ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদি বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করবেন।

এই সফরের মাত্র কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র শতাধিক অবৈধ ভারতীয়কে শিকল পরিয়ে সামরিক বিমানে করে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করেছে। আরও অনেককে ফেরত পাঠানোরও পরিকল্পনা চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মোদির ১২-১৩ ফেব্রুয়ারির সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। কিন্তু এই ঘোষণার চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বহিষ্কৃত ১০৪ জন ভারতীয়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ। অথচ সবাই জানে যে দুই দেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। এই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মিশ্রিকে।

বিক্রম মিশ্রি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ভারত সরকারকে জানিয়েছেন যে আরও ৪৮৭ জন সন্দেহভাজন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বহিষ্কার আদেশ রয়েছে। তাঁদেরও ফেরত পাঠানো হতে পারে। ভারত প্রথমে এই তালিকার ব্যক্তিরা এলেও ভারতের নাগরিক কি না, তা যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত ১৬ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ হাজারের বেশি ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকার মেয়াদে বহিষ্কৃতদের সংখ্যা ছিল রেকর্ড পরিমাণে। এই তথ্য ভারতীয় সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী।

এদিকে ট্রাম্প এর আগেও ভারতের উচ্চ শুল্কহার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তাই ভারত এই সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক থেকে রেহাই পেতে আগ্রহী।

সর্বশেষ এই বহিষ্কারের জন্য সামরিক বিমান ব্যবহারের কারণ ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যবস্থায় এই বহিষ্কারের প্রক্রিয়া জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই সামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতও এতে সম্মতি দিয়েছে।’

মিশ্রি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এমন বহিষ্কার কার্যক্রমের জন্য যদি কোনো বাস্তবসম্মত বিকল্প পাওয়া যায়, তবে ভারত তা বিবেচনা করবে।

মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, প্রযুক্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন মিশ্রি।

ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে চীনের প্রভাব মোকাবিলায়। সেই কারণে ভারত দীর্ঘদিন ধরে আরও বেশি এইচ ওয়ানবি ভিসার দাবি জানিয়ে আসছে।

এই ভিসা সাধারণত বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য দেওয়া হয়। আর তা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। ভারতের রয়েছে বিশাল আইটি কর্মিবাহিনী। সেই কারণে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া এই ভিসার বড় অংশই ভারতীয়দের জন্য বরাদ্দ থাকে। গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি পুরোপুরি এই ভিসা প্রোগ্রামের পক্ষে।

ট্রাম্প ২৭ জানুয়ারি মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেই সময় তিনি অভিবাসনের প্রসঙ্গ আনেন। সেই সঙ্গে ভারতকে আরও বেশি মার্কিন নির্মিত নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উত্থাপন করেন।

এদিকে ট্রাম্প এর আগেও ভারতের উচ্চ শুল্কহার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তাই ভারত এই সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক থেকে রেহাই পেতে আগ্রহী।

একজন জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত ইতিমধ্যেই ৩০টির বেশি পণ্যের আমদানি শুল্ক পুনর্বিবেচনার পরিকল্পনা করছে। এসব পণ্যের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়ি, সৌরবিদ্যুৎ সেল এবং রাসায়নিক পদার্থ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ভারত ৩২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্তে রয়েছে।

ওয়াশিংটন সফরের আগে মোদি ১০ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি প্যারিস সফর করবেন। সেখানে তিনি এক এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সম্মেলনে অংশ নেবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করবেন।

শিবম প্যাটেল রয়টার্সের সাংবাদিক

রয়েটার্স থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ জাভেদ হুসেন

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সফর র

এছাড়াও পড়ুন:

শাহজাদপুরে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০

দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে উপজেলার মনিরামপুর এলাকায় বিএনপি অফিসের সামনে ঘটনাটি ঘটে।

শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী বলেন, “উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হননি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” 

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত ১২, বাড়ি ভাঙচুর

কানাইপুরে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, ৩০ বাড়ি ভাঙচুর

আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, শাহজাদপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন-আহ্বায়ক আনিছুর রহমান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুস।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ডা. এম এ মুহিত এবং কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্য সদস্য গোলাম সরওয়ারের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়ে সংঘর্ষটি হয় দুই পক্ষের মধ্যে । এসময় এলাকা জুড়ে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

গোলাম সরওয়ার অভিযোগ করে বলেন, “নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের কবর জিয়ারত করতে যাই। সেখান থেকে দলীয় কার্যালয়ে গেলে এম এ মুহিতের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছেন।” 

এ বিষয়ে জানতে ডক্টর এম. এ মুহিতের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশকে কেন্দ্র করে নিজ দলের মধ্যে এমন হামলা সত্যিই দুঃখজনক। এ ঘটনায় তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ