সাজেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়, রাত কেটেছে ক্লাবঘর-মসজিদে
Published: 8th, February 2025 GMT
মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। পর্যটন মৌসুমের শেষের দিকে এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পর্যটক সাজেক রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে গেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটকই অগ্রিম বুকিং করে না যাওয়াতে বিপাকে পড়েছেন। হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে অনেকেই রাত কাটিয়েছেন হোটেল মোটেলের বারান্দায়, ক্লাবঘর, স্থানীয়দের বাড়ি ও মসজিদে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রায় ৫ হাজারের মত পর্যটক সাজেক বেড়াতে আসেন। সাজেকে বর্তমানে ১১৬টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪ হাজারের মত পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু অনেক পর্যটক অগ্রিম বুকিং না করে যাওয়াতে কোনো রিসোর্ট কটেজে রুম পাননি। এতে অনেকে ফিরে গেলেও কিছু পর্যটক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য থেকে গেছেন। থাকার জায়গা না পাওয়া পর্যটকরা কটেজ মালিক সমিতি ও স্থানীয়দের সহায়তায় ক্লাবঘর, প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয়দের বাড়িঘর ও মসজিদে রাত্রিযাপন করেছেন।
জুমঘর ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক ইয়ারং ত্রিপুরা বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) বেশ ভালোই পর্যটক সমাগম হয়েছে সাজেকে। যারা অগ্রিম বুকিং না দিয়ে এসেছেন তারাই রুম পাননি। তবে আমি শুনেছি কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেবো সপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অগ্রিম বুকিং করেই সাজেক আসার জন্য।”
সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “শুক্রবার ২৩০টির মতো আমাদের জিপ, ৭০টি মাহিন্দ্রা ও ১০০টির মোটরসাইকেল সাজেকে গিয়েছে। বেশকিছু পর্যটক রাতে থাকার জন্য রিসোর্ট কটেজ পাননি। উনাদের জন্য স্কুল, ক্লাবঘরসহ অন্যান্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছে সমিতির পক্ষ থেকে। তবে ১২/১৩ জন পর্যটক গাড়িতে থেকেছেন।”
কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেকের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, “গতকাল সাজেকে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ পর্যটক এসেছেন। প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। যারা অগ্রিম বুকিং না করে এসেছেন তাদের অনেকেই রুম পাননি। আমরা আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে ৩শ পর্যটককে ক্লাবঘর, ত্রিপুরা ক্লাবঘর, নতুন নির্মাণাধীন কটেজ ও স্থানীয়দের বাসা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”
কোন পর্যটক রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হয়তো আনাচে কানাচে কোন পর্যটক গাড়িতে থেকে থাকতে পারেন। আমাদের কাছে যারাই এসেছেন আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি।”
ঢাকা/শংকর/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর থ ক র ব যবস থ এস ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল, উৎসবের আমেজ
শীত বিদায়ের আগে সমুদ্রের ঢেউ আর সূর্যাস্তের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। সপ্তাহিক ছুটির দিনে লাবণি, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট পরিণত হয়েছে পর্যটকদের মিলনমেলায়। সৈকতের বালুচরে গাঁ ভাসিয়ে, গলা সমান পানিতে সাগরের উত্তাল ঢেউ উপভোগ করে কিংবা বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে আনন্দে মেতে উঠেছেন ভ্রমণপ্রেমীরা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই সৈকতের প্রধান তিনটি পয়েন্টে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। কেউ সমুদ্রের নোনাজলে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে, কেউবা বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে বসে ছবি তুলে ধরে রাখতে চাইছেন স্মৃতির পাতায়। বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক আর ঘোড়ার পিঠে চড়ে উত্তেজনার রোমাঞ্চ উপভোগ করছেন তরুণরা। শিশুদের কোলাহল, ঢেউয়ের গর্জন আর পর্যটকদের হাস্যরসে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত।
সুনামগঞ্জ থেকে আসা তৌফিক হাসান বলেন, “প্রথমবারের মতো পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সৈকতের এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে সত্যিই মুগ্ধ। কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই এখানে আসতে হবে।”
আরো পড়ুন:
সেন্টমার্টিনে পর্যটক বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের হতাশা
সাজেকে গাড়ি উল্টে ৬ পর্যটক আহত
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমনা পারভীন বলেন, “আমি ও আমার বন্ধুরা প্রতিবছর কক্সবাজারে ঘুরতে আসি। শীতের আমেজে সৈকতের ভিড় দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। বিচ বাইকে চড়ার অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল। যানজট ও ব্যস্ততার শহর ভুলে এখানে এসে একেবারে ফ্রেশ লাগছে।”
শেরপুরের ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, “সাগরের ঢেউয়ে গা ভাসানোর অনুভূতি সবসময়ই অন্যরকম। আমি জীবনে পরিবার নিয়ে অনেকবার কক্সবাজার এসেছি, কিন্তু প্রতিবারই নতুন কিছু পাওয়ার অনুভূতি হয়। সৈকত ছাড়াও পাহাড় এবং দীর্ঘ মেরিনড্রাইভের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি।”
গলা সমান পানিতে সাগরের উত্তাল ঢেউ উপভোগ করছেন ভ্রমণপ্রেমীরা
এদিকে, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড সদস্যরা দিনভর সৈকতে কাজ করছেন। তারা পর্যটকদের সুবিধার্থে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন ও আবুল কালাম বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে রাতদিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কোনো পর্যটক হয়রানি হচ্ছে কি-না এবং গভীর পানিতে যাতে না নামেন সে ব্যাপারে খেয়াল রাখি। পর্যটকের সন্তুষ্টিই আমাদের লক্ষ্য।”
এদিকে, পর্যটকের এই বাড়তি ভিড়ে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন দোকানগুলোতে দেখা গেছে বাড়তি ব্যস্ততা।
হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, “আশা করছি বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেও এই পর্যটনপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে, যা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করবে।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন বলেন, “পর্যটকদের উদ্দেশে কিছু বিশেষ নির্দেশনা- যেমন নিরাপত্তার স্বার্থে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সৈকতের পরিবেশ সুন্দর রাখতে পর্যটকদের প্লাস্টিক ও আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ