এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গতিসীমা না মানলে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভিডিও মামলা
Published: 8th, February 2025 GMT
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত গতির জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভিডিও দেখে মামলা শুরু হবে। সম্ভাব্য সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিসীমা অতিক্রমকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা করবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আজ শনিবার এ ঘোষণা দিয়েছে।
ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের যানচলাচল, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.
শনিবার রাজধানীর কুড়িলে এক্সপ্রেসওয়ের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল বিল্ডিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালালে পুলিশকে জানানো হবে। ভিডিও পুলিশকে সরবরাহ করা হবে। কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে গতিসীমা লঙ্ঘনে তিনবার মামলা হয়ে থাকলে সেটিকে ভবিষ্যতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক বলেন, ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে প্রধানত পাঁচ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এগুলো হলো-ওভারহিট গাড়ি, চাকা পাংচার, জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়া, বিমানবন্দরের যাত্রী সেবা, দুর্ঘটনা। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু জানুয়ারি মাসে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করা অবস্থায় ৯০টি গাড়ির ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দেয়। টায়ার পাংচারের ঘটনা ঘটে ৫১টি, জ্বালানি ফুরিয়ে গাড়ি বন্ধের ঘটনা ঘটে ২০টি এবং ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কিছু দুর্ঘটনা এবং উদ্ধারের ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পেঁয়াজের আবাদ করে এবার লোকসানের শঙ্কায় কৃষকেরা
চলতি বছর মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু দাম কম থাকায় তেমন লাভ হয়নি কৃষকদের। এ অবস্থায় কৃষকের ভরসা হালি পেঁয়াজ। কিন্তু সম্প্রতি মাঠে মাঠে পেঁয়াজের খেতে ‘আগা মরা’ রোগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ফলন বিপর্যয় ও বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
সরেজমিনে সম্প্রতি দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর—এই তিন উপজেলাতেই পেঁয়াজগাছে আগা মরা রোগ দেখা গেছে। এই রোগে আক্রান্ত গাছগুলো আগা থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার শঙ্কা আছেন কৃষকেরা।
পেঁয়াজ চাষের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এর একটি হলো মুড়িকাটা ও অপরটি হলো হালি পদ্ধতি। মুড়িকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়; সেই পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। অন্যদিকে হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়, যা মার্চ-এপ্রিলে ঘরে তোলা হয়।
সাধারণত হালি পদ্ধতিতেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হয়। কিন্তু এ বছর হালি পদ্ধতিতে আবাদ করা পেঁয়াজের খেতেই আগা মরা রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা বলছেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করে এবার ব্যাপক লোকসান দিয়েছেন তাঁরা। এর ওপরে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে হালি পেঁয়াজের আগা মরা রোগ এসেছে।
এদিকে পেঁয়াজগাছের আগা শুকিয়ে যাওয়ার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করেছে স্থানীয় কৃষি কার্যালয়।
স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সাঁথিয়া উপজেলা। এবার সুজানগরে ১৯ হাজার ২৮০ হেক্টর, সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৭০০ হেক্টর ও বেড়ায় ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ১০-১২ দিন ধরে তিন উপজেলায় হালি জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠছে।
মুড়িকাটা পেঁয়াজে লোকসানচাষিরা জানান, এবার মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম কম থাকায় তাঁদের লোকসান হয়েছে। তাঁরা আশায় ছিলেন হালি পেঁয়াজের হয়তো ভালো দাম পাবেন। কিন্তু হালি পেঁয়াজেরও ভালো দাম মিলছে না; বরং পেঁয়াজখেতগুলো আগা মরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পেঁয়াজের গুটি খুব একটা বড় হয়নি। এ অবস্থায় ফলন কমে যেতে পারে।
পাবনার বেশ কয়েকজন কৃষক প্রথম আলোকে জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ টাকা। আর হালি পেঁয়াজে এই খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। তবে স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে যথাক্রমে ৪১ ও ৩৮ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে মাত্র ১৩ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকের। আর আগা মরা রোগে হালি পেঁয়াজের ফলন কমে গেলে লোকসান আরও বেড়ে যাবে বলে তাঁদের ধারণা।
বৃষ্টির পর গাছের আগা মরছেসরেজমিনে বেড়া উপজেলার বড়শিলা, চাকলা, নলভাঙা এবং সাঁথিয়া উপজেলার বায়া, করমজা, পুন্ডুরিয়া গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। তাতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ খেতের পেঁয়াজগাছগুলোর মাথা শুকিয়ে লালচে রং ধারণ করেছে। কোনো কোনো জমির পেঁয়াজগাছ প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে গেছে। পেঁয়াজের আকারও বেশ ছোট হয়েছে।
১০ থেকে ১২ জন পেঁয়াজচাষি জানান, আবাদের শুরুতে খেতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু গাছ বড় হতেই এর মাথা মরে যেতে শুরু করে। স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জানালেও তাঁরা এ ব্যাপারে সমাধান দিতে পারেননি।
বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে হালকা বৃষ্টি হইছিল। এর পর থেকেই গাছের আগা মইর্যা যাতেছে। এ পর্যন্ত দুইবার গাছে ওষুধ দিছি। কিন্তু কুনু কাজ হতেছে না।’ চলতি বছর এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬০ মণ পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন সাইদুল। তবে শেষ পর্যন্ত ৩০ মণ ফলন টিকবে কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁর।
সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজের ভালো দাম দেইখা এবার একটু বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করিছি। কিন্তু বাজারে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম নাই। এর ওপর আগা মরা রোগে পেঁয়াজখেত শ্যাষ হয়া যাতেছে। পেঁয়াজের আবাদে এবার লস আর লস।’
সাঁথিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, দিনে ভ্যাপসা গরম পড়ছে আর রাতে শীত; আবার ভোরে কুয়াশাও দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্য ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। মূলত এ কারণেই হালি পেঁয়াজগাছে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে কৃষকের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে সঞ্জীব কুমার বলেন, ইতিমধ্যেই পেঁয়াজের গুটি মোটামুটি বড় হয়ে গেছে। আর মাসখানেকের মধ্যেই পেঁয়াজের অনেকটাই উঠে যাবে। আর গাছের আগা শুকিয়ে যাওয়া রোধের জন্য কৃষকদের পরিমিত পরিমাণে রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।