ব্যবসাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো উচিত। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বাড়ানো দরকার। সে জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে পারে। সেখানে সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। নীতিনির্ধারণে ব্যবসায়ীদের কথা বলার জন্য এমন প্ল্যাটফর্ম রাখা দরকার।

ওই কমিটিকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ব্যবসা সহজ করার জন্য সংস্কারগুলো করা যেতে পারে। এই সময়সীমা হতে পারে তিন বছর; এ ছাড়া ওই কমিটির আওতায় ব্যাংক, বিনিয়োগ, শুল্ক-করসহ বিভিন্ন খাতে একাধিক উপকমিটি করা যায়। শুধু সুপারিশ দেওয়া নয়, ওই সব সুপারিশ বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কাজ করতে হবে।

এসব কমিটি ব্যবসা ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান খুঁজবে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারবেন। আলোচনার ভিত্তিতে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। নীতিনির্ধারণে ব্যবসায়ীরা নিজেদের অংশীদার মনে করবেন। সে জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত। প্রতি মাসে কিংবা প্রতি তিন মাসে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হতে পারে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি ভালো রাখতে হলে ব্যবসা ভালো রাখতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাসের মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, ব্যবসায় ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দিনের জট খুলতে সরকারের সময় লাগছে; এই সময়টুকু সরকারকে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোক বসানো হয়েছে। এটি বেশ ইতিবাচক। এনবিআরের সংস্কার কমিটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করেছে। ব্যবসায়ীদের অনেক সুপারিশ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে রাখাও হয়েছে।

এখনো সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, যে কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে ব্যবসার ঋণের খরচ বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বেড়েছে। অন্যদিকে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া জ্বালানির দাম ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে আছে।

দেশের বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা।

আবুল কাশেম খান: সাবেক সভাপতি

ঢাকা চেম্বার

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় বায়ুদূষণ কমার লক্ষণ নেই, জানুয়ারিতে ভয়াবহ

শুকনা মৌসুমে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ প্রতিবছর বেশি থাকে; কিন্তু এবারের শুকনা মৌসুমে বায়ুদূষণের রেকর্ড ভাঙছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস শুকনা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। নভেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। সর্বশেষ নভেম্বরে বায়ুদূষণ ছিল আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিসেম্বরও বায়ুদূষণ ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর সদ্য শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে বায়ুদূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

পরিবেশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওই এক দিন নয়, পুরো জানুয়ারিতে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী।

জানুয়ারি মাসের দূষণের এ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া গত ৯ বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৫) বায়ুমান সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে ক্যাপস। প্রতিষ্ঠানটি গতকাল বৃহস্পতিবার এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে।

জানুয়ারি মাসে প্রায় প্রতিদিন বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বের নগরগুলোর মধ্যে এক থেকে পাঁচের মধ্যেই ছিল। চরম দূষণ এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী; কিন্তু দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরও বলছে, বায়ুদূষণ কমানো সময়সাপেক্ষ বিষয়। দ্রুত এটি কমছে না।

ভয়ানক দূষণ জানুয়ারিতে

বায়ুর মান ৩০০ পার হলেই তাকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলা হয়। অর্থাৎ যেসব স্থানে বায়ুর মান এমন, সেখানে দূষণ পরিস্থিতি ভয়ানক রকম খারাপ। গত ২২ জানুয়ারি সকালে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার সার্বিক বায়ুর মান ছিল ৫১৮। আর সারা দিনে বায়ুর মান ছিল ৬২২। সেদিনের বাতাসে যে ভয়াবহ দূষণ, তা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিশেষজ্ঞরা। শুধু ওই এক দিন নয়, পুরো জানুয়ারিতে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী।

ক্যাপসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের বায়ুদূষণ আগের আট বছরের জানুয়ারি মাসের গড় মানের তুলনায় শতকরা ২৪ দশমিক ৫২ ভাগ বেশি ছিল। আট বছরের (২০১৭-২৪) জানুয়ারি মাসের গড় দূষণের মান ছিল ২৫৫ দশমিক ৪৮। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা ছিল ৩১৮। আগের বছরের জানুয়ারিতে এটি ছিল ৩০২।

নভেম্বর থেকে মার্চ মাস শুকনা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। নভেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। সর্বশেষ নভেম্বরে বায়ুদূষণ ছিল আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৩৭ এবং ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি ছিল আগের বছরগুলোর তুলনায়।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার বায়ুর মানের ক্রমাগত অবনমন দেখছি। আর এবারের শুকনা মৌসুমে দূষণের রেকর্ড হচ্ছে। গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—প্রতিটি মাসেই আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দূষণ দেখা গেছে। দূষণ থেকে নগরবাসীর কোনো মুক্তির দিশা দেখছি না।’

বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ থাকলে ‘ভালো’ বলা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘গ্রহণযোগ্য’। ১০১ থেকে ১৫০ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর’, ১৫১ থেকে ২০০ ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০০–এর বেশি হলে তা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’।

ক্যাপসের তথ্য অনুযায়ী, এবারে জানুয়ারি মাসের ৩১ দিনের মধ্যে ১৬ দিনই ছিল ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ১৫ দিন ছিল ‘অতি অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ বায়ুমান।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ আসলে সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু ফল আসতে অপেক্ষা করতে হবে।’

ঢাকার বায়ুর মানের ক্রমাগত অবনমন দেখছি। আর এবারের শুকনা মৌসুমে দূষণের রেকর্ড হচ্ছে। গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—প্রতিটি মাসেই আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দূষণ দেখা গেছে। দূষণ থেকে নগরবাসীর কোনো মুক্তির দিশা দেখছি না।ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্থাপত্য অধিদপ্তরের ব্যবহারিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
  • যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব স্থগিত করলেন আদালত
  • ঢাকায় বায়ুদূষণ কমার লক্ষণ নেই, জানুয়ারিতে ভয়াবহ