সরকারি চাকরিপ্রাপ্তদের ঠিকানা ও প্রাক-জীবনবৃত্তান্ত যাচাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই মন্ত্রণালয়েই জেলা কোটা পেতে চাকরির আবেদনে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন এক কর্মী। চাকরিও পান। এর মধ্যে ভুয়া ঠিকানার তথ্য মিললেও নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা। ১০ বছর চাকরির পর সেই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার অপারেটর ফারজানা আক্তার নামে ওই কর্মীর স্থায়ী ঠিকানা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা গ্রামে। এ পদে নিয়োগে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি হয়। সেখানে পিরোজপুর জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না উল্লেখ ছিল। তবে চাকরি পেতে ফারজানা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের একটি ঠিকানা ব্যবহার করেন। ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন তিনি।

চাকরিতে যোগদানের পর প্রাক-জীবনবৃত্তান্ত যাচাইয়ে ফারজানার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করাও হয়। তবে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। উল্টো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রশ্রয় পান ফারজানা। এ কারণে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। অবশ্য ভুয়া ঠিকানা দেওয়ায় তাঁর চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি। 

আরও জানা যায়, সম্প্রতি ফারজানা আক্তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন চাকরি করলেও তাঁকে স্থায়ী করা হচ্ছে না। পরে চাকরি স্থায়ী করতে উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।   

এর পর সুরক্ষা সেবা বিভাগ ফারজানার ব্যক্তিগত নথি বের করে দেখতে পায়, তিনি ঠিকানা জালিয়াতি করে চাকরি করছেন। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নজরে আনা হলে গত ২৮ জানুয়ারি চাকরিচ্যুত হন ফারজানা। তাঁকে যাবতীয় বেতন-ভাতা ফেরত দিতে নির্দেশও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। 

ফারজানার অব্যাহতিপত্রে বলা হয়, চাকরির আবেদনে ফারজানা স্থায়ী ঠিকানা গোপন করেছেন বলে পুলিশ ভেরিফিকেশনে উল্লেখ রয়েছে। জেলা কোটা পেতে তিনি স্থায়ী ঠিকানা পিরোজপুরের ধানীসাফা গ্রামের পরিবর্তে ঢাকা জেলা দেখান। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পিরোজপুর জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না উল্লেখ ছিল। এ জন্য তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়নি। 

এতে আরও বলা হয়, জাতীয় গোয়েন্দা নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) মাধ্যমেও তাঁর স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করা হয়। দুই সংস্থার প্রতিবেদনে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের সত্যতা মেলায় ফারজানাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এ পর্যন্ত গৃহীত বেতন-ভাতাদি ফেরতের নির্দেশও দেওয়া হলো। 

এ বিষয়ে জানতে ফারজানা আক্তারকে কল করলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি মোবাইল ফোনে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না। আপনি সামনাসামনি এসে কথা বলুন। আমার অফিসে আসুন। এই কথা বলে তিনি কল কেটে দেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে গিয়ে জানা যায়, চাকরিচ্যুতির কারণে ফারজানা আর অফিসে আসছেন না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ কর সরক র চ কর চ কর চ য ত ব যবহ র র চ কর ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।

রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।

সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ