‘জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার, ২০১২’ প্রাপ্ত সাহিত্যিক আনিফ রুবেদ। ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে তার অণুগল্প গ্রন্থ ‘‘যে জীবের হাত নেই পা নেই পুরোটাই পেট’। আনিফ রুবেদ কীভাবে একটি গল্প বুনন করেন, তার গল্প ভাবনা কি—এসব বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি:    গল্পে আপনি দারুণ নিরীক্ষা করেন। গল্পে অর্জন করেছেন জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার, ২০১২ আপনার গল্পভাবনা জানতে চাই।

আনিফ রুবেদ: প্রতিটা মানুষ আলাদা। তাদের মাংসপেশীর গঠন, তাদের দেহের কাঠ আর কাঠামো, মগজ আর হৃৎমাংসের সংস্থান, চিন্তা ও চিন্তার ক্ষমতা, চলনফেরন, সারাদিনের শ্বাস-প্রশ্বাসের সংখ্যা আর স্বরযন্ত্র থেকে বের হওয়া স্বর সবই আলাদা। ফলে প্রকাশভঙ্গি আলাদা হবেই। যখন এই পার্থক্যটা একটু বেশি লক্ষ্য করা যায় তখন সেটাকে আমাদের মনে হয়, এটা বুঝি নিরীক্ষা। আবার অসহায়ত্ব থেকেও নতুনের মতো কিছু জন্মাতে পারে; এ অসহায়ত্ব হলো, কোনো একটা ভাব প্রকাশের জন্য আকুলিবিকুলি আছে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো ছক জানা নেই; এসময় সেই ভাবের প্রচণ্ড চাপের জন্য নতুনের মতো একটা পথ বেরিয়ে আসে; এটাকেও তখন আমাদের নীরিক্ষা বলে মনে হতে পারে। অবশ্য সচেতনভাবেও আলাদা কিছু করা যায় এবং আমরা নিরীক্ষা বলতে পারি। আমার ক্ষেত্রে নিরীক্ষা ব্যাপারটাকে এসবের সমন্বিত একটা রূপ ধরে নেওয়া যায়।
পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে গল্প ঘটে চলেছে। এই যে আপনি আমার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেন এবং আমি দিতে চাইলাম এবং সেই সাক্ষাৎকারের উত্তর করছি এখন। এটা একটা গল্প। এই একটা গল্পের ভেতরে দুটো ব্যাপার আছে। একটা বাইরের ব্যাপার একটা ভেতরের ব্যাপার। বাইরের ব্যাপারটা বর্ণিত হয়েই গেছে। কিন্তু এখানেই থামতে চাই না আমি। আমি এই গল্পের একেবারে ভেতরটাও বলতে চাই। সাক্ষাৎকার চাওয়ার সময় আপনার মনের ভেতর কি কি তৈরি হয়েছিল এবং আমার মনের ভেতর কি কি তৈরি হয়েছিল তা বলতে চাই। আমি বলতে চাই পৃথিবীর বনগুলো, পৃথিবীর জলগুলো, পৃথিবীর পাখিগুলোর কে কি করছিল। আমি বলতে চাই, পৃথিবী যখন সৃষ্টি হচ্ছিল তখনও তার ভেতর এই গল্পটা ছিল।
আমার শব্দ [ওয়ার্ড] এবং শব্দের [সাউন্ড] প্রতি বেশ দুর্বলতা আছে। এগুলোর ভেতরেই দর্শন আছে এবং এদের ভেতর থেকে যে দর্শন জাগে তাও রাখি এগুলোর ভেতরেই। ফলে শব্দ অনেক সময় আমার গল্পের চরিত্রগুলো চরিত্র ঠিক করে দেয়।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় ভ্রমণগদ্য ‘পূর্ব আফ্রিকার তিনকাহন’

বইমেলায় ‘আবৃত্তির কলাকৌশল ও নির্বাচিত কবিতা’

রাইজিংবিডি:    নতুন অণুগল্পের বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
আনিফ রুবেদ: এবার যে বই বেরুচ্ছে সেটার নাম ‘যে জীবের হাত নেই পা নেই পুরোটাই পেট’। বইটাতে যে লেখা আছে তার প্যাটার্নটাকে আসলে কী নামে ডাকব তা নিজেই ঠিক করতে পারিনি। এর নির্মেদ দেহসংস্থান অনেকটা কবিতার মতো; এর মাংস এবং রক্তের রঙ অনেকটা গল্প বা অণুগল্পের মতো; আবার বাউল কবিরা যেমন নিজের নাম ব্যবহার করে ভনিতা দেন তেমন ভনিতাও রয়েছে এই লেখাগুলোতে। বরং পাঠক এবং সমালোচকগণেরই ভার পড়ল এই প্যাটার্নটাকে একটা বিশেষ্য বা বিশেষণ দান করার জন্য।

রাইজিংবিডি: লেখা এবং পড়ার সমন্বয় করেন কীভাবে?
আনিফ রুবেদ: সারাদিনের জন্য আমার একটা টার্গেট থাকে পড়া, শোনা এবং লেখার জন্য। যদিও সবসময় এটা পূর্ণ হয় না। আমি চাই প্রতিদিন ৫০ পৃষ্ঠা পড়তে, বিভিন্ন কাজের মধ্যেই তিন চার ঘণ্টা গান শুনতে, কিছু সময় নিজে কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে এবং কয়েকটি বাক্য হলেও লিখতে।
এক্ষেত্রে সবসময় একটা বই আমার সাথে রাখি যাতে যেকোনো জায়গায় পড়তে পারি; বিশেষ করে অপেক্ষার সময়গুলো। গানটা শোনা হয় নিজের লেখা বা লেখা সংশোধন করার সময়। নিজে যখন বাজাতে চেষ্টা করি সেটার জন্য আলাদা সময় ঠিক করতে হয়। লিখতে ইচ্ছে করলে অন্যগুলোকে সরিয়ে রাখি; লিখি। এই তো; এভাবেই সমন্বয়; এভাবেই যাপন।

রাইজিংবিডি: প্রকাশনীরগুলোর মধ্যে কোনটির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সুখকর?
আনিফ রুবেদ: যখন প্রথম বই বের হয় তখন বেশ কান্নাকাটি করার মতো অবস্থা। আসছে আসছে বলতে বলতে একেবারে বইমেলা শেষ হবার সপ্তাহ খানেক আগে বইয়ের কাজ শেষ হয়। কিন্তু দেখা গেল বইয়ের নাম ভুল ছাপা হয়েছে। তারপর আবার ঠিক করার পর বই এলো মেলা শেষ হবার দুদিন আগে। এবার দেখা গেল আমার নামের বানান ভুল ছাপা হয়েছে। আবার উঠিয়ে নেওয়া হলো। বইটি আর মেলাতে নামতে পারেনি। পরবর্তীতে সংশোধিত অবশ্য হয়েছিল। এটা যেহেতু বড়ো ধাক্কার মতো ছিল আমার কাছে ফলে পরবর্তীতে যে ধাক্কাগুলো পেয়েছি সেগুলোকে আর তেমনকিছুই মনে হয়নি।
পরে ঐতিহ্য এবং নৈঋতা ক্যাফের সাথে কাজ করেছি। তারা ভালো করেছেন আমার সাথে। এবার প্রতিকথা থেকে বই এসেছে। তাদের সাথে কাজ করেও আনন্দ পেলাম।

রাইজিংবিডি: লেখকের বই প্রচার কৌশল কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আনিফ রুবেদ: এখন প্রচার মাধ্যম বলতেই ফেসবুক। লেখকগণ ফেসবুকে বইয়ের প্রচ্ছদ পোস্ট করে প্রচার করেন। কিন্তু প্রচারের ভাষাটা বেশিরভাগ লেখকই রপ্ত করতে পারেননি। কেউ কেউ পেরেছেন এবং তাতে ভালো ফলও হয়। আমিও খুব ভালো প্রচার দিতে পারি না।
এগুলো সকল লেখকের খুব ভালো পারার কথাও নয়। সুতরাং লেখকের বই প্রচারের কৌশল কেমন হতে হবে তা বলতে পারব না। মনে হয়, এগুলো প্রকাশকের পক্ষ থেকে হলেই সবচেয়ে ভালো হয়। দেশে পাঠকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যও প্রকাশকদের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া উচিত বলে মনে করি।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ঠ ক কর বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র‍্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।

র‍্যালি–পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’

সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়—পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল–মতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়—একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’

র‍্যালি–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা–কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।

র‍্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র‍্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিএনপির নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ