সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
Published: 8th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে শান্তিগঞ্জ উপজেলার আহসানমারা সেতুর পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন জমির হোসেন (৩০) ও আলী নূর (২৬)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে আহসানমারা সেতু এলাকায় সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটগামী বাসের সঙ্গে শান্তিগঞ্জ থেকে বিপরীতমুখী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশায় থাকা পাঁচজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। পরে শান্তিগঞ্জ থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকরাম আলী বলেন, যাত্রীবাহী বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন এবং তিনজন আহত হয়েছেন। নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিস্তা মহাপরিকল্পনার নামে ছেলে ভোলানোর গল্প আর কত দিন
বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। দুপাড় প্রায় ২৩০ কিলোমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের কাছে জানতে পারলাম, এ বছর তিস্তা নদীর ৪৫ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ। এর মধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভয়াবহ। আমি গত ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কলোমিটারের ১০০ কিলোমিটার নৌপথে ঘুরেছি। অবশিষ্ট ১৫ কিলোমিটার ঘুরেছি ফেব্রুয়ারির শুরুতে। দেখলাম নদীর একেক স্থানে একেক অবস্থা। বিশেষ করে তিস্তা নদীর বাম তীরে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর এবং চিলমারী উপজেলা অংশে একটানা দীর্ঘ ভাঙন আছে। ভাঙন আছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাতেও। এই ভাঙনের প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে এসব অঞ্চলে এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।
রাজারহাটে গতিয়াশামে বাম তীরে দৈর্ঘ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় নদী ভেঙে ভেঙে অনেক ভেতরে ঢুকে গেছে। কাউনিয়ার তিস্তা সেতুতে দাঁড়িয়ে নদীর পূর্ব দিকে তাকালেই সেটি বোঝা যায়। তিস্তা কয়েক বছর ধরে যে ভয়ংকর আচরণ করে আসছে, এ বছরও যদি একই ঘটনা ঘটে, তাহলে গতিয়াশামে তিস্তার নতুন পথ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রতিবছর তিস্তার ভাঙন আর বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার। ৪৫ কিলোমিটারের ভাঙনপ্রবণ এলাকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সর্বোচ্চ আড়াই শ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এই আড়াই শ কোটি টাকা হয়ে উঠতে পারে এক লাখ কোটি টাকার ক্ষতি প্রতিরোধমূলক শক্তি। এটি খুবই স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা।তিস্তায় একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, এই ধোয়া তুলে গত আট বছরে কোনো কাজ করা হয়নি। যখন তিস্তা ভয়ংকর হয়ে ওঠে এবং ভাঙে, তখন কিছু জিও ব্যাগ (বালুভর্তি বস্তা) ফেলা হয়। পরিকল্পিতভাবে আগে থেকে প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে অনেক কম ব্যয়ে এর সুরক্ষা সম্ভব ছিল।
আগের সরকারগুলো রংপুর অঞ্চলের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ সব সময়ই করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আসা অন্তর্বর্তী সরকার সেই বৈষম্য করবে না বলে আমারা মনে করি। প্রতিবছর তিস্তার ভাঙন আর বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার। ৪৫ কিলোমিটারের ভাঙনপ্রবণ এলাকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সর্বোচ্চ আড়াই শ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এই আড়াই শ কোটি টাকা হয়ে উঠতে পারে এক লাখ কোটি টাকার ক্ষতি প্রতিরোধমূলক শক্তি। এটি খুবই স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা।
এরপরই প্রয়োজন হবে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তিস্তা স্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য একটি মহাপরিল্পনার কথা আমরা কেবল শুনে এসেছি। বাস্তবে এর কোনো দৃঢ় ভিত্তি নেই। অনেকটা ছেলে ভোলানো ছড়ার মতো। সারা দেশে যখন তিন লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বিগত সরকার বাস্তবায়ন করেছে, তখন রংপুরের জন্য সামান্য ১০ হাজার কোটি টাকাও তিন-চার বছরে দিতে পারেনি। অথচ রংপুরে কোনো মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়নি, আসলে সদিচ্ছাই ছিল না।
২০১৬ সাল থেকে আমরা শুনে এসেছি তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনার জন্য সমীক্ষা করা হয়েছে। পাউবোর সদ্য সাবেক মহাপরিচালক আমিরুল ইসলাম ভুঁইয়া গত বন্যায় এসেছিলেন তিস্তার ভাঙন পরিস্থিতি দেখার জন্য। যদিও তাঁর আসায় কেবল অর্থের অপচয় হয়েছে। তিস্তার কোনো উপকার হয়নি। কারণ, ওই সময়ে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা অনেক কাকুতি-মিনতি করেছি কিন্তু পাউবো থেকে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
আমিরুল সাহেব তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন বাস্তবে তিস্তা নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়নি। পাউবোর কয়েকজন প্রকৌশলী বলেছেন, ২০১৬ সালে যা হয়েছে, সেটিকে একটি ধারণাপত্র বলা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে শুনেছি চীন একটি সমীক্ষা করেছিল কিন্তু সে প্রতিবেদন নাকি সরকারের কাছে দেয়নি। এসবের অর্থ দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের তিস্তা নদীর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পা গ্রহণের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের একটি কারিগরি টিমকে বাংলাদেশে আহ্বান জনানোর কথা বলেছিলেন। এতেও বোঝা যায় সরকার তিস্তা নদীর জন্য কোনো সমীক্ষা করেনি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে দ্রুত নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তিস্তা ব্যবস্থাপনামূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। যার শুরু হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে, শেষ হবে পরবর্তী সরকারের সময়ে। বর্তমান সরকারেরও এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনবান্ধব কাজ হতে পারে। নদীটি বাঁচবে, ভাঙন বন্ধ হবে, কৃষি এবং কৃষিনির্ভর সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
বর্তমান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বছর তিনেক আগেও তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ দেখে গেছেন। ফলে তিস্তাপাড়ের মানুষ তাঁর ওপর বেশি ভরসা রেখেছেন। কয়েক দিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এসেছিলেন। তিনি জেনে গেছেন তিস্তা সংকটের কথা। এই দুজন উপদেষ্টা আবারও তিস্তায় আসছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকগুলো আন্দোলন গড়ে উঠেছে। রিভারাইন পিপলের মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে তিস্তা সুরক্ষার আন্দোলন করছি। ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’, ‘রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলন’, ‘তিস্তা ফোরাম’, ‘তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি’ ও তিস্তা সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছে।
সম্প্রতি বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলু ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ ব্যানারে ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদিনব্যাপী বৃহৎ কর্মসূচি দিয়েছেন। সরকারকে বুঝতে হবে কেন একটি নদীর ভাঙন দূর করার জন্য এতগুলো সংগঠন গড়ে উঠেছে।
প্রথমত কয়েক দিনের মধ্যে সরকারকে তিস্তার ভাঙন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত তিস্তা ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে কার্যকর প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে ভারতের কাছ ন্যায়সংগত পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
● তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং নদীসংগঠক