বিপিএলে বিদেশি খেলোয়াড়দের সব দায়িত্ব এখন থেকে বিসিবির
Published: 8th, February 2025 GMT
দর্শকের বিপুল সাড়ার মধ্য দিয়ে কাল রাতে বিপিএল শেষ হলেও টুর্নামেন্টজুড়ে চলা পারিশ্রমিককেন্দ্রিক নেতিবাচক ঘটনার রেশ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
বিদেশি ক্রিকেটারদের সময়মতো পারিশ্রমিক না দেওয়া নিয়ে এবার দেশে–বিদেশে যে আলোড়ন উঠেছে, ভবিষ্যতে তা এড়াতে এখন থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিপিএল ও দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, এখন থেকে বিপিএলের ড্রাফটে থাকা সব বিদেশি ক্রিকেটারের দায়িত্ব নেবে বোর্ড।
বিসিবির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিন ধরনের উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত, বিদেশি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের সরাসরি ব্যবস্থাপনা। বিপিএল ড্রাফটে থাকা খেলোয়াড়দের চুক্তি ও ম্যাচ ফির অর্থ স্বচ্ছভাবে ও সময়মতো পরিশোধের দায়িত্ব নেবে বিসিবি।
দ্বিতীয়ত, সার্বিক লজিস্টিক্যাল সহায়তা। বিপিএল শেষে বিদেশি খেলোয়াড়দের নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছানোর সব লজিস্টিক্যাল বিষয় তত্ত্বাবধান করা হবে।
তৃতীয়ত, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে আর্থিক প্রটোকল উন্নততর করা। খেলোয়াড়দের স্বার্থ ও পারিশ্রমিক পরিশোধের প্রক্রিয়া সুরক্ষিত করতে ও আরও নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রটোকল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ বিপিএলে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব ক্রিকেটারদের জন্য একটি পেশাদার অভিজ্ঞতা দেওয়ার ব্যাপারে বিসিবির প্রতিশ্রুতিকে প্রমাণ করে। অর্থিক ও পরিচালনার ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করতে বিসিবি বাকি অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে।’
একাদশ বিপিএল ফাইনালের পর দিন বিসিবির ‘দায়িত্বগ্রহণ’ সম্বলিত ঘোষণাটি এসেছে পারিশ্রমিক বিষয়ে টালমাটাল কয়েক সপ্তাহের জেরে। এবারের বিপিএলে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফদের পারিশ্রমিক না দেওয়া নিয়ে বারবার শিরোনাম হয়েছে দুর্বার রাজশাহী। খেলোয়াড়দের অনুশীলন বর্জন, টাকা না পেয়ে বিদেশিদের না খেলা, একাধিকবার চেক বাউন্স, বিদেশিদের হোটেলে আটকে থাকাসহ বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছে দলটি। পারিশ্রমিক না পাওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিল চিটাগং কিংস দলেও।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
মহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প
এই গল্পটি যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি উপভোগ্যও। রাসুল (সা.) তখন প্রায় ৫০ বছর বয়সী। দশ বছর ধরে তিনি ইসলাম প্রচার করেছেন। তাঁকে চরম বিরোধিতা, নির্যাতন ও নানা রকম কষ্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। তবু তিনি কখনো করুণা, ধৈর্য কিংবা সহনশীলতা হারাননি।
একদিন তিনি মক্কার বাইরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তাঁর সামনে পড়ল রুকানা নামে বিখ্যাত এক ব্যক্তি। রুকানা ছিল কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে বলশালী, সেরা কুস্তিগির। রুকানা মহানবীকে (সা.) ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করত না; তবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে সে দ্বিধা ও সংশয়ে ছিল। সে বুঝতে পারত না নবীজি (সা.) আসলে কী প্রচার করছেন।
মহানবী (সা.) তাকে দেখে বললেন, ‘রুকানা, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।’
রুকানা বলল, ‘তা হলে চলো, আগে কুস্তি লড়ি, তারপর কথা হবে।’
আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবী১৩ নভেম্বর ২০২৩নবীজি (সা.) হাসিমুখে বললেন, ‘ঠিক আছে, কুস্তি হোক।’
উভয়ে প্রস্তুত হলেন, কুস্তি শুরু হলো। রাসুল (সা.) রুকানাকে এক চাপে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানা বিস্ময়ে হতবাক! সে জীবনে কখনো হারেনি। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আবার হোক।’
দ্বিতীয়বারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানা এবার পুরোপুরি হতবাক। সে বলল, ‘আরও একবার!’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তৃতীয়বারও তাকে মাটিতে আছড়ে ফেললেন। রুকানা এবার সত্যিই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বলল, ‘আপনি বুঝতে পারছেন না, আমি জীবনে কখনো হারিনি। কেউ কখনো আমাকে মাটিতে ফেলতে পারেনি। এটা কীভাবে সম্ভব।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তবে শোনো, আমি তোমাকে আরও আশ্চর্য কিছু দেখাব।’
একটু দূরে একটি গাছ ছিল। রাসুল (সা.) সেই গাছকে ডাক দিলেন। গাছটি নিজে থেকেই স্থান পরিবর্তন করে তাঁর কাছে চলে এলো। তিনি গাছকে বললেন, ‘ফিরে যাও।’ গাছটি আবার ফিরে গেল তার আগের জায়গায়। রুকানা এই অলৌকিক ঘটনা দেখে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইবাদতযোগ্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার নিজের পথে রওনা দিলেন।
আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
এই ঘটনাটি আমাদের শেখায়, রাসুল (সা.) কীভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করতেন, কীভাবে ইসলাম প্রচার করতেন। তিনি ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে বরকতময় মানুষ। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অমূল্য। তবু তিনি মানুষকে এতটাই ভালোবাসতেন, এতটাই বুঝতেন এবং গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি একজন মানুষের সঙ্গে সময় নিয়ে কুস্তিও করতেন, শুধু তাকে বোঝানোর জন্য।
তিনি চাইলে শুধু একটি বক্তৃতা দিয়েই বা হাতে একটি পুস্তিকা ধরিয়ে দিয়েই চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করতেন না। তিনি আগে মানুষকে বুঝতেন, তাদের মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিতেন। এ জন্যই মানুষ তাঁকে ভালোবাসত, তাঁর কথা শুনত, আর ইসলাম গ্রহণ করত। তাঁর এই মনোভাবই আমাদের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত।
যখন আমাদের কারও সঙ্গে ইসলামের কথা বলার সুযোগ আসে, তখন আগে সেই মানুষটিকে বোঝার চেষ্টা করি, তার মতো করে কথা বলি। আর যদি তাতে একটু কুস্তিও লড়তে হয়—তাহলে তাই হোক!
সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ৮,৪৫০; সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৭৭৪)
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫