রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই ভ্যালিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। গতকাল শুক্রবার সাজেক ভ্রমণে গিয়ে হোটেলের কক্ষ না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে দুই শতাধিক পর্যটককে। অন্তত ৪০০ পর্যটককে রাত কাটাতে হয়েছে সাজেকের বিভিন্ন হোটেলের বারান্দা, স্থানীয় ক্লাবঘর ও বাড়িঘরে। সাজেকের মতো গতকাল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল রাঙামাটি শহর, কাপ্তাইসহ জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেও।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা ও বেলা সাড়ে তিনটা—এই দুই দফায় চার শতাধিক জিপ ও পিকআপ ভ্যান নিয়ে পর্যটকেরা সাজেক ভ্রমণে যান। এর বাইরে পাঁচ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পর্যটকেরা সাজেক ভ্রমণে গিয়েছেন। এসব যানবাহনে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ছয় হাজারের মতো। সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে ১১৫টি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজে পর্যটকের ধারণক্ষমতা চার থেকে সাড়ে চার হাজার। ফলে হোটেলের কক্ষ না পেয়ে অনেক পর্যটককে ফিরতে হয়েছে। কিছু পর্যটক স্থানীয় হোটেল-রিসোর্টের বারান্দা, ক্লাবঘর, বাসিন্দাদের বাড়িঘরসহ যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, সেখানেই রাত কাটিয়েছেন।

সাজেকে রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির হয়ে পর্যটকদের হিসাব রাখেন মতিজয় ত্রিপুরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটকদের প্রায় ৯০ শতাংশই আগেই হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। অন্যরা সাজেকে আসার পর কক্ষ ভাড়া নিতে শুরু করেন। তবে গতকাল সন্ধ্যায় কক্ষ না পেয়ে পর্যটকদের হইচই শুরু হয়। একপর্যায়ে আমরা তাঁদের বলি নাম জমা দিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৫০ জনের নাম জমা পড়ে। এরপর আমরা আর নাম তালিকাভুক্ত করিনি। ওই ১৫০ জনকে বিভিন্ন ক্লাব ও স্থানীয়দের বাড়িঘরে তুলে দিয়েছি।’ মতিজয় আরও বলেন, রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাড়ার অনেক বাসিন্দা নিজ উদ্যোগে পর্যটকদের নিজেদের বাড়িঘরে নিয়ে গেছেন। সব মিলিয়ে চার শতাধিক পর্যটক হোটেলের কক্ষ না পেয়ে গতকাল বাইরে রাত কাটিয়েছেন।

সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুর্পণ দেব বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সাজেক ভ্রমণে এসেছেন। আমরা কয়েক শ পর্যটককে কক্ষ ভাড়া দিতে পারিনি। অনেক পর্যটক বারান্দায়, মানুষের বাড়িঘরে, যে যেভাবে পারেন রাত কাটিয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে দুই শতাধিক পর্যটককে।’

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাঙামাটি শহর, পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রেও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। পর্যটকদের পদচারণে মুখর ছিল রাঙামাটি শহর। পর্যটকবাহী যানবাহন বাড়ার কারণে রাঙামাটি শহরের বনরূপা-রিজার্ভ বাজার, রিজার্ভ বাজার-তবলছড়ি ও আসামবস্তি-রাঙাপানি সড়কে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। শহর ও এর আশপাশের সব হোটেল-রিসোর্টের কক্ষ খালি ছিল না।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যান্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনের তুলনায় গতকাল পর্যটকের আনাগোনা অনেক বেশি ছিল। আমাদের কমপ্লেক্স ও কটেজগুলোতে কোনো কক্ষ খালি নেই। গতকাল ছয় হাজারের বেশি মানুষ ঝুলন্ত সেতু দেখতে গিয়েছেন। অন্যান্য ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক যেতেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স জ ক ভ রমণ র ব ড় ঘর শত ধ ক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বম নারীদের কোমর তাঁতে চলে সংসার

বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়ক ধরে আট কিলোমিটার গেলে শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বম সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের কোমর তাঁতের চাঁদর, কম্বল, মাফলার, ওড়না ছাড়াও হস্ত ও কুটিরশিল্পের পণ্য এবং বাগানের ফলমূল বিক্রি করেন। সেই রোজগারে তাদের সংসার চলে।

শৈলপ্রপাত ঝর্ণার পাশে লাইমি পাড়া ও ফারুক পাড়া। এ দুই পাড়া মূলত বম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে দুই শতাধিক বম পরিবারের বসবাস রয়েছে। এসব পরিবারের নারী সদস্যরা বুনন করেন কোমর তাঁত। তৈরি করেন ছোট-বড় সাইজের বিভিন্ন কম্বল, মাফলার ও চাদরসহ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র।

শৈলপ্রপাতে স্থায়ীভাবে কোনো বাজার গড়ে না উঠলেও বম নারীরা নিজ উদ্যোগে একটি অস্থায়ী বাজার গড়ে তুলেছেন। সেখানে খ্রিস্টীয় চার্চ সমিতির পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে কয়েকটি ছোট-বাজার শেডও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রোববার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে সকাল-সন্ধ্যা বম সম্প্রদায়ের নারীরা কোমর তাঁতের বুনন করা কাপড় বিক্রি করে থাকেন।

জেলা কুটির শিল্প সংস্থার তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় প্রায় ১০ হাজার পাহাড়ি নারী কোমর তাঁতে কাপড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পাহাড়ি নারীরা কোমর তাঁতে তৈরি করেন থামি, গামছা, কম্বল, রুমাল, গায়ের শাল, টুপি, ওড়না ও বিছানার চাদরসহ রকমারি পোশাক। এইসব পোশাক বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। 

কাপড় ও কারুপণ্যের দোকানি জুলি বম জানান, আগের মতো বিক্রি না হলেও মোটামুটি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার বিক্রি হয়। ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিক্রি হয়ে থাকে। রোজার দিন হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। ঈদের ছুটিতে বিক্রি বাড়বে বলে তাঁরা সবাই আশাবাদী।

ফারুক পাড়ার কোমর তাঁত শিল্পী লিমা বম জানান, বান্দরবানে পর্যটকদের আনাগোনার কারণে কয়েক বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত আছেন। ভালো মানের একটি থামি (পরনের কাপড়) বিক্রি করেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়।

আরেক তরুণী লাল কিম বম জানান, বাজার থেকে কাপড় কিনে নিজেদের তৈরি চরকার মাধ্যমে সুতা তৈরি করেন। সে সুতায় রঙ লাগিয়ে রোদে শুকানোর পর কোমর তাঁতের মাধ্যমে কাপড় তৈরি করা হয়। পরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামে কিনে করে নিয়ে যায়। সব কিছু মিলিয়ে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।

জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুপন চাকমা জানান, জেলায় বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কম-বেশি সবাই কোমর তাঁতে কাপড় বুনে থাকে। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মূলত বম নারীরা পর্যটকদের ঘিরে কোমর তাঁত বুনে বাণিজ্যিকভাবে আয় করে থাকে। বিভিন্ন সময় পাহাড়ি তরুণীদের কোমর তাঁত বুননের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বান্দরবান উপ-ব্যবস্থাপক মো. শামীম আলম জানান, কোমর তাঁত পাহাড়ি জনপদের প্রাচীন পেশা। কোমর তাঁতের ওপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল। দক্ষ ও যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে কোমর তাঁত উদ্যোক্তারা চাইলে করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়।
 

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বম নারীদের কোমর তাঁতে চলে সংসার