণদের মধ্যে ভাষাপ্রীতি সৃষ্টি করতে হবে এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মানোন্নয়ন করা প্রয়োজন। যাতে শিক্ষার্থীরা ভাষার গভীরতা, শুদ্ধ ব্যবহার ও সাহিত্যচর্চায় আরো দক্ষ হয়ে ওঠে।
একুশের চেতনা শুধু শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শুদ্ধ বানানে, সঠিক উচ্চারণে ও যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করা এবং আরো সমৃদ্ধ করাই প্রকৃত ভাষাপ্রীতির প্রতিফলন।
(লেখক: সাদিয়া বিনতে সুলতানা, প্রথম বর্ষ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য)
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র র জন য আম দ র নজর ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন মার্কিন অভিবাসন আদালতের এক বিচারক। এর মধ্য দিয়ে এক মাস আগে নিউইয়র্ক নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে বিতাড়িত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাদের তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারবে।
লুইজিয়ানার লাসাল অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স গতকাল শুক্রবার এ মত দিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তই যে খলিলের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা নয়। তবে এটিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি খলিলের মতো বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।
১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টকে উদ্ধৃত করে গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেছিলেন, খলিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত স্বার্থের ক্ষতি করতে পারেন এবং তাঁর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে বিতাড়িত করা উচিত।
কোমান্স বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তাঁর নেই। খলিলের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রুবিওকে তলব করার এবং ১৯৫২ সালের আইনের অধীন তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
লুইজিয়ানার গ্রামীণ এলাকায় কাঁটাতারে ঘেরা একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রের ভেতর বসা আদালতে ৯০ মিনিটের শুনানির পর বিচারক এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক নগর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন খলিল। সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণকারী খলিল আলজেরিয়ার নাগরিক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন তিনি। খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক।
গত ৮ মার্চ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। এরপর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে লুইজিয়ানার কারাগারে পাঠান। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
বিচারক কোমান্স ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সংগঠক গ্রিনকার্ডধারী খলিলকে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন ট্রাম্প১৩ মার্চ ২০২৫খলিলকে বিতাড়িত করার আদেশ দেবেন কি না, তা এখন বিবেচনা করবেন কোমান্স। তার আগে বিতাড়ন থেকে রেহাই পেতে আবেদন করার জন্য খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। একজন অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনি নিপীড়নের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করলে অভিবাসন আদালতের বিচারক তাঁকে বিতাড়িত না করার জন্য আদেশ দিতে পারেন।
নিউ জার্সিতে আলাদা এক মামলায় স্থানীয় আদালতের বিচারপতি মাইকেল ফারবিয়ার্জ শিক্ষার্থী খলিলকে বিতাড়নের চেষ্টা আটকে দিয়েছেন। খলিলকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না, তা বিবেচনা করছেন তিনি।