Samakal:
2025-03-10@16:26:05 GMT

গুমাই বিলে ঝাঁক বেঁধে উড়ছে বক

Published: 8th, February 2025 GMT

গুমাই বিলে ঝাঁক বেঁধে উড়ছে বক

শস্যভান্ডারখ্যাত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে এখন ধান চাষের মৌসুম। বোরো রোপণের জন্য ব্যস্ত কৃষক। চলছে জমি প্রস্তুতের কাজ। পাওয়ার টিলার দিয়ে মাঠে নামতেই চারপাশে ঝাঁক বেঁধে ঘিরে ধরছে সাদা বক। মাটির ভেতর থেকে উঠে আসা পোকামাকড় খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে এই পাখি। বিলজুড়ে বকের ওড়াউড়ির দৃশ্য কঠোর পরিশ্রমের মাঝে কৃষকের মনে প্রশান্তি দেয়।

রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের আধুরপাড়া অংশে গুমাই বিলের অবস্থান। কথিত আছে, এই বিলে উৎপাদিত ফসল দেশের মানুষের তিন দিনের অন্ন জোগান দিতে পারবে। বর্ষায় সেখানে থইথই পানি থাকে। অন্য সময়ে চলে আবাদ। এখন বোরো ধান চাষের মৌসুম। বিলে পানি সেচে মাটি প্রস্তুত করতে চলছে জোর প্রস্তুতি। এ সময়ে বিলে আসে হাজারও বক। খাদ্য আহরণের জন্য তারা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়।

স্থানীয়রা বলছেন, গেল বছরের চেয়ে এবার বেশি বক উড়তে দেখা যাচ্ছে। শিকারিরা সুযোগ খুঁজলেও এলাকাবাসীর সচেতনতার কারণে শিকার করতে পারছে না। এতে বাধাহীন নিরাপদে উড়ছে বকের দল।

চন্দ্রঘোনার পাঠানগাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, গুমাই বিলে এক সময় ঝিল ছিল। তখন বিলজুড়ে ছিল মাছ আর মাছ। ওড়াউড়ি করত নানা প্রজাতির পাখি। এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি।

চন্দ্রঘোনার ছুফিপাড়া গ্রামের মো.

লোকমান বলেন, চাষাবাদের জন্য বিলে পানি দেওয়ার পর সাদা বক পোকামাকড় খেতে ছুটে আসে। স্থানীয় ভাষায় এই বককে ‘ধলা বোঘা’ বলে।

উপজেলা সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীন মোহাম্মদ জানান, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতির বক রয়েছে। এসব পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ নানান ভূমিকা রাখছে। মাছ ছাড়াও জলজ পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে থাকে বক। এ পাখির খাদ্য ও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য বক রক্ষা জরুরি।

রাঙ্গুনিয়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, বিলে পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাদা বক দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে। বকের ওড়াউড়ি দেখতে বিলে পাখিপ্রেমীরা ভিড় করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, চলতি বোরো মৌসুমে জমি প্রস্তুতের সময় সাদা বক দলে দলে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য বিলে বিচরণ করছে। এই পাখি চাষাবাদের জন্য খুবই উপকারী। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে বক রক্ষা করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, সাদা বক আমাদের এলাকায় অতিথি হয়ে আসে। এই পাখি শিকার করা যাবে না। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধভাবে পাখি শিকার করলে সাজার বিধান রয়েছে। যারা আইন অমান্য করে পাখি শিকার করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ব শ ক র কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না: নাহিদ ইসলাম

বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি না করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন পেছানোর রাজনীতি করছি। খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই, আপনারা বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না। বিচার ও সংস্কারের প্রতি ঐকমত্য পোষণ করুন, নির্বাচন আমরা আপনাদের করে দিতে সহায়তা করব।’

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে এনসিপি। ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দ্রুত বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করতে হবে। কত দিনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখা যাবে এবং সংস্কার বাস্তবায়ন করা যাবে, তার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।

বিএনপিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন চাইছে বিভিন্ন দল। কোনো কোনো দল এনসিপিকে ইঙ্গিত করে বলছে, দলটি নানা ধরনের কথা বলে নির্বাচন পেছাতে চাইছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নই, বরং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলেই আমরা নিজেরাও একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।...আমরা বলছি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, গণপরিষদ নির্বাচন। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে একটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে নতুন একটি সংবিধান এই জাতিকে আমরা উপহার দিয়ে যাব, ইনশা আল্লাহ।’

সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাহিদ বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান ও আমন্ত্রণ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। অন্যান্য উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান প্রত্যেকেই কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) দিয়েছিলেন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারের দায়িত্ব তাঁরা নিচ্ছেন। এই কমিটমেন্ট থেকে তাঁরা দূরে সরে যেতে পারবেন না, জনগণের সামনে তাঁদের দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু কড়ায়-গন্ডায় জবাবদিহি নেব যে আমাদের বিচার ও সংস্কার কতটুকু আদায় হলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য এতোই তাড়াহুড়া করে, ভোট চাইতে গেলে কিন্তু সেই জবাবদিহি তাঁদের দিতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কারও ওপর নির্ভর করতে চাই না।’

আ.লীগের ফয়সালা দাবি

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনের প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার ছাড়াই যদি আরেকটি সরকার চলে আসে, তাহলে কী নিশ্চয়তা আছে যে আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসিত করা হবে না এই বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে আওয়ামী লীগের ফয়সালা কী হবে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের এই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আর কোনো জায়গা হবে না, হবে না, হবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি বলেন, কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। মব (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) তৈরির রাজনীতির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ইসলামকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র অনেক গোষ্ঠী করছে। সেগুলো প্রতিহত করা হবে।

‘বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয়’

অভ্যুত্থানে আহতদের কেউ ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ক্রাচে ভর দিয়ে, কেউ এসেছিলেন হুইলচেয়ারে করে। ছিলেন শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরাও। তাঁদের কয়েকজন বক্তব্য দেন।

ঢাকার আশুলিয়ায় শহীদ হওয়া (৫ আগস্ট) সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার সন্তানকে কেন মারা হলো? ...এর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

জুলাই অভ্যুত্থানে উত্তরায় শহীদ হওয়া শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা নওশের আলী বলেন, হত্যা ও হামলার বিচার অবশ্যই সবার আগে হতে হবে। বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয়। আগে বিচার হবে, তারপর সংস্কার হবে। সংস্কার না হলে সামনে আরেকটা চব্বিশ হয়তো অপেক্ষা করছে।

অনুষ্ঠানে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সব খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা এখনো ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অতি দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা না গেলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে হলেও শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

বিচার ও সংস্কারের প্রশ্নে বাংলাদেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, সবার ঐকমত্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকেও অতি সত্বর বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা বলেন, এত ত্যাগ-তিতিক্ষা শুধু এক শাসক থেকে আরেক শাসকের জন্য নয়, বরং শাসনব্যবস্থা যাতে বদলায়, পুরো ব্যবস্থা যাতে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে, সে জন্য। এনসিপির বিশেষ টিম সব সময় শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বলে জানান তিনি।

আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। আলোচনা শুরুর আগে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। কথা বলার এক পর্যায়ে তাঁদের কেউ কেউ কাঁদতে থাকেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ