স্মৃতি হলো সময়ের দরজা। চাইলেই ফিরে যেতে পারি, কিন্তু ‘বদলাতে পারি না, যেমন বদলাতে পারি না মৃত্যুকে, বদলাতে পারি না আমাদের প্রিয় আহমেদ রুবেল ভাইকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে। দেখতে দেখতে একটি বছর পেরিয়ে গেল, তিনি চলে গেছেন। গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রিয় মানুষটির আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। 
যে মানুষটির সান্নিধ্য পেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছি আমি, আমরা, আমাদের নাট্যজগৎ। সেলিম আলদীন স্যারের ঢাকা থিয়েটার দিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর পথচলা শুরু। হুমায়ূন আহমেদের পোকা নাটকের সেই ঘোড়া মজিদ থেকে শুরু করে অসংখ্য জনপ্রিয় চরিত্রায়ণ উজ্জ্বল তারার মতো ফুটে আছে আমাদের মিডিয়া অঙ্গনে। তাঁর স্মৃতিচারণ করতে এসে বুকটা কেঁপে ওঠে বারবার। 
তখন আমি সদ্য সহকারী পরিচালক হিসেবে আনিসুল হক রচিত এস এ হক অলিকের পরিচালিত ‘দ্বিতীয় জীবন’ নাটকের শুটিং করতে জামালপুরে। প্রথিতযশা অনেক শিল্পী সেই সেটে অভিনয় করছিলেন। নতুন বলে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছিল দেখে আহমেদ রুবেল ভাই আমাকে ডেকে বসলেন তাঁর রুমে। স্ক্রিপ্ট ধরে শেখালেন সব পদ্ধতি। একজন পরিচালকের দৃষ্টি বুনে দিলেন আমার চোখে। সাধারণ সহকারী থেকে প্রধান সহকারী হতে আমার সময় লাগেনি বেশি দিন। 

এরপর বহুদিন তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ ছিল না আমার। তখন আমার প্রথম ধারাবাহিক হিসেবে একুশে টেলিভিশনে ‘ললিতা’ নাটকের পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটেছে মিডিয়াপাড়ায়। চারদিকে নাটকটির জনপ্রিয়তা ছুঁইছুঁই। ঠিক তখনই কোনো একদিন আহমেদ রুবেল ভাই আমাকে ফোন দিয়ে অভিবাদন জানালেন। তাঁর অনুপ্রেরণা আমার পরিচালক সত্তাকে স্বীকৃতি দিল, এভাবেই বলব। সেই নাটকে একটি বিশেষ চরিত্রে তিনি অভিনয় করলেন। আমি মুগ্ধ হই, যখনই তিনি একটি চরিত্রকে পোর্টেইট করেন। আমি প্রতিক্ষণে শিখি, সমৃদ্ধ হই। একদিন তিনি ফোন করলেন আমাকে, বললেন, ‘তুমি এত ভালো লেখ, আমি তো মুগ্ধ, একদম উপন্যাসের মতো।’
আমার লেখা একটি স্ক্রিপ্ট পড়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন। আমি আরও উৎসাহ পেলাম লিখতে। তারপর থেকে আমার সব কাজেই তিনি ছোট-বড় সব চরিত্রে সুনিপুণভাবে চরিত্রায়ণ করে অভিনয় করে গেছেন। আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। 

তাঁর মতো এত বড় মাপের বিশ্বমানের অভিনেতা আমার চোখে খুব কমই পড়েছে। সেটে যখনই ঢুকতেন, যেই চরিত্রে তিনি চরিত্রায়ণ করবেন সেই চরিত্রে প্রবেশ করেই তিনি সেটে ঢুকতেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করা, এ আমার বাড়তি পাওনা। একজন পরিচালক হিসেবে এ আমার সৌভাগ্য। সেটের ভেতর আনন্দ, ক্ষণে ক্ষণে জোকস বলে সেটকে আনন্দময় করে রাখতেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় এবং ঐতিহাসিক চরিত্রে কণ্ঠ নকল করতে পারতেন। এমনকি গানের গলা ছিল বেশ দরাজ। যে কোনো গানকে প্যারোডি করে গেয়ে মাতিয়ে রাখতেন যে কোনো আড্ডা। 

এমনও দেখেছি, বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করতে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন স্পটে থেকেছেন আমার সঙ্গে। একদিন সকালে উঠে দেখি ঢাকা কারাগারে একটি রুমে তিনি বেঞ্চের ওপর ঘুমিয়ে আছেন। আহারে রুবেল ভাই, কী দিয়ে শোধ হবে এ ঋণ। এভাবে আমাদের শূন্য করে চলে যাওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? কোন অভিমান বুকে নিয়ে চলে যেতে হলো আপনাকে? কিছুই দিতে পারিনি, শুধু দিয়ে গেছেন আমাকে, আমাদের, গোটা বাংলাদেশকে। ওপারে দারুণ থাকবেন। 

ইট উইল বি দ্য পাস্ট
অ্যান্ড উইউইল লাইভ দেয়ার টুগেদার।
নট এজ ইট ওয়াস টু দ্য লাইভ
বাট এজ ইট ইজ রিমেমবারড। 
ইট উইল বি দ্য পাস্ট।
উইউইল অল গো ব্যাক টুগেদার। 
এভরিওয়ান উই এভার লাভড,
অ্যান্ড লস্ট অ্যান্ড মাস্ট রিমেমবার। 
ইট উইল বি দ্য পাস্ট। 
অ্যান্ড ইট উইল লাস্ট ফরএভার। 

বরেণ্য কবি পেট্রিক ফিলিপসের কবিতা দিয়ে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে রইলাম, প্রিয় আহমেদ রুবেল। 

লেখক: নাট্যনির্মাতা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহম দ র ব ল আহম দ র ব ল আম র স আম দ র পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন

ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৈরি পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাককে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি (কারপাস) দেয়নি। এতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে গতকাল বুধবার ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ২৯ জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে পণ্য বোঝাই করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এতে পণ্যগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নিয়েছে।

বেনাপোলে এই পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ছিল পদ্মা ট্রেডিং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অনিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘যে রপ্তানিকারকের পণ্য ফিরে গেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কিছু জানাননি। তবে আমরা জেনেছি, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে কারপাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

২০২০ সালের ২৯ জুন এক আদেশে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।

বিবৃতিতে ভারত দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়। এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানি কম হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ