পাঁচ বছর পর নীতি সুদহার কমাল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
Published: 8th, February 2025 GMT
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নীতি সুদহার কমাল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। গতকাল শুক্রবার সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানোর ঘোষণা দেন আরবিআইয়ের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। ফলে আরবিআইয়ের রেপো হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
পাঁচ বছর পর রেপো হার কমানো হলেও দুই বছর ধরে তা অপরিবর্তিত রেখেছিল আরবিআই। ২০২০ সালের মে মাসে শেষবার সুদহার কমিয়েছিল। অর্থাৎ করোনা মহামারির প্রথম ঢেউয়ের সময়। তখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম একদম তলানিতে ঠেকেছিল। ফলে ওই সময় অর্থনীতি চাঙা করতে নীতি সুদহার না কমিয়ে উপায় ছিল না। তারপর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কমানো হলো নীতি সুদহার, সেই হিসাবে মাঝে প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করলে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে আরবিআই। ২০২২ সালের মে থেকে ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বৃদ্ধি করেছিল আরবিআই।
বিষয়টি হলো, যে সুদের হারে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংককে আরবিআই ঋণ দিয়ে থাকে, সেটাই হলো রেপো হার। রেপো কমলে এর সঙ্গে যুক্ত সব বেঞ্চমার্ক ঋণের সুদের হার কমে যায়। রেপো হার বাড়লে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার বেড়ে যায়, তখন ব্যক্তি মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হয়। রেপো হার কমলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার কমে, তখন সমাজে ঋণের প্রবাহ বাড়ে; গতি পায় অর্থনীতি।
আরবিআই রেপো রেট কমানোর জেরে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো তহবিলভিত্তিক ঋণের প্রান্তিক ব্যয় (মার্জিনাল কস্ট অব ফান্ড বেসড লেন্ডিং রেট বা এমসিএলআর) কমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বৈঠক শুরু হয় রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রা নীতি কমিটির। ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখ বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন আরবিআইয়ের নতুন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। গত বছরের ডিসেম্বরে শক্তিকান্ত দাস অবসর নেওয়ার পর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তিনি।
গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, সর্বসম্মতিতে রেপো রেট ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরবিআইয়ের মুদ্রানীতি কমিটি। ঋণ সস্তা করা এবং অর্থনীতিতে গতি আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ বছর প ক ঋণ র হ র কম
এছাড়াও পড়ুন:
৮ মাসে বাংলাদেশের ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হওয়ার দাবিটি ভুয়া: রিউমর স্ক্যানার
‘মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশ ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে’ এবং ‘৪০তম থেকে ৭ পিছিয়ে বাংলাদেশ ৪৭তম ক্ষমতাধর দেশ’ এমন দুটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে ছড়িয়ে পড়া দুটি দাবিই ভুয়া বলছে তথ্য যাচাই বা ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। রিমউর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে র্যাঙ্কিংটি ২০২৪ সালের। অর্থাৎ যে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠার দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বলছে, যে র্যাঙ্কিং নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটি আজই বা এ বছর প্রকাশ হয়নি। তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মূলত জরিপের তথ্য ব্যবহার করে র্যাঙ্কিং প্রকাশিত হয়। এই র্যাঙ্কিংয়ের জরিপ হয়েছে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত। অর্থাৎ সর্বশেষ যে র্যাঙ্কিং ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটে রয়েছে, তা বাংলাদেশের বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিল।
দাবিগুলোর সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইউএস নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটের নাম। ইউএস নিউজ মূলত মার্কিন মিডিয়া কোম্পানি, যারা সংবাদের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির র্যাঙ্কিং ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে আসছে।
রিউমর স্ক্যানার ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সময়ের আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, সাইটটি প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে এবং এ–সংক্রান্ত জরিপ হয় সে বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে।
রিমউর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ২০২৩ সালের র্যাঙ্কিংটি প্রকাশিত হয় সে বছরের ৬ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয় সে বছরের ১৭ মার্চ থেকে ১২ জুন)। ওই বছর বাংলাদেশের অবস্থান পাওয়ারে ৪০তম, ওভারঅল: ৬৯তম (মোট ৮৭ দেশের মধ্যে)। একইভাবে ২০২২ সালেরটি প্রকাশিত হয় সে বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয় সে বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ১৩ জুলাই)। ওই বছর বাংলাদেশের অবস্থান পাওয়ারে ৪৪তম, ওভারঅল: ৭১তম (মোট ৮৫ দেশের মধ্যে)।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ থেকে রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত হয়েছে যে ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিং এখনো প্রকাশ করেনি ইউএস নিউজ। রেওয়াজ অনুযায়ী তা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১২৩তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৪৭তম অবস্থানে এসেছে। তবে ওয়েবসাইটটির আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, বাংলাদেশ এই র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ২০২২ সালে। ওই বছর থেকে পরবর্তী সময়গুলোতে র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে: ২০২২ সালে ৮৫টি, ২০২৩ সালে ৮৭টি এবং ২০২৪ সালে ৮৯টি। এ পর্যন্ত কোনো বছরেই র্যাঙ্কিংয়ে ১২৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, ফলে বাংলাদেশের কখনো ১২৩তম অবস্থানে থাকার দাবি বাস্তবসম্মত নয়।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের এই র্যাঙ্কিং নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটও জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার। ৬ এপ্রিল রাতে গ্লোবাল স্ট্যাস্টিসটিক নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ইউএস নিউজকে সূত্র দেখিয়ে প্রথম এ–সংক্রান্ত পোস্টটি করা হয়। এরপরই বিষয়টি আলোচনায় আসে।