ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ, জড়িত ভারতীয় মিডিয়া: প্রেস সচিব
Published: 8th, February 2025 GMT
‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়াও জড়িত। তারা সারা পৃথিবীকে বোঝাতে চাচ্ছে, বাংলাদেশে যা হয়েছে তা আসলে গণ-অভ্যুত্থান নয়। এটা বড় রকমের চক্রান্ত।’ এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দ্রোহের গ্রাফিতি: ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান’ শিরোনামের একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন ‘যাঁরা ভাবছেন বিপ্লব জুলাই-আগস্টের ২১ দিন, এটা ভুল। তার আগেও ১৫ বছর ধরে লড়াই হয়েছে। আরও ১৫ বছর সংগ্রাম করতে হবে। আমরা একটু থেমে যাব, ওরা আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা যাতে না হয়।’
সাংবাদিক জি এম রাজীব হোসেনের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূসকে ‘জঙ্গি নেতা’ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম জড়িত।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং পতিত স্বৈরাচার, চোরতন্ত্রের জননী ও গুমের জননী চাচ্ছেন বাংলাদেশের ন্যারেটিভকে (বয়ান) চ্যালেঞ্জ করতে। তাঁরা বলছেন, তিন হাজার পুলিশ মারা গেছে, তাঁদের ওয়েবসাইটে অধ্যাপক ইউনূসকে জঙ্গিদের নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এটা খুবই পরিকল্পিত অপপ্রচার। এর সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়াও জড়িত।
শেখ হাসিনার অলিগার্কেরা মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। তারা সারা পৃথিবীকে বোঝাতে চাচ্ছে, বাংলাদেশে যা হয়েছে তা আসলে গণ-অভ্যুত্থান নয়। এটা বড় রকমের চক্রান্ত।
প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণা ও লেখা প্রকাশিত হয়নি। যে আফতাব আহমেদ বাসন্তীর ছবি তুলেছেন, তিনি রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। কেউ তদন্ত করেনি। রক্ষীবাহিনীর হাতে ৩০ হাজার লোক মারা গিয়েছিল। ১৫ বছর ধরে ইতিহাস মুছে নতুন ইতিহাস চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। শোষণ করার মূল হাতিয়ার ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া। যে নিপীড়নকারী, সে নিজেকে নিপীড়নের শিকার বলে জাহির করেছে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে গবেষণার মাধ্যমে ১৫ বছরের ভয়াবহতাকে তুলে ধরা। আমরা প্রতিটি ক্যাম্পাসে সেমিনার করব। প্রতিটি দেয়ালে সে যে অন্যায় অবিচার করেছে, সেটা আমরা লিখে রাখব, যাতে বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা ফিরে আসতে না পারে। এটা আমাদের করতে হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ড ইউন স ১৫ বছর আওয় ম ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়কের বিয়ে, কাঙাল হরিনাথের প্রয়াণ দিবসে ছিল না আয়োজন
গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৯তম প্রয়াণ দিবস আজ ১৮ এপ্রিল। ১৮৯৬ সালের এই দিনে তিনি মারা যান। তার প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে কুমারখালীর কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে ছিল না কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন। উপজেলা প্রশাসন বা কোনো প্রেস ক্লাবের পক্ষেও ছিল না কোনো আয়োজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়কের আজ বিয়ে। এ কারণে ১৮ এপ্রিল দিনটি ঘিরে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল না জাদুঘরে। তবে, সেখানে অবস্থিত কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফুলের মালা দিয়েছেন জাদুঘরের কর্মচারীরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কুমারখালী পৌরসভার কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। প্রধান গেটে ঝুলছে তালা। চত্বরে অবস্থিত ম্যুরালে ফুলের মালা ও পুষ্পস্তবক রয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিআরইউ সদস্য ও সন্তানদের দাবা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু
ডিআরইউতে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত
জাদুঘরের নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমিন বলেন, “জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার মন্ডল চলতি মাসের ৫ তারিখ যোগদান করেছেন। আজ শুক্রবার কাঙাল হরিনাথের প্রয়াণ দিবস। আজই স্যারের (তত্ত্বাবধায়ক) বিয়ে। সেজন্য, আলোচনা সভা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান পেছান হয়েছে। পরে করা হবে।”
দিনটি ঘিরে কোনো আয়োজন না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাঙাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধর স্বর্গীয় অশোক মজুমদারের স্ত্রী গীতা রানী মজুমদার। তিনি বলেন, “কাঙাল ভাঙিয়ে অনেকজন বড় লোক হয়েছেন। সেই কাঙাল কাঙালই আছে। কাঙালের মতোই যাচ্ছে তার তিরোধান দিবস।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন কাঙাল হরিনাথ। আজ কাঙালই বঞ্চিত। আমরাই সবচেয়ে বঞ্চিত, অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। অরক্ষিত কাঙালের সমাধি ও ব্যবহৃত তৈজসপত্র। প্রশাসন তো দূরের কথা সাংবাদিকরাও খোঁজ নেয় না।”
গীতা রাণীর ছেলে দেবাশীষ মজুমদার বলেন, “সাংবাদিকরা কাঙালকে গুরু দাবি করেন। গুরুকে শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে রেখে স্মরণ করলেই হবে না, কাঙালের সব অনুষ্ঠান জাতীয়ভাবে পালন করতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার মন্ডলকে ফোন দেওয়া হয়। ফোনটি অন্য একজন রিসিভ করে বলেন, “তাপসের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। পরে কথা বলে নিয়েন।”
কাঙাল হরিনাথের অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত জাদুঘর কর্তৃপক্ষ করে থাকে বলে ফোনে জানান কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, “অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কাঙাল হরিনাথ ১৮৩৩ সালের ২২ জুলাই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কুন্ডুপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৬৩ সালের এপ্রিল মাসে কুমারখালী থেকে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামের একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। তার স্মরণে কুমারখালীতে একটি স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ হয়েছে। তবে, অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে তার ভিটা ও সমাধি।
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ