ভাষার মাধ্যমে মানুষ তার বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। সমাজ-সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষাও এক অবস্থায় থাকে না; তা পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যায় চিরতরে। এর সঙ্গে বিলুপ্ত হয় একটি জনগোষ্ঠীর শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি। লিখেছেন দ্রোহী তারা
-------------------------------------------
ভাষার প্রথম উৎস বা উৎপত্তি নিয়ে তেমন কোনো জোরালো প্রমাণ বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত পাননি। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক তথ্য, গুহাচিত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, ভাষার উৎপত্তি সেই ৮০ লাখ বছর আগে। আফ্রিকার কিছু জঙ্গলের এপ জাতীয় প্রাণী বাস করত তাদের মধ্য থেকে। কেননা বিভিন্ন বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, এপ জাতীয় প্রাণীগুলোর মধ্যে শিম্পাঞ্জি ও মানুষের পূর্বজ ছিল। এসব হলো ভাষার আদি অন্ত বিষয়।
পৃথিবীতে এখন ৭ হাজার ১৬৮টি ভাষা রয়েছে; যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৫টি ভাষা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে কিছুই মনে নাও হতে পারে। একটি ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে সম্পূর্ণ একটি জাতিসত্তার সব চিহ্ন মুছে যাওয়া। সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয়, এসব হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ভাষার মধ্যে বাংলাদেশের ১৪টি ভাষাও রয়েছে। সেগুলো হলো- কুন্দ, খারিয়া, কোদা, সৌরা, মুন্দারি, কোল, মাল্টো, খুমি, পাংখুয়া, রেঙ্গমিচা, চাক, খায়াং, লুসি ও লালেং। এই ভাষাভাষী যে কয়েকজন বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ মানুষ বেঁচে আছেন, তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ তালিকা তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একটি ভাষা গবেষণা কেন্দ্র। এটি মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বহুভাষিক শিক্ষা প্রসার এবং বৈশ্বিক ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষায় নিবেদিত। ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করে, যা ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
মূলত এ ইনস্টিটিউট তৈরির মূল উদ্দেশ্য– বিশ্বের সব মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণা, ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন, বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সমন্বয় বৃদ্ধি, বিপন্ন ভাষার ডকুমেন্টেশন ও ডিজিটাল সংরক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভাষাসংক্রান্ত জ্ঞান বিনিময়।
এ ছাড়া মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশের ৪০টিরও বেশি আদিবাসী ভাষা এবং বৈশ্বিক বিপন্ন ভাষার অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন রয়েছে, যা বিপন্ন ভাষার ডিজিটাল আর্কাইভ প্রকল্প নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট শুধু কেবল বাংলাদেশ নয়, বহির্বিশ্বেও ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। ইউনেস্কো, এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল ও এথনোলোগের অংশীদারিত্বে ভাষাবিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
একটি জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হলো ভাষা। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এশিয়া মহাদেশেই সবচেয়ে বেশি মাতৃভাষার সমাহার রয়েছে। বাংলা, হিন্দি, মান্দারিন, জাপানিসহ অসংখ্য ভাষা এ মহাদেশের বাসিন্দাদের মুখরিত করে। আফ্রিকায়ও রয়েছে ভাষার বিশাল বৈচিত্র্য। সোয়াহিলি, হাউসা, জুলু, আমহারিকের মতো ভাষাগুলো আফ্রিকান সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। ইউরোপে ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, রুশের মতো ভাষাগুলো শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়; বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমেরিকা মহাদেশে ইংরেজি ও স্প্যানিশের পাশাপাশি আদিবাসী ভাষাগুলোও টিকে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে আদিবাসী ভাষাগুলো স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে।
বৈচিত্র্যময় এ ভাষাগুলো শুধু শব্দের সমষ্টি নয়, এগুলো মানবসভ্যতার ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞানের ভান্ডার। প্রতিটি ভাষাই একটি সম্প্রদায়ের চিন্তা, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার প্রকাশ। মাতৃভাষার ক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে পরিলক্ষিত, বাংলার ‘ম’ বর্ণের আধিক্য সব জায়গায় পরিলক্ষিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হলেও। যেমন– বাংলায় ‘মা’, ইংরেজিতে ‘মাদার’, স্প্যানিশে ‘মাদ্রে’, ফ্রেঞ্চে ‘মিরে’, জার্মানে ‘মুটার’, রুশে ‘মাট’, চীনে ‘মামা’, জাপানিতে ‘হাহা’, আরবিতে ‘উম’, হিন্দিতে ‘মা’। মিল ও অমিল থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা হলো ভাষাবিদ ডেভিড ক্রিস্টালের মতে, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড থেকে। অর্থাৎ আমরা হারাচ্ছি একেকটি সমৃদ্ধ ইতিহাস।
এর কারণ হিসেবে বলা যায়, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ইংরেজি, স্প্যানিশ, মান্দারিনের মতো ভাষাগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে বর্তমানে অনেক বেশি। ফলে স্থানীয় ভাষাগুলো অবহেলিত হচ্ছে। অনেক দেশে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য আধিপত্যবাদী ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক। ফলে স্থানীয় ভাষাগুলো দুর্বল করে দিচ্ছে। আবার আকাশ সংস্কৃতির পরিবর্তনের ফলে নতুন প্রজন্ম স্থানীয় ভাষার চেয়ে আধুনিক সংস্কৃতি ও ভাষার দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। ভাষাগুলোকে জীবিত, বিপন্ন এবং বিলুপ্ত– এই তিন শ্রেণিতে বিভাজিত করা হয়েছে। বর্তমানে ভাষাবিদরা বিপন্নপ্রায় ভাষাগুলোকে রক্ষার্থে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে চলেছেন।
অন্যদিকে ভাষার অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন, আমেরিকায় নেটিভ আমেরিকান ভাষা সংরক্ষণ, কানাডার কুইবেকে ফরাসি ভাষার স্বাধীনতা আন্দোলন কিংবা লাটভিয়ায় রুশ ভাষার বিরুদ্ধে গণভোট– সবই ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
এ ছাড়া বেলজিয়াম, বলকান অঞ্চল, স্পেন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ভাষা প্রশ্নে আন্দোলন হয়েছে। ভাষা রক্ষার লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষা আন্দোলন এক অনন্য ঘটনা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউলরা প্রাণ দেন। এই আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য সংগ্রাম নয়। এটি বাঙালি জাতীয়তাবোধের ভিত্তি গড়ে তোলে, যার ধারাবাহিকতায় এসেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ।
একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী ভাষার অধিকারের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। পৃথিবীর সব ভাষা এবং মাতৃভাষা রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য ইউনেস্কো ১৯৯৯ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে আসছে।
পৃথিবীতে জীবিত ভাষাগুলো মানবসভ্যতার অমূল্য সম্পদ। এ ভাষাগুলো শুধু ভাব বিনিময়ের মাধ্যমই নয়, একটি জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শিকড়। একটি ভাষার মৃত্যু মানে শুধু শব্দের মৃত্যু নয়, একটি সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের মৃত্যু। সে স্থান থেকে ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষা করা হলো মানবসভ্যতার ইতিহাস রক্ষা করা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যে সুরায় আছে কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনি
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা হুদের ৬ থেকে সুরা ইউসুফের ৫২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। পারা হিসেবে ১২তম পারার এই পর্বে কোরআনের ব্যাপারে কাফেরদের সংশয়, পবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য, দৃঢ়তার সঙ্গে ইসলামে অটল থাকা, সৃষ্টিতত্ত্ব, পূর্ববর্তী নবীদের দাওয়াত, তাঁদের প্রতি নিজ সম্প্রদায়ের বিরূপ আচরণ, কাফেরদের প্রতি আল্লাহর আজাব এবং ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের চমকপ্রদ গল্প, জাতীয় জীবনে বিপর্যয়ের কারণ, বান্দার জন্য আল্লাহর পুরস্কারসহ ইত্যাদি বিষয়ের বয়ান রয়েছে।
সুরা হুদে দুই ধরনের মানুষের কথা
সুরা হুদের ১৫ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুই ধরনের মানুষের পরিচয় তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে অবিশ্বাসীদের জীবনের সব ব্যস্ততা, কাজকর্ম ও চেষ্টা শুধু দুনিয়াকে ঘিরে। তারা সারাক্ষণ শুধু দুনিয়ার ভাবনায় বিভোর থাকে। দুনিয়াকে প্রতিদিনই নতুন করে সাজাতে চায়। তারা আল্লাহ ও পরকাল স্মরণ করে না। অপরদিকে বিশ্বাসীদের দুনিয়ার জন্য প্রয়োজনমতো জীবনধারণের ব্যবস্থায় কাজ করলেও তাদের চূড়ান্ত লক্ষ৵ থাকে আখিরাতের প্রতি। তারা পরকাল সামনে রেখে দুনিয়া সাজায়। আল্লাহকে পেতে জীবন গড়ে। অবিশ্বাসীদের উপমা দেওয়া হয়েছে অন্ধ ও বধিরের সঙ্গে, আর বিশ্বাসীদের উপমা দেওয়া হয়েছে চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির সঙ্গে।
আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪দ্বিতীয় মানবসভ্যতার সূচনাসুরা হুদের ২৫ থেকে ৪৯ নম্বর আয়াতে পৃথিবীর দ্বিতীয় মানবসভ্যতার নবী নুহ (আ.)-এর আগমন, অবিশ্বাসীদের প্রতি তাঁর একত্ববাদের দাওয়াত, তাদের অস্বীকৃতি, আজাবের ভয় দেখানো, আল্লাহর আদেশে নুহ নবী (আ.)–এর নৌকা নির্মাণ, নৌকা নিয়ে অবিশ্বাসীদের মশকরা, নৌকায় বিশ্বাসী মানুষ ও প্রতিটি সৃষ্টির জোড়ায় জোড়ায় আরোহণ, মহাপ্লাবনে পৃথিবী ধ্বংস ও নৌকায় আরোহীরা বেঁচে যাওয়ার বয়ান রয়েছে।
নুহ (আ.) পৃথিবীর দ্বিতীয় নবী ও প্রথম রাসুল। আদম (আ.)-এর পর তিনি নবী-রাসুল হয়ে পৃথিবীতে এলেন। মাঝখানে কেটে গেছে অনেক বছর। এর মধ্যে মানুষ আল্লাহকে ভুলে গেছে। মানুষ বিস্মৃত হয়েছে একত্ববাদের বাণী। তিনি পথভোলা মানুষকে এক আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া কেউ তাঁর কথা শুনল না। তারা হত্যার হুমকি দিল। তিনি শাস্তির ভয় দেখালেন। তারা শাস্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ল। আল্লাহ নুহ নবীকে (আ.) নৌকা বানানোর আদেশ দিলেন। মানব ইতিহাসে তিনি প্রথম নৌকা বানালেন।
একদিন বিশ্বাসীদের নিয়ে তিনি নৌকায় উঠলেন। সঙ্গে নিলেন জোড়াবিশিষ্ট কিছু জীবজন্তু। পরে নেমে এল মহাপ্লাবন। জমিন বিদীর্ণ করে উঠে এল পানি। আসমান থেকে অঝোর ধারায় বর্ষিত হলো পানি। ধ্বংস হলো সবকিছু, বেঁচে গেলেন নুহ (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা। গড়ে উঠল নতুন সমাজ। শুরু হলো দ্বিতীয় মানবসভ্যতার সূচনা।
আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪অদৃশ্যের খবর জানেন শুধু আল্লাহআল্লাহ সুরা হুদের ৪৯ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘এটি গায়েবের খবর, আমি আপনার প্রতি অহি প্রেরণ করছি। এর আগে এটা আপনার এবং আপনার জাতির জানা ছিল না।’ অদৃশ্যের খবর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। অদৃশ্য জগৎ ও ভূপৃষ্ঠের অতি ক্ষুদ্র বিষয়েও তিনি অবগত। তিনি অবগত আছেন অণু-পরমাণু সম্পর্কেও। তিনি ছাড়া পৃথিবীর কোনো নবি-রাসুল, ফেরেশতা, জিন, পীর-মাশায়েখ-আলেম; কেউ অদৃশ্যের খবর জানেন না। কেউ কেউ মনে করেন, নবীরা অদৃশ্যের খবর জানেন; এটি ভুল বিশ্বাস—এমন বিশ্বাসে ইমান ভেঙে যায়। গায়েব তো ওই জ্ঞান, যা কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি জানা থাকে। মাধ্যম ছাড়া কোনো কিছু সরাসরি জানা একমাত্র আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব। সৃষ্টির পক্ষে তা সম্ভব নয়।
যে সুরায় আছে কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনি
পবিত্র কোরআনের ১২তম সুরা ইউসুফ মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১১। এ সুরায় ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনি থাকায় এর নাম রাখা হয়েছে সুরা ইউসুফ। ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনাকে আল্লাহ নিজে ‘আহসানুল কাসাস’ তথা ‘শ্রেষ্ঠ কাহিনি’ আখ্যায়িত করেছেন।
আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪ইউসুফ (আ.)-এর চমকপ্রদ কাহিনিইউসুফ (আ.) ছিলেন ইয়াকুব (আ.)-এর সন্তান। ইয়াকুব (আ.)-এর ছিল ১২ সন্তান। ইউসুফ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন। বাবা তাঁকে বেশ ভালোবাসতেন। ইউসুফ (আ.) শৈশবে একটি স্বপ্ন দেখেন, যা ছিল তাঁর নবী হওয়ার শুভবার্তা; এ কারণে বাবা ইয়াকুব (আ.)-এর মন পড়ে থাকত তাঁর প্রতি। ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি বাবার তুমুল ভালোবাসায় অন্য ভাইয়েরা মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা ইউসুফ (আ.)-এর ক্ষতি করতে চাইতেন।
একদিন তাঁরা ইউসুফ (আ.)-কে নিয়ে জঙ্গলের এক কুয়ায় ফেলে দেন। বাবাকে ইউসুফ (আ.)-এর মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ দেন তাঁরা। পুত্রশোকে কাঁদতে কাঁদতে ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
সেই কুয়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি কাফেলা। কাফেলার লোকেরা পানি ওঠানোর জন্য কুয়ায় বালতি ফেলতেই বালতিতে উঠে আসেন ইউসুফ (আ.)। তারা তাঁকে মিসরে বিক্রি করে দেয়। মিসরের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কিনে নেন। সেখানেই সে বড় থাকে। একদিন যৌবনে পা রাখেন ইউসুফ (আ.)। সে সময় আজিজে মিসরের স্ত্রী জুলেখা ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তিনি ইউসুফ (আ.)-কে মন্দ সম্পর্কে লিপ্ত হতে আহ্বান করলে ইউসুফ তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বদনাম থেকে বাঁচার জন্য জুলেখা তাঁকে জেলে পুরে দেন। সেখানে ইউসুফ (আ.) আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দেন। অনেকে দাওয়াত গ্রহণ করে। পরে বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলার কারণে তিনি বাদশাহর সুদৃষ্টি পেতে সমর্থ হন। কারাগার থেকে তাঁর মুক্তি মেলে।
আগামীকাল তারাবিতে জোলেখার অপবাদে ইউসুফ (আ.)-এর নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া, মিসরের মন্ত্রী হওয়া, বাবা ইয়াকুবের (আ.) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া, বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ ইত্যাদি কাহিনি পড়া হবে।
রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম
আরও পড়ুননারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং অলৌকিক তিন ঘটনা১২ মার্চ ২০২৪