ব্যবহারকারীদের আদান-প্রদান করা তথ্যের নিরাপত্তায় গোপনীয়তা সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই নিজেদের মেসেজিং অ্যাপ ‘আইমেসেজ’-এ এনক্রিপশন পদ্ধতিতে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকে অ্যাপল। ফলে চাইলেও আইফোন, আইপ্যাডসহ অন্য কোনো অ্যাপল পণ্য থেকে পাঠানো তথ্য প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেন না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাপলকে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী যেকোনো অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারীর ক্লাউডে সংরক্ষণ করা এনক্রিপশন তথ্য পড়ার সুযোগ পাবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘টেকনিক্যাল ক্যাপাবিলিটি নোটিস’ নামে একটি নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাপলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস অ্যাক্ট, ২০১৬–এর আওতায় যুক্তরাজ্য সরকার গত মাসে অ্যাপলকে যেকোনো অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারীর ক্লাউডে সংরক্ষণ করা এনক্রিপশন করা তথ্য পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নীতির সঙ্গে আপস করতে না চাইলে অ্যাপল যুক্তরাজ্যে নিজেদের এনক্রিপ্টেড ক্লাউড স্টোরেজ সেবা বন্ধ করে নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঅ্যাপলের পণ্যের নামের শুরুতে ‘আই’ লেখা থাকে কেন০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, অ্যাপল চাইলে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। তবে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেও প্রতিষ্ঠানটিকে দেশটির সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘প্রযুক্তিগত নির্দেশনা বা গোয়েন্দাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’

আরও পড়ুনআইফোনে থাকা ছবির তথ্য কি অ্যাপল জানতে পারে০৩ জানুয়ারি ২০২৫

এর আগেও বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে অ্যাপল। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত এক বন্দুকধারীর আইফোন আনলক করতে অ্যাপলের সহায়তা চেয়েছিল। তবে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি সেই অনুরোধ নাকচ করে দেয়।

আরও পড়ুনআইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব দ্বিগুণ করতে অ্যাপলের ৩ পরামর্শ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

প্রসঙ্গত, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন মূলত অনলাইনে নিরাপদে যোগাযোগের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রেরকের কাছ থেকেই বার্তাতে বিশেষ সংকেত (কোড) যুক্ত করে প্রাপকের কাছে পাঠানো হয়। প্রাপকের কাছে পৌঁছানোর পর কোডযুক্ত বার্তাকে আবার সাধারণ বার্তায় পরিণত করে। এতে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ বার্তায় থাকা তথ্য জানতে পারেন না। এমনকি তথ্য বিনিময় করা অ্যাপ বা যোগাযোগমাধ্যমগুলোর পক্ষেও কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয় না। ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে অ্যাপল ২০১৪ সালে পূর্ণাঙ্গ এনক্রিপশন–সুবিধা চালু করে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি ৯৩ শতাংশ

দেশের হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি রয়েছে। কাজেই দেশে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে সঠিক ব্যক্তিকে কাজের সুযোগ না দেওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ একটি ধারা বাতিল ও ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের সাত দফা দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টস। এতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মূল প্রবন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টসের যুগ্ম আহবায়ক ফাতেমা খান মজলিস বলেন, দেশজুড়ে ৬৩৯টি সরকারি হাসপাতাল, ৫ হাজার ৫৭৭টি বেসরকারি হাসপাতাল, ১০ হাজার ৭২৭টি রোগনির্ণয় কেন্দ্র এবং ১৪০টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। অথচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে একজনও প্রাণরসায়নবিদ নেই। প্রাণরসায়নবিদদের হয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ করেন টেকনিশিয়ানরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ২০ হাজার প্রাণরসায়নবিদ দরকার। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকগুলোয় রোগনির্ণয়ে কাজ করেন মাত্র ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণরসায়নবিদ। ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি নিয়ে চলছে দেশের হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলো।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হোসেইন উদ্দিন শেখর বলেন, নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতার কারণে ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে’ প্রাণরসায়নবিদদের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রোগনির্ণয়ের কিছু কাজ আছে, সেগুলো শুধু প্রাণরসায়নবিদেরা করতে পারেন।

প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের’ ধারা ৯–এর ৪ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সব ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি রিপোর্টে বিএমডিসি রেজিস্টার্ড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।’ মূল উপস্থাপকসহ প্রায় সব আলোচক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ধারা বৈষম্যমূলক, অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক।

আরও পড়ুনরোগনির্ণয়ে বায়োকেমিস্টদের অবদান সরকারিভাবে উপেক্ষিত২৩ জানুয়ারি ২০২৫

অনলাইনে আলোচনায় যুক্ত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিটিকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্র ও মলিকুলার বায়োলজির শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ দেশে মেধা পাচার হওয়ার প্রধান কারণ কাজ করতে না দেওয়া। আমার জায়গা আমাকে দেন। আপনারা নিজেদের জায়গায় কাজ করুন।’

আয়োজকদের সাত দফা দাবির মধ্যে আছে—স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন থেকে বিতর্কিত ধারা বাদ, প্রাণরসায়নবিদদের জন্য নীতিমালা তৈরি, সব ল্যাবরেটরিকে অ্যাক্রিডিটেশনের আওতায় আনা, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রাণরাসায়নবিদ ও ল্যাবরেটরি সায়েন্টিস্ট নিয়োগ, জেলা পর্যায়ে এ ধরনের পদ সৃষ্টি, নীতি নির্ধারণে প্রাণরসায়নবিদ অন্তর্ভুক্ত করা এবং অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে পদোন্নতির পথ খোলা রাখা।

আরও পড়ুনমানুষের রোগও নির্ণয় করতে পারে চ্যাটজিপিটি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয় সক্ষমতা ও যোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাব স্বীকৃত। এসব প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি পরিচালনা করেন প্রাণরসায়নবিদেরা। দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের রোগনির্ণয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিয়ার রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুনঅনলাইনে রোগনির্ণয়: ‘ডা. গুগল’ থেকে সাবধান৩১ অক্টোবর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ