‘দুই সন্তানের কেউই ছয় মাসে একবারও খোঁজ নেয় না, কেমন আছি’
Published: 8th, February 2025 GMT
মাঘের কনকনে ঠান্ডায় ঘন কুয়াশায় মধ্যে কাজের সন্ধানে রেললাইনের ওপর বসে আছেন মধ্যবয়সী মো. বাবুল মিয়া। কেউ না কেউ শ্রমিক হিসেবে কাজে নিতে আসবেন—এই আশায় ভোর সাতটা থেকে সেই অপেক্ষা। কিন্তু সকাল আটটা বাজলেও তাঁকে কেউ কাজের জন্য নিতে আসেননি। তাই চোখেমুখে রাজ্যের চিন্তা। কাজ না পেলে চাল-ডাল কেনা হবে না তাঁর।
বাবুল মিয়ার বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ভালুকা গ্রামে। সন্তানদের কথা জিজ্ঞাসা করায় তিনি অনেকটাই বিরক্ত হন। সন্তানদের প্রতি তাঁর অনেক অভিমান। বাবুলের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাঁদের মধ্যে ছেলেরা বড়। তাঁরা তাঁদের স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে শহরে থাকেন। আর একটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর সবার ছোট মেয়েটি তাঁর সঙ্গে থাকে। এত কষ্ট করে সন্তানদের লালন-পালন করে কী লাভ—দীর্ঘশ্বাসে এমন মন্তব্য তাঁর। দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু কেউ তাঁদের খবর রাখে না। তিনি বলেন, ‘দুই সন্তানের কেউই ছয় মাসে একবারও খোঁজ নেয় না, কেমন আছি।’
গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় শ্রমিকের হাটে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রতিদিন খুব ভোরে মেলান্দহ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে জামালপুর শহরের ওই শ্রমিকের হাটে আসেন কাজের জন্য। আবার কাজ করে সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরে যান।
বাবুল বলেন, ‘গরিবের কষ্ট কেউ বোঝে না। বিল্ডিং বানানোর জোগালি খাটি। আবার ওই কাম না পাইলে, মাটি কাটার কামলার কামও করি। সবকিছুর দাম বাইড়ে গেছে। মানুষ বিল্ডিং এহন কম বানায়। তাই কাম নাই। দিন আনি দিন খাই, ঘরে বাজার নাই। ঠিকমতো সংসার চালাতে পারি না। ঠিকমতো একটু ডাইল-ভাতও জুগার করতে পারি না। কাজ পেলে-প্রতিদিন ৫০০ টেহা পাই। এর মধ্যে নিজে কিছু খাই এবং গাড়ি ভাড়া লাগে। তাইলে আর কই টেহা থাকে। ওই টেহা দিয়ে সংসার চালাতে হই।’
বাবুল আরও বলেন, এলাকায় তেমন একটা কাজ নেই। একসময় অনেক সম্পদ ছিল। সেগুলো তাঁর বাবাই বিক্রি করে গেছেন। নিজের বলতে সাড়ে তিন শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে একটি ঘর আছে।
আক্ষেপ করে বাবুল মিয়া বলেন, ‘এই সংসারে কতই না কষ্ট করছি। নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিছি। লালন-পালন করে বড় করে তুলছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আজ সেই সন্তানেরা একবারও জিজ্ঞাস করে না, কেমন আছি। কখনো জিজ্ঞাস পর্যন্ত করে না, আমরা খাইছি কি না। কী লাভ সন্তানদের মানুষ করে। শেষ বয়সে হাড়ভাঙা কাম করে পেট চালাই। ছেলেদের বিবেক নাই। আল্লাহর ওপর ভরসা করি। তাঁরা (সন্তান) না দেখলেও আল্লাহ আছেন একজন। তিনি যেভাবেই চালাক, সেইভাবেই চলছি। যত দিন পিণ্ডে (শরীর) আছে, তত দিন এভাবেই চলব। তারপর আল্লাহ যা করেন। এখন আর সন্তানদের প্রতি কোনো চাওয়া নাই।’
বাবুল মিয়া প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন ওই শ্রমিকদের হাটে কাজের জন্য আছেন। কিন্তু কোনো দিন কাজ পান আবার কোনো দিন কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান। আগের থেকে কাজ কমে যাওয়া এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন সংসার চালাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তিনি বলেন, ‘দু-এক দিন পরপর কাজ পাইলেও ৫০০ ট্যাহা ইনকাম হয়। সেই ট্যাহা নিয়ে বাজারে গেলে এক দিনেই শেষ। বাজারে জিনিসের দামে আগুন। গরিব মানুষ কমনে বাঁচবে? যাদের ট্যাহা আছে, তাদের আছেই; আর যাদের নাই, তাদের কিছুই নাই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শাহজাদপুরে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে উপজেলার মনিরামপুর এলাকায় বিএনপি অফিসের সামনে ঘটনাটি ঘটে।
শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী বলেন, “উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হননি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত ১২, বাড়ি ভাঙচুর
কানাইপুরে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, ৩০ বাড়ি ভাঙচুর
আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, শাহজাদপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন-আহ্বায়ক আনিছুর রহমান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুস।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ডা. এম এ মুহিত এবং কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্য সদস্য গোলাম সরওয়ারের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়ে সংঘর্ষটি হয় দুই পক্ষের মধ্যে । এসময় এলাকা জুড়ে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
গোলাম সরওয়ার অভিযোগ করে বলেন, “নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের কবর জিয়ারত করতে যাই। সেখান থেকে দলীয় কার্যালয়ে গেলে এম এ মুহিতের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছেন।”
এ বিষয়ে জানতে ডক্টর এম. এ মুহিতের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশকে কেন্দ্র করে নিজ দলের মধ্যে এমন হামলা সত্যিই দুঃখজনক। এ ঘটনায় তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ