নির্বাচনের আগে সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুযারি) অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সংস্থা বাসসকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নাহিদ বলেন, “স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখা এবং চাপ মোকাবিলায় নিরন্তর প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সর্বদা বিকশিত জাতীয় দৃশ্যপটের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।”

“আমরা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে এমন একটি ভবিষ্যত গঠনে অবিচল রয়েছি,” বলেন তিনি।

নাহিদ বলেন, “গত ছয় মাসে সরকারের পথচলা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা, শতাধিক আন্দোলন পরিচালনা, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হওয়াসহ বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে।”

তার বিশ্বাস, অব্যাহত সংলাপ, সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে গত বছরের ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ছয় মাস বয়সী সরকার জাতি যে পরিবর্তন চেয়েছিল তা অর্জন করতে পারবে।

তিনি বলেন, “সামনের রাস্তাটি এত মসৃণ হবে না, তবে সঠিক সমর্থনসহ অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জন্য আরো স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনের আশা করে।”

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের ওপর দেশের মানুষ বিপুল প্রত্যাশা রাখায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সরকার পরিচালনায় জনসাধারণের উদ্বেগের প্রধান ক্ষেত্র, জানান তিনি।

সরকার ব্যাপক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন বিশৃঙ্খলা ছিল। আমলাতন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল এবং আমাদেরকে সেখান থেকে তাদের পুনর্গঠন করতে হয়েছিল। এটা সহজ কাজ ছিল না। আগের প্রশাসনের চর্চা, বিশেষ করে ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করেছিল, যা রাতারাতি দূর করা যাবে না।”

গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভেদ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন “যদিও অভ্যুত্থান সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল, তবে অনেকেই জাতীয় কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থের পেছনে ছুটতে শুরু করেছিল। এই বিভক্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”

“এক সময় যে ঐক্য ছিল, তা ক্ষীণ হয়ে গেছে। এই সংহতির অভাব সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” 

নাহিদ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে, ঐক্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা মতবিরোধ নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং অতীতের বিভাজনমূলক অভ্যাসগুলোতে ফিরে আসা এড়াচ্ছি। অর্থবহ সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের সাফল্যের মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষমতার প্রকৃত পরীক্ষা আসবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সংস্কার ইস্যুতে আমরা কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আগামী মাসগুলো দেখাবে আমরা কতটা অগ্রগতি করতে পারি। যেকোনো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

রাজনৈতিক দল এবং জনগণ উভয়ই পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো দূর করতে একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন কিছু উপাদান আছে যারা এখনো চাঁদাবাজিতে জড়িত এবং কিছু ব্যক্তি, যারা গণজাগরণে অংশ নিয়েছিল, তারা এখন এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। সহযোগিতা ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা কঠিন হবে।”

সংস্কার বনাম নির্বাচনের ইস্যুটিও একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “সরকার সংস্কার এবং নির্বাচনকে পারস্পরিক একচেটিয়া হিসেবে দেখে না, বরং পরিপূরক উদ্দেশ্য হিসাবে দেখে।”

তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশন নির্বাচসি ও শাসন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে.

..অন্যথায় অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে।”

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে নাহিদ বলেন, “এখন পর্যন্ত সরকারের সমালোচনা করার জন্য গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। সরকার যখন মুক্ত গণমাধ্যমের ধারণাকে সমর্থন করে, তখন এটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে রিপোর্ট করার সময় সতর্ক হতে বলেছে।”

তিনি বলেন, “সরকার গঠনমূলক সমালোচনাকে উৎসাহিত করে এবং ইতিমধ্যে মিডিয়া প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করেছে। আমরা যৌক্তিক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই এবং আমরা আমাদের নীতিতে সামঞ্জস্য বজায় রাখব।”

ঢাকা/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন র ন হ দ বল ন র জন ত ক সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিক্ষোভের আড়ালে লুটপাট–ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশ জাসদের নিন্দা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে প্রতিবাদ হচ্ছে, তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)। একই সঙ্গে গতকাল দেশে বিক্ষোভের আড়ালে হওয়া লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে দলটি। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন তথা ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধন অভিযান সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সক্রিয় সমর্থন, মদদ ও আশকারা পেয়ে ইতিহাসের এ জঘন্য গণহত্যা পরিচালনা করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে ইসরায়েল। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে ক্ষোভ, ঘৃণা ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমরা সে বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’

লুটপাট–ভাঙচুরেরর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বাংলাদেশ জাসদ নেতারা বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে বাংলাদেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ–বিক্ষোভের আড়ালে একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী গতকাল বিকেলে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অরাজকতার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সংগত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে এ বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা কালিমালিপ্ত করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা সরকারকে এসব দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা ও এ ধরনের নৈরাজ্যের পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রতিবাদী ছাত্র–জনতাকে এসব সুযোগসন্ধানীদের ফাঁদে পা না দিয়ে তাদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণঅভ্যুত্থান কখনোই আইন মেনে চলে না, বরং আইন ভাঙার মাধ্যমেই শুরু হয়: ফরহাদ মজহার
  • ‘সংবিধান’ নামে শেখ হাসিনার ভূত এখনো রয়ে গেছে: ফরহাদ মজহার 
  • প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা বাড়াতে চায় ঢাকা-মস্কো
  • পিছিয়ে গেল ‘স্বাধীনতা কনসার্ট’
  • ইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলাফল কী
  • ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক হতে হবে সম্মান ও সমতার
  • ফিলিস্তিনের জন্য আমরা আরও যা করতে পারি
  • বিক্ষোভের আড়ালে লুটপাট–ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশ জাসদের নিন্দা
  • সংস্কৃতির শাক দিয়ে উগ্রবাদের মাছ ঢাকা যায় না
  • সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির পথরেখা