ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৭৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাবে গতকাল শুক্রবার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। যদিও এ বিক্রির বিষয়ে আরও তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত রাখতে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেওয়া অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্যাকেজে ৬৭৫ কোটি ডলারের গোলাবারুদ, গাইডেন্স ও ফিউজ বিক্রির কথা রয়েছে। বোয়িংসহ কয়েকটি বড় মার্কিন ঠিকাদারের এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করার কথা।

আরও পড়ুনগাজাকে দখলে নেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ ছাড়া প্যাকেজের আওতায় ইসরায়েলের কাছে ৬৬ কোটি ডলারের হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির কথা রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে লকহেড মার্টিনসহ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান।

এমন একসময় এ ঘোষণা দেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফর শেষ করলেন। সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তাঁর প্রশাসনের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন নেতানিয়াহু।

নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসসদস্য ও প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য গ্রেগরি মেকস বলেন, অস্ত্র বিক্রি–সংক্রান্ত যেকোনো বড় প্রকল্পের অনুমোদনের আগে কংগ্রেসে দীর্ঘ পর্যালোচনার যে নজির ছিল, সেটা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্তে আমি নিন্দা জানিয়েছি।

আরও পড়ুনগাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি আলোচনা ঘিরে অনিশ্চয়তা০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ আইনপ্রণেতার মতে, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন করার প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসকে যথাযথ সম্মান জানানো হয়নি।

যদিও অনুরোধ করার পরও বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হোয়াইট হাউস।

আরও পড়ুনগাজার মানুষদের উৎখাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যায় দেখছেন না নেতানিয়াহু০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ বছরের জানুয়ারিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কংগ্রেসকে ইসরায়েলের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রকল্পের কথা জানায়। ওই সময় দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছিলেন। দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে বিক্রির বিষয় পর্যালোচনা করা ও এ ব্যাপারে আরও তথ্য চাওয়ার সুযোগ পায় মার্কিন কংগ্রেস ও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি।

এর মধ্যেই গত ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আরও পড়ুনবাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে গাজা খালি করতে চান ট্রাম্প২৬ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক ছ সরঞ জ ম ব ক র

এছাড়াও পড়ুন:

দশবার নিলামেও অবিক্রীত ৪৪ ‘ভিআইপি’ গাড়ি

গাড়িগুলোর কোনোটি ল্যান্ড ক্রুজার, মার্সিডিজ বেঞ্জ কিংবা রেঞ্জ রোভার। রয়েছে বিএমডব্লিউ, হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের মতো মূল্যবান গাড়িও। বিলাসবহুল এসব গাড়ির বেশির ভাগেরই দাম ১০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নিলামে তুললে এসব গাড়ি বিক্রি হয় না লোহার দামেও।

দীর্ঘ সময় পড়ে থেকে আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া, সংরক্ষিত মূল্য বেশি থাকা, গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া এবং নিলাম সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার কারণে গাড়ির ন্যায্য শুল্ক পাচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কোনো কোনো গাড়ি ৮ থেকে ১০ বারও নিলামে তোলা হয়েছে। এর পরও ক্রেতা না মেলায় বাধ্য হয়ে ১২১টি গাড়ি এর আগে কেটে স্ক্র্যাপও করা হয়। এর পরও নিলামযোগ্য শতাধিক গাড়ি পড়ে আছে বন্দরে।

এই ধারা থেকে বের হতে এবার নতুন থাকতেই কিছু গাড়ির নিলাম ডেকেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সদ্য সাবেক হওয়া ২৪ এমপির গাড়িসহ ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে এবার। সিন্ডিকেট ভাঙতে চট্টগ্রামের বাইরেও অনলাইনে নিলামে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এবারে নিলামে ওঠানো গাড়ির মধ্যে আছে জাপানের তৈরি ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার, পাঁচটি টয়োটা হ্যারিয়ার, দুটি টয়োটা র‍্যাভ ফোর ও একটি টয়োটা এস্কোয়ার। এসবের মধ্যে ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার একদম নতুন, যা শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক সংসদ সদস্যরা এনেছিলেন ৫ আগস্টের আগমুহূর্তে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে এসব গাড়ি আর শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করার সুযোগ পাননি তারা। 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কোন পণ্য কত দামে বিক্রি হবে, সেটির সিদ্ধান্তও নেয় তারা। আমরা শুধু মাধ্যম হিসেবে দাপ্তরিক প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করে দিই।

নিলাম তত্ত্বাবধানকারী চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার বলেন, নিলামে একের পর এক গাড়ি তুললেও আমরা সেটা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করতে পারি না। এখানে এনবিআরের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীর কাছে সংরক্ষিত মূল্যের কাছাকাছি দর না পেলে একটি গাড়ি একাধিকবার নিলামে তুলতে হয়। তবে এবারে যে ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নতুন।

গত ২৭ জানুয়ারি অনলাইনে এসব গাড়ি নিলামে তোলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ নিলামে অংশ নিতে পারবেন। নিলাম পণ্যও অনলাইনে প্রদর্শন করা হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাক্স উন্মুক্ত করা হবে। 

যে কারণে নিলামে ন্যায্য দাম মিলছে না 
কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের নিলাম শাখায় আরএল (অখালাসকৃত চালানের তালিকা) পাঠায়। নিলাম শাখা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নোটিশ দেয়। নোটিশের ১৫ দিনের মধ্যেও পণ্য সরবরাহ না নিলে সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। 

কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিলাম না হওয়ার কারণে বন্দর ইয়ার্ডে কিংবা কনটেইনারে থাকা গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। চুরি হয়ে যায় গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ। আবার নিলামে বিক্রি হওয়া গাড়ির বাণিজ্য ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। হয়রানি করে বিআরটিএ-ও। এসব কারণে নিলাম থেকে গাড়ি কিনতে চায় না অনেকে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনবিআর যদি নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করত এবং বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিত, তাহলে বিলাসবহুল গাড়ি  স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করতে হতো না। নিলামে মিলত ন্যায্য দর। সরকারের কোষাগারে জমা হতো শতকোটি টাকার রাজস্ব।
নিলামে নতুন গাড়ি

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, কাস্টমস শুল্ক-করসহ গাড়িগুলোর সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করেছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ বা এর বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা এ গাড়ি কিনতে পারবেন। এ হিসাবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির মাধ্যমে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবারে ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছে। এ জন্য নতুন গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দাম ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। 

৩৪ বিলাসবহুল গাড়ি ৯ কোটিতে বিক্রি
চট্টগ্রাম কাস্টমস এর আগে নিলামে বিক্রি করেছে ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ির বিক্রয়মূল্য ছিল ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছিল মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিশি, ফোর্ড, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি। অগ্রিম আয়কর ও মূল্য সংযোজন করসহ ২০২২ সালে বিক্রি করা প্রতিটি গাড়ির গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ৩২ লাখ ৭ হাজার ১৩৪ টাকা। কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় বন্দরে আনা গাড়ির মধ্যে তখন ১০৮টি নিলাম দেয় কাস্টম হাউস। কিন্তু বিক্রি হয় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দশবার নিলামেও অবিক্রীত ৪৪ ‘ভিআইপি’ গাড়ি
  • সয়াবিনের সংকট তীব্র, কমেছে চালের দাম
  • অস্বস্তি বোতলজাত তেলে, চাল আলু সবজিতে স্বস্তি
  • সাংবাদিকদের নিয়ে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • দেশি-বিদেশি মিডিয়াসহ আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • সামাজিক সুরক্ষা পথ হারাইবে কেন?
  • গরমে বিদ্যুতের ঘাটতি সামাল দিতে এসির ব্যবহার কমানোর দিকে নজর উপদেষ্টার
  • অর্থ সংকট আছে, তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না: জ্বালানি উপদেষ্টা