বাকারা অর্থ গাভি। এই সুরার এক স্থানে গাভি নিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সুরাটি পবিত্র মদিনায় অবতীর্ণ হয়। এতে ৪০ রুকু, ২৮৬ আয়াত আছে।

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ নামে পরিচিত। এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকায় আল্লাহ–তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এ সুরার শেষ দুটি আয়াতের (২৮৫-২৮৬) রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য।

সুরা বাকারাকে মোটাদাগে ৯ ভাগে ভাগ করা যায়।

১ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা। (আয়াত ১-২০)

২য় ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান। (আয়াত ২১-৩৯)

৩য় ভাগ: বনি ইসরাইল জাতির প্রতি প্রেরিত আইনকানুন। (আয়াত ৪০-১০৩)

৪র্থ ভাগ: ইবরাহিম (আ.

)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি। (আয়াত ১০৪-১৪১)

৫ম ভাগ: নামাজের দিক পরিবর্তন। (আয়াত ১৪২-১৫২)

৬ষ্ঠ ভাগ: মুসলিম জাতির ওপর পরীক্ষা। (আয়াত ১৫৩-১৭৭)

৭ম ভাগ: মুসলিম জাতির প্রতি প্রেরিত আইনকানুন। (আয়াত ১৭৮-২৫৩)

৮ম ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান। (আয়াত ২৫৪-২৮৪)

৯ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা। (আয়াত ২৮৫-২৮৬)

আরও পড়ুনঋণ থেকে মুক্তির জন্য যে আমল করব১৬ জানুয়ারি ২০২৪

১ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা

শুরুর দিকে আল্লাহ কোরআন শরিফকে হেদায়াত ও সঠিক দিকনির্দেশনা হিসেবে মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন (আয়াত ২)। এই হেদায়াতকে যারা গ্রহণ করে তারা মোমিন বা বিশ্বাসী। যারা হেদায়াতকে অস্বীকার করে বর্জন করে তারা কাফির বা অবিশ্বাসী, আর যারা অল্প কিছুটা হেদায়াত গ্রহণ করে কিন্তু নিজেদের হীন স্বার্থে কাজে লাগায় তারা মুনাফিক বা কপট।

সুরার শুরুর দিকে আল্লাহ তিন প্রকার মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন। বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী ও কপট। তৃতীয় আয়াতে (আয়াত ৩-৫) তিনি অল্প কথায় বিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়েছেন। দ্বিতীয় আয়াতে (আয়াত ৬-৭) তিনি আরও অল্প কথায় অবিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর কপটদের পরিচয় দিতে তিনি ১৪ আয়াত (আয়াত ৮-২০) ব্যবহার করেছেন। যেহেতু কপটরা তাদের চিন্তাধারা গোপন রাখে, তাদের চিনতে কষ্ট হয়, তাই আল্লাহ এভাবে বিশদ বর্ণনা করে তাদের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এ তিন শ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে ডেকে তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

২য় ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান

১ম ভাগে বর্ণিত ইমান, কুফরি ও মুনাফেকি—সৃষ্টির শুরুর দিক থেকেই বিষয়গুলো ছিল। এই ভাগে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কথা বলেছেন, মানব সৃষ্টির শুরুতে অন্য সব সৃষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে মানুষ আদম (আ.)–এর সময়কার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ও আল্লাহর নেওয়া পরীক্ষায় তিনি যথাযথভাবে উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাঁর পরিণতির (পৃথিবীতে নেমে আসার ও পরে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার) কথা বর্ণিত হয়েছে।

আরও পড়ুনগাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল, জুমার খুতবা শুনে ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

৩য় ভাগ: বনি ইসরাইল জাতিকে পাঠানো আইনকানুন

আল্লাহ যেমন অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে পছন্দ করে আদম (আ.)–এর মাধ্যমে দুনিয়ায় আল্লাহর খলিফা বানিয়েছেন, তেমনি আস্তে আস্তে পৃথিবীতে অনেক মানুষ হওয়ার ফলে শুধু একজন মানুষ নয়; বনি ইসরাইল নামে একটা জাতিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, যারা আল্লাহর প্রদর্শিত পথ জানার পর অন্য সব জাতিকেও পথ দেখাতে পারে। সুরার এই বড় ভাগটিতে আল্লাহ তাদের দেওয়া অনুগ্রহ ও অনুগ্রহ পাওয়া সত্ত্বেও যে তারা তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি, তা বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছেন, যার অধিকাংশেই তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই ভাগে আল্লাহ বেশ কিছু উপদেশ ও জ্ঞান দিয়েছেন।

৪র্থ ভাগ: ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি

ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি বনি ইসরাইলিরা দাবি করতে থাকে যে, তাদের ওপর আল্লাহর যে অনুগ্রহ ছিল, এর ধারাবাহিকতায় সব নবীই ইসরাইলি হবে। আরব থেকে কেন মুহাম্মদ (সা.) নবী হবেন? জবাবে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)–এর কথা তুলে ধরেন ও ইবরাহিম (আ.)–এর পরীক্ষার কথা বলেন। ইবরাহিম (আ.) সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁকে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবেও বর্ণনা করা হয়। এরপর ইবরাহিম (আ.)–এর ছেলে ইসমাইল (আ.) ও পৌত্র ইয়াকুব (আ.)–এর কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বোঝাতে চান যে, দুই বংশেরই মূল পিতা ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁরা সবাই ছিলেন ‘মুসলিম’।

আরও পড়ুনযে আমলের মাধ্যমে রিজিক বাড়ে১৪ জানুয়ারি ২০২৪

৫ম ভাগ: কিবলার পরিবর্তন

এই ভাগে ইবরাহিম (আ.)–এর তৈরি করা কাবার দিকেই কিবলা নির্ধারণ করা হয়। মুসলিমদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে। আল্লাহ এই জাতির ওপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন বলে অন্য সবাইকে বিভেদ ও অহংকার ভুলে এই কিবলা এবং জাতিকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

৬ষ্ঠ ভাগ: মুসলিম জাতির পরীক্ষা

২য় ভাগে আদম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা, ৩য় ভাগে বনি ইসরাইলের ওপর পরীক্ষা, ৪র্থ ভাগে ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা বর্ণনা করার পর এই ভাগে মূলত মুসলিম জাতির ওপর আল্লাহর পরীক্ষার বিষয়টি রয়েছে। আদম (আ.) পরীক্ষায় সফল হননি। বনি ইসরাইল জাতি অধিকাংশ পরীক্ষায় সফল হয়নি। ইবরাহিম (আ.) পরীক্ষায় শতভাগ সফল হয়েছেন। মুসলিম জাতির ওপরও আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছেন ও নেবেন, যেন তিনি দেখে নিতে পারেন আগের নিদর্শন থেকে শিখে তারা উত্তীর্ণ হতে পারে কি না।

৭ম ভাগ: মুসলমানদের কাছে পাঠানো আইনকানুন

৭ম ভাগে এসে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, কী কী আইনকানুনের মাধ্যম তিনি মুসলমানদের পরীক্ষা নেবেন। এই আইনকানুনের মধ্যে এ অংশে তিনি কেসাস, উত্তরাধিকার, রোজা, হজ, ব্যয়, জিহাদ, মদ, জুয়া, বিবাহ, নারী ও পরিবার, তালাক, নামাজ ইত্যাদি সম্পর্কিত আইনকানুন বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ এ ভাগে পবিত্র রমজান মাসকে মুসলমানদের দিয়েছেন।

৮ম ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান

এই অংশে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কথা বলেন। এরপর মূলত এই অংশে ৭ম ভাগেরই ধারাবাহিকতা করে পরীক্ষার অংশ হিসেবে অর্থব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থ কীভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে আয়, ব্যয় করা যায় এবং কোন আয়ব্যয় সবচেয়ে খারাপ, তা আল্লাহ এখানে বলে দিয়েছেন। অর্থলোভের বিষয়টিও এখানে উঠে এসেছে। ২য় ভাগে আদম (আ.)–কে যেমন শয়তান লোভ দেখিয়েছিল ও কুমন্ত্রণা দিয়েছিল, তেমনি এখানে শয়তানের দেওয়া কুমন্ত্রণা ও লোভের কথা উঠে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে মানুষকে বেশ কিছু জ্ঞান দিয়েছেন।

৯ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা

এই অংশটি আসলে উপসংহার। আগের সব ভাগের সারসংক্ষেপ হিসেবে এটি উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম ভাগের ইমান, দ্বিতীয় ভাগের সৃষ্টি ও উপদেশ, তৃতীয় ভাগের পূর্ববর্তী জাতির কথা, চতুর্থ ভাগের নবীর কথা, পঞ্চম ভাগের মুসলিম জাতি (আমরা), ষষ্ঠ ভাগের পরীক্ষা, সপ্তম ভাগের আইনকানুন, অষ্টম ভাগের উপদেশের কথা এখানে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনহাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পড়ার ফজিলত১৫ জানুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর পর ক ষ জ ত র ওপর পর ক ষ য় আল ল হ এ র পর ক ষ আল ল হ ত কর ছ ন দ র পর এই ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে ভ্যানচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

মাদারীপুর জেলার শিবচরে মিজান কাজী (২০) নামে এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের মানিকপুর মোড় সংলগ্ন একটি ইটের ভাটার পাশে ভুট্টা ক্ষেত থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। 

নিহত মিজান উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কাঁচিকাটা এলাকার লাভলু কাজীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন। 

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে মিজান ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। শুক্রবার সকালে ওই এলাকার ইটের ভাটার পাশে ভুট্টা ক্ষেতে মরদেহ পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। মরদেহের গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে।

পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পর মিজান নিখোঁজ থাকে। মিজানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকালে তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। 

নিহতের মা মলিনা বেগম বলেন, “আমরা ছেলেটা ভ্যান চালায়। সন্ধ্যার পরে যাত্রী নিয়া কাঁঠালবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর ফিরে আইলো না আমার ছেলে।”

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ বলেন, “খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

এরআগে গত ২৮ জানুয়ারি শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর সংলগ্ন রেললাইনের পাশ থেকে আরেক ভ্যানচালক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ভ্যান ছিনতাইয়ের জন্যই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা/বেলাল/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর সঙ্গে ধাক্কা, যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৮
  • মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর, স্থানীয়দের হামলায় আহত ১৫
  • ‘তামিমিয়ান, সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই, সবাই বাংলাদেশি’—তামিমের বিদায়ী বার্তা
  • প্রেমিকাকে হত্যা: রিমান্ড শেষে কারাগারে ফাহিম
  • রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক মেয়র আতিক
  • চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে গেলেন সাইম
  • যশোরের মনিরামপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর
  • চট্টগ্রামে কমিউনিটি সেন্টারে আগুন, মালিকের দাবি নাশকতা
  • শিবচরে ভ্যানচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার