২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বিজেপি
Published: 8th, February 2025 GMT
দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লি দখল করতে চলেছে বিজেপি। আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোট গণনার গতি–প্রকৃতি সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই সময় পর্যন্ত মোট ৭০ আসনের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে আছে ৪২ আসনে এবং আম আদমি পার্টি (আপ) ২৮ আসনে। কংগ্রেস একটি আসনে বেশ কিছু সময় এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে পড়েছে।
ভোটের পরপরই প্রায় সব সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপিকে জয়ী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। গণনার শুরু থেকেও দেখা যাচ্ছে, সমীক্ষার ফল হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রথম রাউন্ডের গণনার পরে দেখা যায়, আপ নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মুখ্যমন্ত্রী আতিশি বেশ কিছু ভোটে পিছিয়ে আছেন।
পরবর্তী রাউন্ডে দুজন এগোলেও ষষ্ঠ রাউন্ডের শেষে নিউদিল্লি আসলে কেজরিওয়াল ফের পিছিয়ে পড়েছেন। সামান্য ব্যবধানে হলেও বিজেপির প্রভেশ ভার্মা এগিয়ে। প্রভেশের বাবা সাহেব সিং ভার্মা একসময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কালকাজি আসনেও পিছিয়ে যান আতিশি বিজেপি প্রার্থী রমেশ বিধুরীর কাছে।
এবারের ভোট ছিল ত্রিমুখী। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক কংগ্রেস ও আপ লোকসভা ভোটে জোটবদ্ধ হয়ে লড়লেও বিধানসভার ভোটে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কংগ্রেস ও আপের সমর্থন ক্ষেত্রও এক। দলিত, অনগ্রসর ও মুসলমান। লড়াই ত্রিমুখী হওয়ায় বিজেপি শুরু থেকেই যথেষ্ট উৎফুল্ল ছিল। কারণ, ছোট ব্যবসায়ী, পাঞ্জাবি উদ্বাস্তু, সরকারি কর্মী ও মধ্যবিত্তের মধ্যে বিজেপির সমর্থন অটুট।
আবার মধ্যবিত্তের মন জিততে বাজেটে এবার বিজেপি সরকার আয়করে বিপুল ছাড় দিয়েছে। ভোটের ঠিক আগে বাজেট পেশ রাজনৈতিকভাবে বিজেপির পক্ষে যে সুবিধাজনক হয়েছে, তা গণনার গতি থেকে বোঝা যাচ্ছে।
দিল্লির ভোটারদের মধ্যে রয়েছেন বিপুল পূর্বাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠী। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চল ও বিহার থেকে আসা মানুষের সমর্থন পেতে বিজেপি এবার চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। ২০২৪ সালে লোকসভায় দিল্লির ৭টি আসনের মধ্যে ৬টির প্রার্থী পরিবর্তন করলেও ভোজপুরি সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ও সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারিকে বিজেপি বদলায়নি। পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের সমর্থনে মনোজের পাশাপাশি বিজেপি প্রচারে নেমে এসেছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। গণনার প্রাথমিক গতি প্রকৃতি দেখাচ্ছে, পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের সমর্থন বিজেপি ভালোই পেয়েছে।
দিল্লিতে মুসলিম–অধ্যুষিত আসন আছে ৭টি। ২০১৫ ও ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে ৭টিই জিতেছিল আপ। এবার কংগ্রেস সেই আসনগুলোয় জোরালো প্রচার চালিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ওই ৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৪টিতে এগিয়ে রয়েছে। গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট। এবার যত বাড়তি ভোট তারা পাবে, ততই ক্ষতি আপের।
আপের বিরুদ্ধে এবারের প্রচারে বিজেপি তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিল। প্রথমত, আপ নেতাদের ‘দুর্নীতি’। আবগারি (মদ) কেলেংকারি এবং ৪২ কোটি টাকা খরচ করে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসের ভোলবদলের বিরুদ্ধে তারা লাগাতার আন্দোলন করে গেছে। এতে আপ নেতাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি অবশ্যই কিছুটা নষ্ট হয়েছে।
বিজেপির প্রচারে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট ছিল স্থানীয় নেতাদের জোটবদ্ধতা। অতীতে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কুফল বিজেপিকে ভোগ করতে হয়েছে, এবার তা দেখা যায়নি। তৃতীয় বৈশিষ্ট রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সক্রিয়তা, যা গত বছর লোকসভা ভোটে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে না বেছে বিজেপি এবার প্রচার চালিয়েছে। দলের মুখ ছিলেন একজনই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গণনার গতি–প্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, হারের হ্যাটট্রিকের লজ্জা প্রধানমন্ত্রীকে পেতে হচ্ছে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র গণন র
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে ২০০ কোটি ডলার আয় করছে—ট্রাম্পের এ দাবি কি সত্য
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্কের খড়্গ চাপানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে বারবারই যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ‘অন্যায্য বাণিজ্যের’ শিকার হচ্ছে, সেই দাবি করছেন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশে বিদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর শুল্ক বা আমদানি কর ধার্য করেন। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পণ্যে আরোপ করেছেন সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যে ধার্য করেছে বড় অঙ্কের শুল্ক।
শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা দাবিগুলোর কিছু প্রমাণিত নয় বা এমনকি সেসব মিথ্যা। বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও সম্প্রতি দাবি করেছেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে দেশটির আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।যুক্তরাষ্ট্র কি দৈনিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছেপ্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমরা শুল্ক দিয়ে প্রচুর আয় করছি—দিনে (২ বিলিয়ন) ২০০ কোটি ডলার।’
ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমন কোনো প্রকাশিত তথ্য বিবিসি ভেরিফাই খুঁজে পায়নি। যদিও শুল্ক থেকে পাওয়া কত অর্থ ফেডারেল সরকারে পাঠানো হয়, তা নিয়ে প্রতিদিন বিবৃতি দেয় মার্কিন অর্থ বিভাগ।
৭ এপ্রিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক আয় সর্বোচ্চ ২১৫ মিলিয়ন (২১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার। এটি ট্রাম্পের দাবি করা অঙ্কের চেয়ে অনেক কম।
অবশ্য ট্রাম্পের ওই দাবি শুল্ক থেকে বছরের সামনের দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুমেয় আয়ের ভিত্তিতে হতে পারে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কিছু বিশ্লেষক হিসাব কষে দেখেছেন, গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপ করা গড় শুল্কহার ছিল ২২ শতাংশ। সে হিসাবে আমদানি করা পণ্য থেকে দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় হতে পারে ২ বিলিয়ন (তবে নতুন শুল্ক ঘোষণায় দেশটিতে পণ্য আমদানি কমতে পারে)। এখানে যে আয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির পরিমাণ আগের মতোই ধরা হয়েছে।
ট্রাম্পের ওই দাবির ভিত্তি ৬ এপ্রিল তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও হতে পারে।
আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ১৬ ঘণ্টা আগেবাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও দাবি করেছিলেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।
ট্রাম্পের দাবির পক্ষে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য জানতে চেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।
আপনারা জানেন, আমরা তাদের (ইইউ) কাছ থেকে লাখ লাখ গাড়ি নিই। তারা কোনো গাড়ি নেয় না। তারা আমাদের কৃষিপণ্যও নেয় না। তারা কিছুই নেয় না।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টচীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কি ১ লাখ কোটি ডলারএকটি দেশ যখন অন্য দেশের কাছে থেকে রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি বেশি করে, তখন বাণিজ্যঘাটতি দেখা দেয়। ট্রাম্পের দাবি, চীনের সঙ্গে তার এ ঘাটতির পরিমাণ বিশাল।
৭ এপ্রিল ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের ১ লাখ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি।’
রপ্তানি বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে, ঠিক। তবে ট্রাম্প যেমনটা দাবি করেছেন, তেমনটা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন