মায়ার টানেই করিম উৎসবে আসেন বাউল এমরান
Published: 8th, February 2025 GMT
‘তোমার কি লাগে না মায়া আমার দুঃখ দেখিয়া, বন্ধুয়ারে আমি যত দোষী তোমার লাগিয়া...।’ ১৯৭২ সালের কথা। বাউল এমরান শাহর বয়স তখন আট। বাড়িতে একটি রেডিও ছিল। একদিন সকালে রেডিওতে এই গান বেজে ওঠে। গানের মায়া তাঁকে আকুল করে। মনে দোলা দেয়। উতলা করে। রেডিওতে গান শুনে শুনে মুখস্থ করেন এমরান। সেই থেকে গান গাওয়া, বাউলিয়ানার শুরু তাঁর। এখন বয়স ৬২ বছর। এখনো গানেই আছেন। গান লেখেন, গান করেন। গান নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান।
সুনামগঞ্জে চলছে দুই দিনব্যাপী বাউল শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব। গতকাল শুক্রবার থেকে জেলার দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে বসেছে শাহ আবদুল করিমের ভক্ত-অনুরাগীদের মিলনমেলা। এই উজানধল গ্রামেরই জন্মেছেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম। সেখানেই বাউল এমরান শাহর সঙ্গে কথা হয় গতকাল পড়ন্ত বিকেলে। করিমের বাড়ির দক্ষিণ পাশে কালনী নদীর তীরে অন্যদের সঙ্গে গানের মজমায় ছিলেন তিনি।
এমরান শাহর বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। বাবা কালা মিয়াও ছিলেন সংগীতপ্রেমী। প্রতিবছর করিম উৎসবে আসেন এমরান। এবার তাঁর সঙ্গে এসেছেন কুষ্টিয়ার আরেক বাউলশিল্পী মৌলি বিশ্বাস। তিনিও বাউল করিমের ভীষণ ভক্ত। দুজনে মিলে বাউল করিমের প্রিয় নদী কালনীর পাড় ধরে হাঁটছিলেন। কথায় কথায় এমরান শাহ আবদুল করিম ও তাঁর গানের সঙ্গে পরিচয়, উজানধলে আসা, শিষ্যত্ব গ্রহণসহ নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। শাহ আবদুল করিমের সহধর্মিণী সরলা বেগমকে তিনি ‘মা’ ডাকতেন। করিম নাকি তাঁকে দেখিয়ে বলতেন, ‘এ আমার আরেক পুয়া (ছেলে)।’
এমরান শাহ বলেন, ছোট্টবেলায় সেই গান শুনে মা অমৃতা বেগমের কাছে এই গান কার লেখা জানতে চেয়েছিলেন। তখনই অমৃতা বলেছিলেন, এটি শাহ আবদুল করিমের লেখা। সেই থেকে করিমের প্রতি তাঁর ভক্তি-শ্রদ্ধার শুরু। মা জানিয়েছিলেন, করিম তাঁর (মা) বাবার বাড়ি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে নিয়মিত যাতায়াত করেন। এর আট বছর পর একদিন এমরান খবর পান, করিম তাঁর মামার বাড়ি গেছেন। এমরান ছুটে যান সেখানে। ঘরে ঢুকে একজন দীর্ঘদেহী লোককে বসা দেখেন। কোনো কথা না বলেই ভক্তি দেন। করিম তখন বলেন, ‘তুমি কেটা বা, আমার কাছে কিতা চাও?’ এমরান তখন করিমের মতো গান নিয়ে থাকার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন।
সুনামগঞ্জে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী বাউল শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব। উৎসবে আসা করিম ভক্তরা দলবেঁধে তাঁর গান গাইছেন। শুক্রবার বিকেলে জেলার দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরে উজানধল গ্রামে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এমর ন শ হ ল কর ম র উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
মোশাররফ করিমের ‘চক্কর’ মুক্তি পাবে ঈদে, থাকছে এক ডজন নাটকেও
টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন মোশাররফ করিম। স্বাভাবিকভাবেই প্রতি বছরে ঈদে বৈচিত্র্যময় সব নাটক দিয়ে আলোচনায় থাকেন এই অভিনেতা। এ উৎসবে নাটক ও ওয়েব কনটেন্টের পাশাপাশি মুক্তি পাচ্ছে মোশাররফ করিম অভিনীত অভিনীত দুই সিনেমা। এগুলো হলো ‘বিলডাকিনি’ ও ‘চক্কর ৩০২’। সরকারি অনুদানে নির্মিত দুটি সিনেমাই মুক্তির জন্য ছাড়পত্র নেওয়া আছে। কয়েকবার বিলডাকিনির মুক্তির কথা শোনা গেলেও চুপ ছিলেন চক্করের নির্মাতা।
অবশেষে জানা গেলো, আলোর মুখ দেখছে সিনেমা দুটি। আসছে রোজার ঈদে মুক্তি পাবে ‘চক্কর ৩০২’, আর ‘বিলডাকিনি’র মুক্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে পহেলা বৈশাখে। প্রতিবারের মতো এবার রোজার ঈদেও সিনেমা মুক্তির মিছিলে যোগ দিয়েছে শাকিব খানের ‘বরবাদ’, সিয়ামের ‘জংলি’, আফরান নিশোর ‘দাগি’, সজল-ফারিয়ার ‘জ্বীন থ্রি’। এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে মোশাররফ করিমের ‘চক্কর ৩০২’।
ঈদে চক্করের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনেমার নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন। এই সপ্তাহেই আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। প্রচার শুরু হবে ১০ রমজান থেকে। শরাফ আহমেদ জীবন বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল সিনেমাটি কোনো উৎসবে মুক্তি দেওয়ার। সে হিসেবে রোজার ঈদে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। ১০ রমজান থেকে টানা প্রচার শুরু হবে। টিজার, ট্রেলার, গান প্রকাশসহ প্রচারের আরও পরিকল্পনা আছে।’
চক্কর ৩০২ সিনেমায় মোশাররফ করিম অভিনয় করেছেন একজন তদন্ত কর্মকর্তার চরিত্রে। নির্মাতা জানান, খুনের তদন্তের পাশাপাশি মানবিক একটি গল্প উঠে এসেছে সিনেমায়। সেই গল্প তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘিরেই এগিয়েছে। এই সিনেমায় মোশাররফ করিমের স্ত্রীর চরিত্রে আছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু।
ঈদের পরপরই বাংলা নববর্ষ। সেই উৎসবেও প্রেক্ষাগৃহে থাকবেন মোশাররফ করিম। নির্মাতা ফজলুল কবির তুহিন জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিলডাকিনি মুক্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর আগে কয়েকবার তারিখ ঠিক করেও মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন নির্মাতা। সবশেষ গত ২৪ জানুয়ারি মুক্তির কথা ছিল সিনেমাটি।
নির্মাতা তুহিন বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলাম। আমাদের এখানে প্রতি ঈদের সময় হলে দর্শকের সমাগম দেখা যায়। বন্ধ থাকা হলগুলোও খোলা হয়। সেই রেশ থাকতেই বৈশাখ উপলক্ষে দর্শকের সামনে বিলডাকিনি নিয়ে আসতে চাই।’
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের উপন্যাস ‘বিলডাকিনি’ অবলম্বনে একই নামে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। এতে উঠে আসবে নারীশক্তি ও মাতৃত্বের স্বাধীনতার গল্প। প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম ও পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী পার্ণো মিত্র।
এ ছাড়াও মোশাররফ করিমকে ঈদুল ফিতরের ডজন নাটকেও দেখা যাবে বলে জানা গেছে।