কুষ্টিয়ায় ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণে নিতে তৎপর চরমপন্থিরা
Published: 8th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর কুষ্টিয়ায় খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকা চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে তারা। সম্প্রতি সরকারি দপ্তরে গুলিবর্ষণ ও প্রকল্পের সাইটে বোমা হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ, কমিশন ও চাঁদা আদায় করতেই এসব হামলার মতো ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন তারা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের সামনে দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পাউবো কার্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে ডিউটি করছিলেন আনসার সদস্য মামুন। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি পরপর দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান। এতে ভয় পেয়ে দৌড় দেন তিনি। গুলির শব্দ শুনে পরে অন্যেরা ছুটে আসেন। তারা প্রাচীরের বাইরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেলেও রাস্তা থেকে গুলির খোসা উদ্ধার হয়।
আনসার সদস্য মামুন হোসেন জানান, সেদিন দুপুরে তিনি ডিউটি শুরু করার পর যখন লোকজন নামাজ আদায় করছিল ঠিক তখন পরপর দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান। পাউবোর অফিস লক্ষ্য করে বাইরে থেকে গুলি ছোড়া হয়। এতে লোকজনের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ফুটেজে দেখা গেছে, গুলি ছুড়ে বন্দুক হাতে বেশ কয়েকজন পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মুখ বাঁধা ছিল। পাউবো কার্যালয়ের উত্তর দিকে গড়াই নদী। সন্ত্রাসীরা দৌড়ে গিয়ে একটি নৌকায় ওঠে। নৌকায় থাকা এক ব্যক্তিকে তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের একজনের হাতে ছিল বন্দুক। প্রত্যক্ষদর্শীরা ৩ জনকে দৌড়াতে দেখেছে। আর মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় অপর একজন।
পাউবোর কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা গুলি ছুড়েছে তারা একটি নিষিদ্ধ চরমপন্থি দল গণবাহিনীর সন্ত্রাসী বলে জানতে পেরেছেন। জিকের (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) প্রকল্পের একটি কাজকে কেন্দ্র করে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য তারা এ কাজ করেছে বলে তারা ধারণা করছেন। হঠাৎ এমন ঘটনায় সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বাপ্পি বলেন, সেদিনের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা এমন কাজ করতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। ঠিক কী কারণে তারা এ ঘটনা ঘটাল, জানার চেষ্টা করছেন তারা।
এদিকে পাউবো কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনার আগে গত ২২ ডিসেম্বর রাতে গড়াই নদীতে ড্রেজিং প্রকল্পের একটি ড্রেজারে হানা দেয় চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। তারা চাঁদার দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেয়। অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে হুমকি দিয়ে বলে, তাদের অনুমতি না নিয়ে কাজ করা যাবে না। কয়েক দিন কাজ বন্ধ থাকার পর চরমপন্থিদের সঙ্গে সমঝোতা করেই আবার কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গড়াই খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাস বলেন, গত ডিসেম্বরে কাজ শুরু করার পর এক দল লোক রাতের বেলা ড্রেজারে হামলা করে কাজ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়ে কয়েক দিন পর কাজ শুরু করা হয়েছে। পরে আর সমস্যা হয়নি। সবাই আতঙ্কে আছে।
এদিকে গত ৩১ জানুয়ারি রাতে জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সেতু নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের থাকার ঘরে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পরপর ৪ থেকে ৫টি হাতবোমা নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরও দুটি বোমা উদ্ধার করে। সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারকে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে প্রকল্প কাজের অংশীদারি পেতে এ কাজ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির এক নেতার ছেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ হামলা চালায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী কাজল মাজমাদার বলেন, আওয়ামী লীগ আমলের ঠিকাদাররা এখনও তাদের লাইসেন্সে কাজ করছেন। বিএনপির অনেকে ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার পরও কাজ করতে পারছেন না। এর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা সরকারি প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল আলম টুকু মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে চরমপন্থিরা। এদের কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে জেলায় উন্নয়ন কাজ থমকে যাওয়াসহ ভীতিকর অবস্থা তৈরি হতে পারে।
এসব ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্ত করছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেহাবুর রহমান বলেন, পাউবো কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম-পরিচয় মিলেছে। তাদের ধরতে কাজ করছে পুলিশ। চরমপন্থি গ্রুপের সদস্যদের অবস্থান ও গতিবিধি পুলিশের নজরে আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ কর করছ ন ঘটন য় র ঘটন আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘স্ট্রেচার’ থেকে নেমে আলিসের ‘চার’, শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে ফাইনালে চিটাগং
খাজা নাফে-হুসেইন তালাত যেভাবে ব্যাট করছিলেন চিটাগং কিংসের জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। চার-ছয়ের মারে কমে আসছিল বলের সঙ্গে রানের পার্থক্য। তখনই নাসুম আহমেদের আঘাত। এরপর নাফের উইকেট ভেঙে মুশফিক হাসান যেন চিটাগং কিংসের স্বপ্নও ভেঙে দেন। কিন্তু না! গল্পের এখানেই শেষ নয়। স্ট্রেচার থেকে মাঠে ফিরে আলিস আল ইসলাম লেখেন রূপকথার গল্প।
শেষ বলে প্রয়োজন ছিল চার, বুদ্ধিদীপ্ত শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১১ বছর পর বিপিএলের ফাইনালে নাম লেখায় চিটাগং কিংস। আর পঞ্চমবার প্লে’অফে ওঠা খুলনার সামনে সুযোগ ছিল ফাইনালে নাম লেখানোর, কিন্তু ভাগ্য কথা বলেনি। মুশফিক হাসান হতে পারেন নায়ক, কিন্তু শেষ ওভারে ১৫ রান দিয়ে বনে যান খলনায়ক!
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে টস জিতে বোলিং নেয় চিটাগং। ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৬৩ রান করে খুলনা। তাড়া করতে নেমে ২ উইকেটে জয় নিয়ে চিটাগং মাঠ ছাড়ে। ৭ বলে ১৭ রান নিয়ে ম্যাচসেরা হন আলিস। বল হাতে ৪ ওভারে ১৪ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
আরো পড়ুন:
হেটমায়ার ঝড়ে শেষ চার ওভারে ৬৯, খুলনার চ্যালেঞ্জ
ইয়াশা সাগরকেও টাকা দেয়নি চিটাগং কিংস, ‘হেনস্থার’ অভিযোগ
১৮তম ওভারে জেসন হোল্ডারকে পরপর ছয়-চারে রানের ব্যবধান কমিয়ে দেন আলিস আল ইসলাম। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১। হাসান মাহমুদের করা ১৯তম ওভারে ৬ রানের বেশি নিতে পারেনি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। মুশফিক হাসানের প্রথম বলে চার মেরে ম্যাচ জমিয়ে দেন আরাফাত সানি। পরের বলে ডাবলের পর তৃতীয় বলে ডাবল নিতে গিয়ে মাঠ ছাড়েন আলিস। সানির সঙ্গী হন শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ বলে চার হাঁকিয়ে শরিফুল ব্যবধান কমিয়ে দুই বলে চার রানে আনেন। পরের বলের আউট হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৪। স্ট্রেচার থেকে নেমে আলিস চার মেরে উল্লাসে ভাসান চিটাগংকে।
চিটাগংয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন নাফে। ৪৬ বলে এই রান করেন তিনি। এ ছাড়া ৪০ রান করেন তালাত। দুজনে জুটিতে যোগ করেন ৭০ রান। এরপর পরপর উইকেট পড়লেও টেল এন্ডাররা ম্যাচ বের করে আনেন। আরাফাত সানি ১৮ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন। খুলনার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন মুশফিক হাসান-হাসান মাহমুদ।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ ওভার পর্যন্ত ধুঁকেছে দলটি। বলের চেয়ে রানের সংখ্যা ছিল কম। ধীরে ধীরে ক্রিজে সেট হওয়া শিমরন হেটমায়ারের ঝড়ের পর জেসন হোল্ডার-মোহাম্মদ নাওয়াজের ক্যামিওতে চিটাগং কিংসকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে খুলনা।
মাত্র ৩৩ বলে ৬৩ রান করেন হেটমায়ার। অথচ প্রথম ২১ বলে এসেছিল মাত্র ২২ রান! এর পরের ১২ বলে করেন ৪১ রান। ৪টি ছয় ও ৬টি চারের মারে ইনিংসটি সাজান হেটমায়ার।
৪২ রানে ৪ উইকেটের পতনের পর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন হেটমায়ার। ৩২ বলে ৪১ রানে অঙ্কন আউট হলে ভাঙে ৫০ বলে ৭৩ রানের জুটি। শেষে হোল্ডার ৫ বলে ১২ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ ২ বলে ৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
খুলনার প্রথম চার ব্যাটারের মধ্যে শুধু মোহাম্মদ নাঈম শেখ দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেন। ২২ বলে ১৯ রান করেন নাঈম শেখ। চিটাগংয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন বিনুরা ফার্নান্দো।
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল