টিলা, জংলা আর জলা-হাওরের সমতল; প্রকৃতির ত্রিবেণি সঙ্গমস্থল- মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলা। সুলতানি জমানা থেকে পরগনা- কালে কালে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অর্জনে সমৃদ্ধ এই প্রান্তিক জনপদ।

কুলাউড়ার প্রতিটি প্রান্তে ইতিহাসের ইতিকথা লেখা। এর প্রাণে সভ্যতার আলোকবর্তিকা ধারণ করে সগৌরবে নিজের পরিচয় ধারণ করে আছে লংলা পরগনা তথা আজকের লংলা। কুলাউড়ার এই অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে এক অনন্য নাম, জয়ন্তীজয়ী বাতিঘর লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ।

১৯৯৮ সালে পথচলা শুরু করে লংলা কলেজ। মাত্র ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হলেও ২৬ বছরের এই পথচলায় লংলা তার বুকে আগলে নিয়েছে সহস্র বিদ্যার্থীর স্বপ্ন আর তার সার্থকতার গল্প। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকের পর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ দিয়েছে এই কলেজ।

উপজেলার দক্ষিণ লংলায় প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের প্রাঙ্গণ মাড়িয়ে দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কুলাউড়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বহু শিক্ষার্থী। জুলাই বিপ্লবের পটভূমিতে লংলার উজ্জীবিত জেন-জি প্রজন্মের অন্যতম দুর্গ ছিল এই কলেজ।

এই অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে অমরত্বে সম্মানিত, জমিদার নওয়াব আলী আমজদ খান ও সৈয়দ শামসুদ্দিন হোসেন। সেই তালিকায় আছেন লংলার বিদ্যাবেদি প্রতিষ্ঠায় প্রথম ভূমিদাতা সুশীল চন্দ্র দাস। তাঁর হাত ধরে স্থানীয় শিক্ষাবিদদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবেদনে লংলা আজ উচ্চশিক্ষার এক শক্তিমান প্রাঙ্গণ। যে প্রাঙ্গণ অপেক্ষমাণ, অতীতের মতো আগামী প্রজন্মের অর্জন আর স্বপ্নপূরণের আরও বহু গল্প লিখবে বলে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিতে ভর্তিচ্ছুদের পাশে শিবির-ছাত্রদল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে শাখা ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলে নেতাকর্মীরা।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুই শিফটে 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে সংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সহযোগিতা কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শাখা শিবিরের নেতাকর্মীরা ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, আম চত্বর, কিউব চত্বর, প্যারিস রোডসহ বিভিন্ন স্থানে সহয়তা বুথ স্থাপন করেছেন। এ বুধ থেকে তারা খাবার পানি সরবরাহ, ফার্স্ট এইড, মেডিসিন সরবরাহ, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, শিক্ষা উপকরণ দেওয়াসহ আগত ভর্তিচ্ছুদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।

আরো পড়ুন:

রাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন বন্ধুর ফোনে পাঠাতে গিয়ে আটক

ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিল রাবি 

ভর্তি পরীক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, “আমি এই বিশাল ক্যাম্পাসে এসে একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা যেভাবে সাহায্য করেছে, তাতে আমি সহজেই কেন্দ্রে পৌঁছাতে পেরেছি। তাদের সহায়তায় আমি অনেক স্বস্তি পেয়েছি।”

আরেক পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে এতো বড় ক্যাম্পাসে এসে কিছুটা বিভ্রান্ত হই। শিবিরের দেওয়া সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। তাদের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”

শাখা ছাত্রশিবিরের স্পোর্টস সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে ক্যাম্পাসে পৌঁছানো, সঠিক ভবনে পরীক্ষার হল খুঁজে পাওয়া, খাবার পানি সরবরাহ, ফার্স্ট এইড, মেডিসিন সরবরাহ, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও শিক্ষা উপকরণ দেওয়াসহ নানা রকম সাহায্য করেছে ছাত্রশিবির।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পয়েন্টে তারা তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করে আগত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়াও, অভিভাবকদের বসার জন্য শেড, শিশুদের জন্য চকলেটসহ রিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছিল।”

অন্যদিকে, ভর্তিচ্ছুদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে ‘জরুরি বাইক সার্ভিস’ চালু করেছে রাবি শাখা ছাত্রদল।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে সঠিক কেন্দ্রে পৌঁছাতে বেশ খানিকটা সময় লাগে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। অনেক সময় পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজ কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন না পরীক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীদের এই সংকট কাটাতে ছাত্রদলের এই আয়োজনের প্রশংসা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরীক্ষা দিতে আসা এক শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ বলেন, “তারা খুব ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছে। আমি একা প্রথম রাজশাহীতে আসছি, কিছুই চিনি না। ভাইদের বলার পর তারা আমাকে যে ভবনে পরীক্ষা, সেখানে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যারা কেন্দ্র চিনে না, তাদের জন্য এটা খুবই হেল্পফুল।”

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের বাইক সার্ভিসের বাইকগুলো প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছে। এখানে সর্বমোট ১১টি বাইক কাজ করছে। বাইক সার্ভিসের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ছাত্রদলের কর্মী নাহিউল জীবন। এছাড়াও আমাদের মেডিকেল সেবা, ট্রাফিক সেবা, খাবার পানি, স্যালাইন, শিক্ষার্থীদের তথ্যসেবা,অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রাবি ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে আছে।”

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বা স্বেচ্ছাসেবী দল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সহযোগিতায় কাজ করবে, ততক্ষণ আমি তাদের প্রশংসা করবো। তারা যে মিটিং মিছিল বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করছে, এটা সত্যি প্রশংসনীয়।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ